Posts

উপন্যাস

ঐশ্বর্য পর্ব ১০

January 26, 2025

Md Kawsar

Original Author নূর-এ-কাউছার

Translated by পর্ব ১০

145
View

ঐশ্বর্য
পর্ব ১০
.
নূর -এ- কাউসার
.
গুরি গুরি বৃষ্টি শুরু হলো সবার নজর ঘাটের দিকে। ঐশ্বর্য নির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছে, সান্তি তার মেয়ে কে দেখতে পেয়ে একটা ক্লান্তিমাখা হাসি দিয়ে চখের জল মুছে নিলো। ঐশ্বর্যর কিছুতেই তার মায়ের এই দৃশ্য সহ্য হচ্ছে না। হুইলচেয়ারে বসেই সে একবার তার বাবার দিকে তাকাচ্ছে আরেক বার তার মায়ের দিকে তাকাচ্ছে। তার বাবা মাথা নিচু করে ফেললেন তার বাবার নিরবতা দেখে আর বুঝতে বাকি রইলো না সবাই সবটা আগে থেকেই জানে তাই সে লঞ্চের ডান দিকে চলে আসে হুইলচেয়ারের চাকা একাই হাত দিয়ে ঘুরিয়ে উপর থেকেই তার মাকে দেখে কান্নায় ভেঙে পরে। শান্তি নিজের মনকে শক্ত করলো নিচ থেকেই ইসারা দিলো চুপ করতে এবং হিজাব ঠিক করতে। নওয়াজ এসে তার হুইলচেয়ারে টেনে নিচে নিয়ে এলো। ঐশ্বর্য কিছুই বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে কেনো তার মাকে পুলিশ ধরবে! নিচে আসতেই ঐশ্বর্য আর বসে রইলো না দূর্বল শরীর নিয়েই হুইলচেয়ার থেকে উঠে দৌরে তার মায়ের কোলে ঢলে পরে। শান্তি ঐশ্বর্য কে এক ঝটকায় জরিয়ে ধরে। ঐশ্বর্য কান্না জড়িত কন্ঠে বলল আম্মা আমার খুব ভয় করছে কি হচ্ছে এই সব আমার কিছুই ভালো লাগছে না চলো আমরা বাসায় জাবো চলো। শান্তি নিজের মনকে আরো কঠোর করে বলল কি হচ্ছে এই সব তুমি কিন্তু আমার শিক্ষার মর্জাদা রাখছো না কিজেকে সামলাতে হবে। ঐশ্বর্য কিছুতেই থামছে না কোনো ভাবেই কেউ তাকে কিছু বলেই বুঝতে পারলো না। ঐশ্বর্য আকাশ কে বলল শোনেন না আমার মায়ের কি দোষ ছেরে দেন না আমি আমার মাকে ছাড়া থাকতে পারবো না। দুইজন মেয়ে কনস্টেবল ঐশ্বর্য কে বাধা দিতে আসে, আকাশ তাদের কে হাতের ইশারাতে মানা করে দেয়। তার পর বলল দেখেন এখন তো সম্ভব না সব প্রমাণ আপনার মায়ের বিরুদ্ধে। তবুও কে শোনে কার কথা ঐশ্বর্য কিছুতেই মানবে না, আকাশ বলল আমি আপনার মাকে সর্বচ্চ চেষ্টা করবো যত তারা তারি সম্ভব যেনো ছারানো যায়। রবি আর রেহানা এসে পিছন থেকে ঐশ্বর্য কে টানতে থাকে যার কারনে ঐশ্বর্যের কান্নার বেগ আরো বেরে যায়। তখনি নওয়াজ বলে উঠলো স্যার উনাকে ছেরে দিন আসল আসামি আমি ঐদিন রাতে আমার হাতে খুন হয়েছে শান্তি কাকি আমাকে বাচানোর জন্য নিজের মাথায় দোষ নিয়েছে সবাই নওয়াজের দিকে তাকায়। শান্তি কিছুই বলল না সে চুপ করে সব দেখছে যেনো পুরোটাই তার সাজানো। আকাশ বলল এটা ছেলে খেলা নই ভেবে চিন্তে বলবেন আপনার ফাসিও হতে পারে। নওয়াজ বলল, 
(তবে তাই আমার কোরবানিতে যোদি দুটো মোন খুশি হয় তাহলে আমি হাসতে হাসতে নিজেকে কউরবান করে দিবো)
ঐশ্বর্য এখনো তার মাকে জরিয়ে ধরে কান্না করছে যেনো সকল চাপা কষ্টের বাধ ভেঙে গেছে।
সবাই নওয়াজ এর কথা শুনে অবাক হলো, রবি বলল তুমি কি বলছো একবার ভেবে দেখো। শান্তি বলল নওয়াজ আমি জানি না তুমার মনে কি চলছে কিন্তু তুমাকে যতবার দেখেছি ততবার অবাক হয়েছি। তুমি এতো বড় কলঙ্ক নিজের মাথায় নিও না তুমি খুব ভালো সৎ তুমার মাথায় অনেক বুদ্ধি এভাবে নিজের জীবন নষ্ট কোরো না তুমার পুরোটা ভবিষ্যৎ পরে আছে। নওয়াজ হেসে বলল, মনে শান্তি থাকলে কলঙ্কও বোঝা মনে হয় না আর আপনারা আমার কাছের মানুষ আমার রিজিকের উছিল্লা আপনাদের জন্য এতোটুকু করলে আল্লাহ খুশি হবে।
শান্তি বলল আজ নিজেকে খুব ছোটো মনে হচ্ছে তুমার মতো মহৎ মনের মানুষ খুব বিরল। রবি ও বলল আমি তুমাকে নিজের সর্বচ্চ দিয়ে হলেও ছাড়িয়ে আনবো এটা রহমান বাড়ির ছেলের ওয়াদা এটা মুক্তযোদ্ধার ওয়াদা আশা হতো হবে না। নওয়াজ বলল আমি বের হলে আপনাদের সালাম নিতে অবশ্যই আসবো। আকাশ শান্তির হাতের হেন্ডকাপ খুলে দিয়ে নওয়াজের হাতে পরিয়ে দেয় আকাশ বলল তাহলে আমরা আসি। তারা নওয়াজ কে নিয়ে চলে গেলো। এদিকে রবি তার পরিবার নিয়ে বাড়িতে চলে আসে ঐশ্বর্য মাঝ পথে মাথা ঘুরিয়ে পরে যায় তাই তারা একটা ভ্যান ভারা করে চলে আসে। বিকেল হচ্ছে ঐশ্বর্যর হোস ফিরে আসে তার শরীরে শক্তি খুব কম এই ছদিন শুধু ছেলাইন চলেছে তার শরীরে। বাড়িটাতে থমথমে পরিবেশ বইছে ঐশ্বর্যের ঘরের ভিতর একটি হ্যরিকেন জালানো ইউসুফ আর রেহানাও ঘুমাচ্ছে রবি আর শান্তি কে খুজতে বেরোলো ঐশ্বর্য। এক ফোঁটা শক্তি নেই শরীরে তবুও দেয়ালে ভর করে এগোচ্ছে ঘরের বাইরে পা রাখতে গিয়ে হোচট খাই কিন্তু পরে জাওয়ার আগেই শান্তি তাকে ধরে ফেলে। শান্তি বলে এখন উঠলি ঐশি? ঐশ্বর্য আবার কান্না শুরু করে দেই এইবার শান্তি ভোরকে যায়, এসব কি ঐশি কথায় কথায় কান্না করছিস তোকে ভয় পেতে বারন করেছি কতোবার। ঐশ্বর্যর বলল আম্মা,,, এমন মায়া ভরা ডাক শুনেই শান্তি মোমের মতো গলে যায়,,, তুমি আর কোনো দিন আমার থেকে দূরে থাকবা না তুমাকে না দেখলে আমার দিন কাটেই না।
শান্তি : কই গেলাম আমি আছিই তো। 
শান্তি ভয় পেলেও তার মেয়ের এমন আজব কথা শুনে খুব শান্তি পেতো মনে। শান্তি ঐশ্বর্যর মনের খবর বুঝতে পারে তাই ওকে বলে আমি তোর জন্য রান্না করছি খাবি আই। 
ঐশ্বর্য : এখন কিছুই খাবো না। 
শান্তি : আমি নিজ হাতে খাইয়ে দিবো।
ঐশ্বর্য : কিন্তু আমার তো খিদে নেই। 
শান্তি : না থাকলেও খেতে হবে তুই নিজের দিকে একটু তাকিয়ে দেখ একফোঁটা শক্তি নেই শরীরে। 
ঐশ্বর্য আর কথা বারালো না খেতে চলে গেলো শান্তির হাত ধরে শান্তি খুব আদোর মেখে খাইয়ে দিতে লাগলো ঐশ্বর্য কে। শান্তি বলল তারা তারি খেয়ে নে পরে ঔষধ খেতে হবে। খাওয়ার পর ঐশ্বর্য ঔষধ খেয়ে নিলো শান্তি খেয়াল করলো ঐশ্বর্য একটু পর পর কিছু একটা ভাবছে আর গভীর ভাবে চিন্তায় মগ্ন হয়ে আছে শান্তি বুঝতে পারলো ঐ রাতের ঘটনা ঐশ্বর্যর মনে দাগ কেটে রেখে গেছে। শান্তি কে ঐশ্বর্য জিজ্ঞেস করে বসলো আম্মা পুলিশ তুমাকে কেনো ধরেছিলো শান্তি আমতা আমতা করে বলল বা. বাদ দে এইসব। ঐশ্বর্য বলল আম্মা বলো না আমার মন কিছুতেই শান্ত হচ্ছে না। শান্তি ঠান্ডা কন্ঠে বলল এখন তোর ঐটা শুনতে হবে না আই তোকে কিছু দেখাবো। শান্তি ঐশ্বর্যর কোনো কথা৷ শুনে না টেনে ঘরে নিয়ে আসে আলমারি টা খুলে একটা সিন্দুক বের করে। ঐশ্বর্য অবাক তার মা এই সিন্দুক কোনো দিন দেখতেও দেয় নি আজ নিজেই খুলে দেখাচ্ছে। সিন্দুকের উপর ধুলো জমে গেছে শান্তি তার কোমোর থেকে চাবি টা দিয়ে সিন্দুক টা খুল্ল। ভেতরে কিছু পুরোনো খামের চিঠি আর একটা থোলে এগুলোর নিচে পেপারে মুরানো তিন টা শারি শান্তি বলল এগুলো উর্মি বাড়ি থেকে চলে জাউয়ার আগে রেখে গেছে আর একটা চিঠি আমার জন্য ছিলো সেটা ঐশ্বর্য পড়তে শুরু করলো -
.
মা তুমার মতো দ্বিতীয় কেউ হয় না ছোটো থেকে তুমার শিক্ষা পেয়ে বড় হয়েছি তুমার কথার অবাধ্য কোনো দিন হইনি কিন্তু আমি এই নরকে থেকে তুমার উপর অত্যাচার আর সহ্য করতে পারবো না আমি রোফিক কে ভালোবাসি সেও আমাকে অনেক ভালোবাসে। আমরা দূরে কোথাও সংসার বাধবো সিন্দুকে একটা খামে আমাদের ঠিকানা দেওয়া আছে বাবাকে বলে দিউ যেদিন তুমার উপর বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে পারবে সেদিন আমাকে চিঠি পাঠাতে হয়তো আমি ফিরে আসবো! আর এই সিন্দুকে কিছু জিনিস আর কিছু চিঠি আছে যা একান্তই ঐশ্বর্যের জন্য তুমার যেদিন মনে হবে ঐশ্বর্য কষ্টে আছে ওকে চিঠি গুলো দিও আর ঐশ্বর্য কে যত্নে বড় করবে আমি গর্ব করে একদিন বলবো আমার বোন কঠিন পরিস্থিতিতেও মহারানির মতো বড় হয়েছে। ভালো থেকো।
ইতি - উর্মি রহমান
.
ঐশ্বর্যর উর্মির কথা খুব মনে পরে ৮ টি বছর হয়ে গেছে তার সব থেকে কাছের মানুষটি তার বড় বোন তার কাছে নেই কোথায় আছে কেউ জানে না। ঐশ্বর্যের মনে চাপা কষ্টের বোঝা। চিঠিটা পরে চোখে পানি আর গাল বাকিয়ে হেসে দিলো ঐশ্বর্য আর তার মাকে বলল আম্মা আমি জানতাম বুবু আমার জন্য কিছু না কিছু রেখে গেছেই। শান্তির মুখ মলিন হয়ে আছে ঐশ্বর্য বলল আম্মা আমি ঘরে যাই এগুলো নিয়ে? আমি পরে দেখতে চাই কি লিখা আছে এগুলোতে শান্তি বলল চল তোর ঘরে দিয়ে আসি তোকে। ঐশ্বর্য ঘরে এসে দরজা লাগিয়ে হ্যরিকেনটা জালিয়ে বিছানায় রেখে পরা শুরু করলো চিঠি গুলো তে ১,২,৩ এভাবে মার্ক করা তাই ঐশ্বর্যর বুঝতে অসুবিধা হলো না এক নাম্বার চিঠিটা নিয়ে পরা শুরু করলো -
.
চিঠি-১
অনেক ভাবনা চিন্তা করে লেখতে বোসলান কোনো তারিখ দিলাম না শুধু জেনে রাখ এই দিন গুলো তুই বুঝতে পারলে কোনো দিনো ভুলতে পারতি না। যোদি চিঠি গুলো তোর হাতে আসে তাহলে আমার আর রহমান বাড়িতে ফেরা হবে না। আমাদের বাবা মায়ের বিয়ে হয় যখন তখন আমি ছোটো আমার বয়স ৯ বছর  তুই হয়তো এখন বুঝিস না যখন বুঝতে পারবি এটাও জেনে জাবি আমি তোর আপন বোন না আমার মা আমাকে জন্ম দেওয়ার পর মারা যায় যার ফলে দাদু আমাকে দেখতে পেতো না গ্রামের মানুষও আমাকে আজেবাজে কুটো কথা শুনাতো যে আমি জন্মের পর নিজের মা কে খেয়ে ফেলছি। এক সময় বাবা আর এই সব সহ্য করতে পারে না তাই সে আরেকটা বিয়ে করার কথা ভাবে। তখন দেশে যুদ্ধের সময় তবুও কপাল গুনে  মা বাবার সাথে বিয়ে করতে রাজি হয় আর আমাকে মেনেও নেই কদম পারায় সবাই আমাকে বলতো জন্মের সময় মাকে খেয়েছিস এখন সৎ মায়ের ভাত খা আমি তেমন কিছু না বুঝলেও এটা বুঝতে পারতাম মানুষ বলতে চাই সৎ মা ভালো না কিন্তু মা আমাকে কোনো দিন মায়ের অভাব বুঝতে দেয় নি। দেশ স্বাধিন হলো তার পর আমাদের জীবনে তুই এলি আমি তোকে প্রথম কোলে নিয়েই মাকে বলেছিলাম ওর নাম রাখবো ঐশ্বর্য মা আর দ্বিতীয় বার ভাবেনি বলল ঐশ্বর্যই রাখা হবে সবাই খুশি ছিলো শুধু দাদু খুশি হয়নি। মা কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ার কারনে তিনি যাতা কথা বলতেন। বাবাকে সারাদিন উতঘ্রিব ভাষয় গালা গালি করতেন কারন তার উত্তরাধিকারি দরকার। দাদু তোকে পছন্দ করতেন না মা সব সময় মন মরা হয়ে থাকতো কিন্তু তোকে পেয়ে যেনো মা সব কষ্ট ভুলে যেতো। আমার আর মায়ের দিন তোকে নিয়েই কেটে যেতো। বাবা দাদুর কারণে বাড়িতে আসা ছেরে দেয় বছরে দু,এক বার এসে বেশকিছু দিন থেকে চলে যেতেন। কেটে যায় ৭ টি বছর (সাল ১৯৭৮) আমি সবে মাত্র ৯ম শ্রেনিতে উঠেছি। বছরের শুরুতেই রহমান বাড়ির চৌকাঠে পা রাখে আমাদের কাল সেদিনের পর থেকে আমাদের জীবন একদম পালটে যায়। 
.
.
ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ধন্যবাদ। 
পর্ব ১১ জলদি আসবে পাশে থাকবেন।

Comments

    Please login to post comment. Login