বর্তমান সময়ে জাতীয়তাবাদ বা ন্যাশনালিজম পৃথিবীব্যাপী সকল দেশের জন্য একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের কোন বিপদের সন্ধিক্ষণে, জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলা সহ নানা কাজে রাষ্ট্রের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে জাতীয়তাবাদ একটি চৌকস হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ ভূখণ্ডের জন্য এর একটি বাস্তব ভিত্তিক উদাহরণ রয়েছে। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে যার অভাবে এই বাংলা ইংরেজদের হস্তগত হয়েছিল সেই একই শক্তির আবির্ভাবে ১৯৭১ সালে দেশ পাকিস্তান নামক শোষকের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছিল। ইতিহাসের পাতায় চোখ মেল্লেই এই জাতীয়তাবাদ শক্তির বিভিন্ন দিক খুঁজে পাওয়া যায় যা একদিকে সুখকর এবং অন্যদিকে বিপর্যয় সৃষ্টিকারী। তবে বর্তমান আলোচনা বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে সীমাবদ্ধ থাকবে। ১৯৭১ সালে যুদ্ধের প্রাক্কালে, ৮৯ এর গণঅভ্যুত্থানে, ২৪ এর ফ্যাসিস্ট বিরোধী আন্দোলন আমাদের যে ঐক্যের সীমারেখায় দাঁড় করিয়েছিল তা নিঃসন্দেহে জাতীয়তাবাদের একটি ভালো দিক। এই তিন সময়ে আমরা ইনক্লুসিভ বাংলাদেশের দৃষ্টান্ত দেখেছি।উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতেই বুঝা যায় ইনক্লুসিভ বাংলাদেশ বলতে মূলত কি বুঝায়। বিপর্যয় মোকাবিলায় আমরা যে বাংলাদেশ দেখেছিলাম, জাতীয় জীবন পরিচালনায়, বিপর্যয় পরবর্তী সময়ে ঠিক সেই রকম বাংলাদেশ আমরা খুঁজে পেয়েছি? স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন। সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন ঘটনাবলী এতে বিশেষ উদ্বেগের সৃষ্টি করে। এর মধ্যে পাহাড়ি জাতিসত্তার টানাপড়েন, ধর্মীয় বিভাজন, শ্রমিক অসন্তোষ, আইন-শৃঙ্অখলার অবনতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, টালমাটাল শিক্ষা ব্যবস্থার মত স্পর্শকাতর বিষয় সহ আর অন্যান্য ধরনের বিশৃঙ্খলা আমাদের উপর ঝেঁকে বসেছে যা নিরসনে এমন এক জাতীয়তাবাদ প্রয়োজন যা অন্তর্ভক্তিমূলক বাংলাদেশ গঠনের পথ প্রশস্ত করে জাতীয় জীবনে সকল বাধা- বিপত্তির অবসান ঘটিয়ে উন্নতির পথে অগ্রসর হবে। তাই এমন এক জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা করতে হবে যাতে সকল শ্রেণীর পেশার মানুষ- কৃষক থেকে শুরু করে শ্রমিক, দরিদ্র থেকে শুরু করে ধনীক শ্রেণী, সকল সম্প্রদায়ের মানুষ-হিন্দু,বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলিম, সকল জাতিসত্তা- বাঙালি ও অবাঙালি সহ বাংলাদেশের বৈধ সকল নাগরিক কে তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে সমান অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করে দিবে। সকলের বাক্তি স্বাধীনতা রক্ষিত হবে, স্বাধীনভাবে সকল কাজ করতে পারবে যা সবাইকে এই বাংলাদেশকে 'আমার বাংলাদেশ' বলে আত্মোপলব্ধি করাবে। যদি কোন কারণে এই ‘ইনক্লুসিভ বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠিত হতে না পারে, নানা ধরনের সংকট প্রতিনিয়ত সমাজে মাথা চাড়া দিতে থাকবে যা ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে আরও গভীর সংকটে ফেলবে।