Posts

ফিকশন

টাইম মেশিনের অভিযাত্রী

January 27, 2025

Abdul Awal

Original Author অধ্যক্ষ এমএ আউয়াল

42
View

রাত গভীর, চারদিকে নিস্তব্ধতা। ড. আবির রহমান তার গবেষণাগারে বসে গভীর চিন্তায় মগ্ন। টেবিলের উপর ছড়ানো নোটবুক, অদ্ভুত যন্ত্রপাতি, আর মাঝখানে দাঁড়িয়ে এক অদ্ভুত মেশিন। তিনি বছরের পর বছর এই মেশিনটি তৈরি করার জন্য কাজ করেছেন। এটি তার জীবনের স্বপ্ন: একটি টাইম মেশিন।

“শেষবারের মতো পরীক্ষা করা যাক,” আবির নিজেকেই বললেন। টাইম মেশিনের প্যানেলে একটি নির্দিষ্ট তারিখ সেট করলেন—১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি, একুশে ফেব্রুয়ারির ঐতিহাসিক দিন। তার লক্ষ্য ছিল সেই সময়ের আবহ ও ঘটনাগুলো কাছ থেকে দেখা।

মেশিনটি চালু করতেই গর্জনের মতো শব্দ হলো, যেন সময়ের গহ্বরে কোনো দরজা খুলে গেল। আলোর ঝলকানিতে চারপাশ অদৃশ্য হয়ে গেল। আবির অনুভব করলেন, তিনি যেন শূন্যে ভাসছেন। মুহূর্তের মধ্যেই তিনি নিজেকে এক ভিন্ন সময়ে খুঁজে পেলেন।

একুশে ফেব্রুয়ারির স্মৃতি

এটা ১৯৫২ সাল, ঢাকার রাস্তায় উত্তেজনা। তরুণ ছাত্ররা বাংলা ভাষার অধিকার নিয়ে মিছিল করছে। আবির প্রথমে ভীত ছিলেন, কিন্তু ধীরে ধীরে বুঝলেন, তিনি সত্যিই সেই সময়ে পৌঁছেছেন। তার চারপাশের লোকজন তার পোশাক দেখে একটু অবাক হচ্ছিল। একজন তরুণ তাকে জিজ্ঞেস করল, “আপনি কি সাংবাদিক?”

আবির মাথা নাড়িয়ে বললেন, “হ্যাঁ, আমি ঘটনাগুলো দেখতে এসেছি।”

তারপর তিনি মিছিলে অংশ নিলেন। পুলিশের লাঠিচার্জ, গুলির আওয়াজ, আর মানুষের চিৎকারে ভরে উঠল চারপাশ। তিনি সেই দিনটি খুব কাছ থেকে দেখলেন। সালাম, রফিক, বরকতদের আত্মত্যাগ দেখে তার চোখ ভিজে গেল।

কিন্তু সময় শেষ হয়ে আসছিল। তিনি মেশিনে ফিরে গিয়ে বর্তমান সময়ে ফেরার প্রস্তুতি নিলেন। টাইম মেশিনটি চালু করার পর আবার ঝলকানি, আবার সেই শূন্যতার ভ্রমণ। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি নিজের গবেষণাগারে ফিরে এলেন।

 

ফিরে এসে আবির গভীর চিন্তায় ডুবে গেলেন। তিনি জানতেন, টাইম মেশিন শুধু সময় ভ্রমণের জন্য নয়; এটি অতীত থেকে শিক্ষা নেয়ার সুযোগ। একুশে ফেব্রুয়ারির সংগ্রামের কথা ভেবে তিনি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলেন, এই আবিষ্কারকে মানবতার কল্যাণে ব্যবহার করবেন।

কিন্তু এরপর কী? আবির সিদ্ধান্ত নিলেন, এবার তিনি এমন একটি সময় ভ্রমণ করবেন, যা ইতিহাসে রহস্য হিসেবে চিহ্নিত। তিনি ১৯৪৭ সালের ভারত বিভাজনের দিন দেখতে চাইলেন। বিভাজনের পেছনের রাজনৈতিক কূটচালগুলো তিনি নিজ চোখে দেখতে চাইলেন।

 

প্যানেলে নতুন তারিখ সেট করার পর, তিনি আবার টাইম মেশিনে চেপে বসলেন। ঝলকানির পর নিজেকে পেলেন কলকাতার এক ব্যস্ত রাস্তায়। চারপাশে মানুষের ভিড়, আতঙ্কিত মুখ। তিনি দেখলেন, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ নিজেদের রক্ষার জন্য অস্ত্র হাতে নিচ্ছে। একদিকে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, অন্যদিকে রাজনৈতিক নেতাদের বড় বড় বক্তৃতা।

আবির বুঝতে পারলেন, এই বিভাজনের পেছনে কেবল জনগণের ইচ্ছাই নয়, বরং অনেক কূটনৈতিক ষড়যন্ত্রও ছিল। তিনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত দেখে নিলেন—নেতাদের আলোচনা, সীমান্ত নির্ধারণের বৈঠক, এবং নিরীহ মানুষের কষ্ট।

ফিরে এসে তিনি তার নোটগুলো খতিয়ে দেখলেন। এই ইতিহাস তার কাছে আরও গভীর এবং বাস্তব হয়ে উঠেছিল।

 

ড. আবিরের মনে প্রশ্ন জাগল, সময়ের এমন কোনো বিন্দুতে কি যাওয়া সম্ভব, যেখানে ভবিষ্যৎ দেখা যায়? তিনি একটি নতুন পরীক্ষা চালালেন। এবার টাইম মেশিনে তিনি ২২০০ সাল নির্ধারণ করলেন। ঝলকানি শেষে তিনি দেখলেন এক অদ্ভুত ভবিষ্যৎ।

রোবট এবং মানুষের সহাবস্থান, উড়ন্ত গাড়ি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিস্তার—সবকিছু যেন স্বপ্নের মতো। কিন্তু সবকিছুর মাঝেও একটি অন্ধকার দিক ছিল। তিনি লক্ষ্য করলেন, পরিবেশ ধ্বংসের কারণে পৃথিবী ধীরে ধীরে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। মানুষের আবেগ-অনুভূতি যেন প্রযুক্তির চাপে ম্লান হয়ে গেছে।

ফিরে এসে ড. আবির উপলব্ধি করলেন, টাইম মেশিনের গুরুত্ব শুধু অতীত বা ভবিষ্যৎ দেখা নয়; এটি বর্তমানকে ঠিক করার জন্য শিক্ষার একটি মাধ্যম। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, তার এই আবিষ্কারকে শুধুমাত্র বিজ্ঞানের উন্নয়ন নয়, বরং মানবতার উন্নয়নের জন্য ব্যবহার করবেন।

Comments

    Please login to post comment. Login