রাত তখন প্রায় তিনটা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আনিসুর রহমান ক্লান্ত দৃষ্টিতে তাঁর ডেস্কের ওপর রাখা পুরোনো নথিগুলোর দিকে তাকিয়ে আছেন। তাঁর সামনে খোলা একটা পাণ্ডুলিপি, যেখানে কিছু অজানা ভাষায় লেখা চিহ্নিত হয়েছে। হঠাৎ ফোন বেজে উঠল।
"হ্যালো?"
"প্রফেসর আনিস, আমি রাজীব বলছি। জরুরি একটা ব্যাপার আছে। আপনি এখন কথা বলতে পারবেন?"
রাজীব তাঁর প্রাক্তন ছাত্র, এখন এক বিদেশি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কাজ করে। সাধারণত সে গভীর রাতে ফোন দেয় না।
"হ্যাঁ, বলো। কী হয়েছে?"
"আমরা বঙ্গোপসাগরের একটা অচেনা দ্বীপে কিছু অদ্ভুত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পেয়েছি। সেগুলোর ভাষা আপনার গবেষণার সাথে মিলে যায় বলে মনে হচ্ছে। আপনি কি আমাদের সাথে যেতে পারবেন?"
অধ্যাপক আনিস কিছুক্ষণ নীরব থাকলেন। এ ধরনের সুযোগ খুব কমই আসে জীবনে।
"ঠিক আছে, আমি যাব। কিন্তু বিস্তারিত জানাতে হবে।"
কয়েকদিনের মধ্যেই আনিস, রাজীব, এবং আরও কয়েকজন গবেষক চট্টগ্রাম থেকে জাহাজে রওনা দিলেন। গন্তব্য বঙ্গোপসাগরের এক নির্জন দ্বীপ, যেটির নামও কারও জানা নেই।
যাত্রার দ্বিতীয় দিন রাতেই কিছু অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে শুরু করল। একদিন আনিস গভীর রাতে ডেকে ওঠেন। মনে হলো, যেন কেউ তাঁকে নাম ধরে ডাকছে। কিন্তু আশপাশে কাউকে দেখা গেল না।
"আপনিও শুনেছেন, স্যার?" রাজীব ফিসফিস করে বলল।
"তুমি কী শুনলে?"
"কেউ যেন ফিসফিস করে আমাদের ডাকছিল। কিন্তু আমরা ছাড়া এখানে আর কেউ নেই।"
সকাল হলে সবাই এ বিষয়ে আলোচনা করলেও এর কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা খুঁজে পেল না।
তিন দিন পর তারা দ্বীপে পৌঁছাল। প্রথম দেখায় দ্বীপটি সাধারণ মনে হলেও, গভীরে প্রবেশ করার সাথে সাথে সবাই অনুভব করল যেন তাদের কেউ পর্যবেক্ষণ করছে।
"এখানে দেখুন!" একজন গবেষক চিৎকার করে উঠল।
মাটির নিচে একটি বড় মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেল। মন্দিরের গায়ে খোদাই করা চিহ্নগুলো অধ্যাপক আনিসের কাছে পরিচিত মনে হলো।
"এগুলো তো আমার গবেষণায় পাওয়া প্রাচীন নাগরিক সভ্যতার চিহ্ন!" তিনি বিস্ময়ে বললেন।
দলটি মন্দিরের ভেতরে ঢুকল। ভিতরে একটা বিশাল পাথরের দরজা পাওয়া গেল, যার গায়ে কিছু শিলালিপি খোদাই করা। আনিস সেগুলো পড়ার চেষ্টা করলেন—
"যে প্রবেশ করবে, সে ফিরে আসবে না।"
এই সতর্কবার্তা দেখে সবার গা ছমছম করে উঠল।
সন্ধ্যার পর রাজীব আর আনিস দরজাটি খোলার সিদ্ধান্ত নিলেন। দরজা খুলতেই একটি সুড়ঙ্গপথের সন্ধান পাওয়া গেল। ভেতরে প্রবেশ করার সাথে সাথেই সবাই অনুভব করল যেন সময় ধীরে ধীরে থমকে যাচ্ছে।
একসময় তারা এক বিশাল হলরুমে পৌঁছাল, যেখানে কয়েকটি পাথরের মূর্তি রাখা ছিল। কিন্তু মূর্তিগুলো অদ্ভুত—তাদের চোখ যেন জীবন্ত!
"আমার মনে হচ্ছে, এগুলো শুধু মূর্তি নয়…" আনিস ধীরে ধীরে বললেন।
হঠাৎ, পেছন থেকে এক গম্ভীর কণ্ঠ শোনা গেল—
"তোমরা চলে যাও!"
সবাই আতঙ্কে ঘুরে দাঁড়াল। কিন্তু কাউকে দেখা গেল না।
পরদিন সকালে তারা দ্বীপ থেকে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ এক বৃদ্ধ দ্বীপবাসী তাদের সামনে এসে দাঁড়াল।
"তোমরা চলে যাও, এই দ্বীপ তোমাদের জন্য নয়!"
"কিন্তু আমরা জানতে চাই, এখানে কী আছে?" রাজীব জিজ্ঞাসা করল।
বৃদ্ধ দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
"এই দ্বীপ এক সময় এক প্রাচীন সভ্যতার কেন্দ্র ছিল। কিন্তু তারা এক নিষিদ্ধ শক্তির ব্যবহার করত, যার ফলে এক ভয়ানক অভিশাপ নেমে আসে। যেই এখানে ঢোকে, সে আর স্বাভাবিকভাবে ফিরে যেতে পারে না।"
"তাহলে আমাদের এখন কী করা উচিত?"
"তোমাদের যত দ্রুত সম্ভব চলে যেতে হবে। যদি দেরি করো, তোমরা আর কখনো বের হতে পারবে না।"
তারা দ্রুত দ্বীপ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিল। কিন্তু জাহাজের কাছে আসতেই দেখল, সেটি অদ্ভুতভাবে আটকে আছে। বাতাস ভারী হয়ে আসছে, সমুদ্র অস্বাভাবিক নীরব।
"আমরা কি এখান থেকে বের হতে পারব?" রাজীব উদ্বিগ্ন স্বরে বলল।
আনিস কিছু বলার আগেই, বাতাসে আবার সেই কণ্ঠস্বর ভেসে এল—
"তোমরা চলে যেতে পারবে না!"
সবার রক্ত হিম হয়ে গেল। দ্বীপ কি সত্যিই তাদের মুক্তি দেবে? নাকি তারা চিরকালের জন্য হারিয়ে যাবে এই অভিশপ্ত ভূমিতে?
ভয় আর উত্তেজনায় সবাই ছুটতে শুরু করল, কিন্তু যতই দৌড়ায়, পথ যেন ঘুরে ফিরে আবার একই জায়গায় চলে আসে। দ্বীপের মাঝখানে এক বিশাল বটগাছের নিচে দাঁড়িয়ে সবাই হাঁপিয়ে উঠল।
"এটা কীভাবে সম্ভব?" রাজীব হতাশ কণ্ঠে বলল।
অধ্যাপক আনিস গাছের গুঁড়ির চারপাশ পরীক্ষা করে দেখলেন। গাছের শেকড়ের মাঝে খোদাই করা কিছু অক্ষর তিনি লক্ষ্য করলেন।
"যে সত্য জানে, সে পথ খুঁজে পায়।"
"সত্য… কিন্তু কী সত্য?" আনিস বিড়বিড় করলেন।
রাজীব মাথা নাড়িয়ে বলল, "আমাদের হয়তো কিছু লুকানো বিষয় খুঁজতে হবে। দ্বীপের কোথাও না কোথাও এর উত্তর আছে!"
দলটি আবার এগোতে শুরু করল। তারা জঙ্গলের গভীরে প্রবেশ করলে এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখতে পেল—এক বিশাল ধ্বংসপ্রাপ্ত নগরী।
"এটা তো আসলে একটা সভ্যতা ছিল!" এক গবেষক বিস্মিত কণ্ঠে বলল।
তারা চারপাশ ঘুরে দেখতে লাগল। এখানে মন্দির, প্রাসাদ, পাথরের রাস্তা—সবকিছুই ছিল, কিন্তু কোথাও কোনো মানুষ নেই।
"তাহলে এই লোকেরা গেল কোথায়?"
তারা এক বিশাল দরজার সামনে এসে দাঁড়াল, যেটার ওপর কিছু চিত্র আঁকা ছিল—একদল মানুষ, যারা একটা বিশাল দৈত্যের সামনে হাঁটু গেড়ে বসেছে।
"এটা কি কোনো আত্মা বা দেবতার উপাসনার চিত্র?" আনিস ভাবলেন।
হঠাৎ, দরজার ফাঁক দিয়ে এক ঠান্ডা বাতাস বেরিয়ে এল, আর সেই সঙ্গে একটা গুঞ্জন শোনা গেল—
"তোমরা কি সত্যিই জানতে চাও?"
সবাই আতঙ্কে পেছনে সরে গেল। কিন্তু আনিস সাহস করে এগিয়ে গেলেন।
"হ্যাঁ, আমরা জানতে চাই!"
হঠাৎ দরজাটি ধীরে ধীরে খুলে গেল, আর তার পেছনে এক বিশাল কক্ষ দেখা গেল। ভিতরে ঢুকে তারা দেখল, মাঝখানে একটা পাথরের বেদি, আর তার ওপরে শায়িত একটি দেহ—একজন মানুষের দেহ, কিন্তু তার চোখ খোলা!
"এটা কীভাবে সম্ভব?"
দেহটি ধীরে ধীরে উঠে বসল, আর তার ঠোঁট নড়ল—
"তোমরা চলে যাও… আমি এখানে আটকা… হাজার বছর ধরে!"
"তুমি কে?" রাজীব ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল।
"আমি এই নগরীর শেষ রক্ষক। আমি এক অভিশপ্ত যোদ্ধা। আমাদের সভ্যতা একসময় এক শক্তিশালী আত্মার উপাসনা করত, কিন্তু আমরা ভুল করেছিলাম। সেই আত্মা আমাদের ধ্বংস করল। আমি একমাত্র টিকে ছিলাম, কিন্তু সে আমাকে মুক্তি দেয়নি। আমি এখানে বন্দি হয়ে আছি!"
"আমরা কি তোমাকে সাহায্য করতে পারি?"
"শুধু একটাই উপায় আছে—যদি তোমরা দ্বীপের কেন্দ্রস্থলে থাকা ‘অভিশপ্ত মণি’ ধ্বংস করো। তবেই আমিও মুক্ত হব, আর তোমরা এখান থেকে বের হতে পারবে!"
গবেষক দল দ্বীপের গভীরে যেতে শুরু করল। যতই এগিয়ে যায়, বাতাস ভারী হতে থাকে, আর চারপাশের জঙ্গল যেন আরও গাঢ় হয়ে ওঠে।
হঠাৎ ঝড়ের মতো বাতাস বইতে শুরু করল, আর এক কালো ছায়া তাদের পথ আটকে দাঁড়াল।
"তোমরা এখানে প্রবেশ করতে পারবে না!"
"আমরা মুক্তি চাই! আমরা এই দ্বীপকে মুক্ত করব!" আনিস দৃঢ় কণ্ঠে বললেন।
কালো ছায়াটি বিকট শব্দে চিৎকার করে উঠল, আর চারপাশ কাঁপতে লাগল। মাটির নিচ থেকে ভয়ংকর অশরীরী আত্মারা উঠে এল, তাদের চোখ ধ্বংসের আগুনে জ্বলছিল।
"আমাদের কিছু করতে হবে!" রাজীব চিৎকার করল।
আনিস সেই পুরোনো শিলালিপির লেখা মনে করলেন—
"যে সত্য জানে, সে পথ খুঁজে পায়।"
"আমাদের সত্যি বলতে হবে!"
তারা সবাই একসঙ্গে চিৎকার করে বলল, "আমরা সত্যের অনুসন্ধানী! আমরা এখানে ভালো শক্তির পক্ষে এসেছি!"
আলো ঝলসে উঠল, আর কালো ছায়াটি চিৎকার করতে করতে মিলিয়ে গেল।
তারা দ্বীপের কেন্দ্রে এক বিশাল পাথরের স্তম্ভের সামনে এসে দাঁড়াল। এর ভেতরে চকচকে এক কালো রত্ন রাখা ছিল—‘অভিশপ্ত মণি’।
"এটাই আমাদের ধ্বংস করতে হবে!"
রাজীব এক বিশাল পাথর তুলে এনে মণির ওপর আঘাত করল। সাথে সাথে পুরো দ্বীপ কেঁপে উঠল, আকাশ কালো হয়ে গেল, আর এক তীব্র বজ্রপাত হলো।
মণিটি ফেটে গেল, আর তার ভেতর থেকে এক আলো বেরিয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল।
আস্তে আস্তে সবকিছু শান্ত হয়ে এল। চারপাশে যে অশরীরী আত্মারা ছিল, তারা ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল।
দ্বীপের বন্দি যোদ্ধা এসে দাঁড়াল, তার চোখে শান্তির ছায়া।
"তোমরা আমাদের মুক্ত করলে। এবার তোমরা নিরাপদে চলে যেতে পারবে।"
তারা দ্রুত জাহাজে উঠে দ্বীপ ছেড়ে ফিরে এল। কিন্তু কিছু একটা ঠিক ছিল না…
আনিস নিজের ব্যাগ খুলে দেখলেন—সেখানে ছোট্ট এক কালো পাথর, হুবহু সেই ‘অভিশপ্ত মণির’ মতো!
তিনি চমকে উঠলেন।
"তাহলে কি… এই অভিশাপ শেষ হয়নি?"
ঢাকায় ফিরে আসার পর অধ্যাপক আনিস কিছুদিন সুস্থির থাকতে পারলেন না। রাত হলে বারবার তাঁর মনে হতে লাগল কেউ যেন ফিসফিস করে তাঁকে ডাকছে। তাঁর ঘরে রাখা সেই কালো পাথর থেকে এক অদ্ভুত শক্তির অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ছিল।
একদিন গভীর রাতে দরজায় টোকা পড়ল।
টক-টক-টক।
তিনি দরজা খুলতেই দেখলেন, রাজীব দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু তার চেহারায় একটা অদ্ভুত পরিবর্তন এসেছে—তার চোখে গভীর অন্ধকার, মুখে অস্বাভাবিক ফ্যাকাশে ভাব।
"স্যার, আমাদের আবার দ্বীপে ফিরতে হবে," রাজীব ফিসফিস করে বলল।
"কী বলছ, রাজীব? দ্বীপ তো ধ্বংস হয়ে গেছে!"
"না, স্যার। আমরা যা ভেবেছিলাম, তা ভুল।"
আনিস রাজীবকে ভেতরে নিয়ে এলেন। রাজীব বলল, "আমি কয়েকদিন ধরে অদ্ভুত স্বপ্ন দেখছি। সেখানে কেউ আমাকে ডাকে, বলে দ্বীপের অভিশাপ এখনো শেষ হয়নি। আর সেই পাথর…"
তিনি আনিসের ডেস্কের দিকে তাকালেন, যেখানে কালো পাথরটা রাখা ছিল।
"আমাদের এটা ফেরত নিয়ে যেতে হবে, নাহলে আমরা ধ্বংস হয়ে যাব!"
আনিস বুঝতে পারলেন, রহস্য এখানেই শেষ হয়নি। তিনি পুরোনো নথি ঘেঁটে দেখলেন, প্রাচীন সেই সভ্যতার ইতিহাসে লেখা ছিল—
"যদি অভিশপ্ত মণি দ্বীপের বাইরে যায়, তাহলে সে তার বাহকের মাধ্যমে আবার শক্তি অর্জন করবে।"
"এর মানে কি এই পাথর আমাদেরই ব্যবহার করবে?" আনিস শিউরে উঠলেন।
ঠিক তখনই বাতাসের মধ্যে কাঁপুনির মতো একটা আওয়াজ হলো। ঘরের জানালা এক ধাক্কায় খুলে গেল, বাতাসে গুঞ্জন ভেসে এল—
"আমাকে ফিরিয়ে দাও, নয়তো তোমরাই ধ্বংস হবে!"
আনিস ও রাজীব ভয় পেয়ে গেলেন। এই ভয় যেন কেবল শারীরিক নয়, তাদের আত্মার গভীর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ল।
"আমাদের আবার দ্বীপে যেতে হবে," আনিস দৃঢ় কণ্ঠে বললেন।
দুই সপ্তাহের মধ্যে তাঁরা আবার একদল গবেষক নিয়ে বঙ্গোপসাগরের উদ্দেশে রওনা দিলেন। কিন্তু এবারের যাত্রা আরও ভয়ংকর হয়ে উঠল।
তৃতীয় দিন রাতে সমুদ্রের পানিতে অদ্ভুত আলো দেখা যেতে লাগল।
"ওগুলো কী?" এক নাবিক বিস্মিত স্বরে বলল।
সবার চোখের সামনে সমুদ্রের নিচে যেন এক ধ্বংসপ্রাপ্ত শহরের অবয়ব ফুটে উঠল—সেই শহর, যেটা তাঁরা দ্বীপে দেখেছিলেন!
আস্তে আস্তে সেই আলো আরও ঘন হয়ে উঠল, আর হঠাৎ ঝড়ের মতো বাতাস বইতে লাগল।
"আমরা কি সত্যিই দ্বীপে পৌঁছাতে পারব?" রাজীব উদ্বিগ্ন স্বরে বলল।
দ্বীপে পৌঁছানোর পরই সবাই টের পেল, এখানে কিছু একটা ভুল হচ্ছে। দ্বীপের গাছপালা আগের চেয়ে আরও কুয়াশাচ্ছন্ন, বাতাস ভারী, আর চারপাশের পরিবেশ শূন্য।
"আমরা দ্রুত মন্দিরের কাছে যাই!"
দলটি দ্রুত মন্দিরের সেই ধ্বংসপ্রাপ্ত দরজার সামনে পৌঁছাল। কিন্তু এবার সেখানে নতুন কিছু লেখা ছিল—
"তোমরা দেরি করে ফেলেছ!"
আনিস বুঝতে পারলেন, কালো পাথর তাদের দ্বীপে ফিরতে বাধ্য করেছে, কিন্তু এখন অভিশাপ আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।
ঠিক তখনই হঠাৎ করে চারপাশ থেকে কালো ছায়ার সৃষ্টি হতে লাগল।
এক বিকট গর্জনের সাথে সেই অশুভ আত্মা আবার প্রকাশ পেল—
"তোমরা আমাকে আটকাতে পারবে না! আমি চিরকাল এখানে থাকব!"
"না, তুমি আমাদের দখল নিতে পারবে না!" আনিস চিৎকার করে বললেন।
তিনি পাথরটি উঁচিয়ে ধরে শক্তি প্রয়োগ করলেন, আর রাজীব দ্রুত সেই শিলালিপির লেখার কথা মনে করে কিছু উচ্চারণ করল।
আকাশ থেকে বজ্রপাত নামল, আর পাথরটি ফেটে গেল!
সাথে সাথে বিশাল এক বিস্ফোরণ হলো, আর চারপাশে আলো ছড়িয়ে পড়ল। সেই আত্মা বিকট আর্তনাদ করে মিলিয়ে গেল, আর দ্বীপ ধীরে ধীরে কুয়াশামুক্ত হতে থাকল।
দলটি জাহাজে ফিরে এলো, কিন্তু এবার দ্বীপটি সত্যিই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছিল। পানির নিচ থেকে বিশাল ফাটল সৃষ্টি হলো, আর দ্বীপ ধীরে ধীরে সমুদ্রের গভীরে ডুবে গেল।
"এই দ্বীপ আর কখনোই আমাদের বিরক্ত করবে না," আনিস দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন।
কিন্তু ঠিক তখনই, রাজীব কিছু একটা লক্ষ্য করল—
তার হাতের তালুর ভেতর ছোট্ট একটা দাগ। ঠিক সেই পাথরের চিহ্নের মতো!
আনিসের মুখ বিবর্ণ হয়ে গেল।
"আমরা কি সত্যিই মুক্তি পেয়েছি?"
নাকি… নতুন অভিশাপ শুরু হলো?