Posts

চিন্তা

শিক্ষকের রোযনামচা- ০২ (আগোছালো আরেকটি শিক্ষা বর্ষের শুরু)

January 29, 2025

মাহমুদুল হক

192
View

তেইশ সালের শেষের দিকে প্রাইভেট মাদ্রাসা থেকে বেসরকারি মাদ্রাসায় যোগ দেই। বছরের শেষ। প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সংকট। অনেকগুলো ক্লাস পড়ে। কোনোভাবে বার্ষিক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি করার চেষ্টা করি শিক্ষার্থীদের। নতুন হওয়ায় পারস্পরিক বোঝাপড়ার একটা ব্যাপার ও ছিল। তবুও অধিকাংশ শ্রেণিতে পুরোনো কারিকুলাম হওয়ায় অতোটা সংকট, পেরেশানিতে পড়তে হয় নি।

সংকটের শুরু হয় তেইশ সালের ডিসেম্বরে।মাধ্যমিক স্তরে  নতুন কারিকুলাম পুরো দমে চালুর ডামাডোল লেগে যায়। সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকের বই, পিআই, বিআই, প্রশিক্ষণ ইত্যাদি ইত্যাদি। মাদ্রাসা থেকে পাঠানো হয় সাত দিনের প্রশিক্ষণে। প্রশিক্ষণ শেষে মনে হলো, যারা প্রশিক্ষক তাদের আরো প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। বারবার কানে বাজতে থাকলো, আগের মুখস্থ বিদ্যা নয়, এখন থেকে শিক্ষার্থীরা শিখবে হাতে কলমে। কিন্তু এমন সব পরিভাষা আর পদ্ধতি দিয়ে বই সাজানো হলো, শিক্ষকরাই বুঝতে সমস্যা দেখা দিল। 

এরমধ্যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ইসলাম বিদ্বেষী পাঠ ঢুকিয়ে পুরো ব্যবস্থাকে আরও বিতর্কিত এবং আপামর জনসাধারণের মাঝে আস্থার সংকট তৈরি করে দিল। শুরু হলো একটা অগোছালো শিক্ষাবর্ষ। পড়ালেখার চাপ শিক্ষার্থীদের মাথা থেকে সরে শিক্ষকদের মাথায় চড়ে বসলো। কিছুদিনের মধ্যেই নতুন ভূত হিসেবে আবির্ভূত হলো নৈপুণ্য এপ। সময় যত গড়ায় শিক্ষকদের উপর চাপ, পেরেশানি তত বাড়তে থাকে। অর্ধবার্ষিকীতে এক নজিরবিহীন পরীক্ষায়  বসে লাখ লাখ শিক্ষার্থী। পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্ন আসে। ওঁত পেতে থাকা ছিনতাইকারীর মতো পেছনে পেছনে চলে আসে উত্তর ও। সেই উত্তর শিক্ষার্থীরা লিখে এনে বসিয়ে দেয় উত্তর পত্রে। ক্ষেত্র বিশেষে শিক্ষকরাই বলে দিতে হচ্ছে উত্তর। এভাবেই এগুচ্ছিল কোটি কোটি টাকার নতুন কারিকুলাম। 

জুলাইয়ে নামে বিপর্যয়। ছাত্র আন্দোলন। প্রতিষ্ঠান বন্ধ। আগস্টে নতুন সূর্যের উদয়। সরকারের পতন। সাথে পুরো কারিকুলাম ও বিদায়। ছাত্ররা পড়ার টেবিলে বসতে বসতে বছর শেষ। নতুন সরকার ফিরে যায় পুরোনো ব্যবস্থায়। মাটি খুঁড়ে বের করে আনে বারো সালের কারিকুলাম। তবুও প্রত্যাশা ছিল সুন্দর এবং মজবুত হবে শিক্ষাব্যবস্থা। কারণ, নতুন সরকারে উচ্চ শিক্ষিত এবং বিজ্ঞ লোকের সমাগম ঘটেছে। 

কিন্তু আশায় গুড়েবালি। অগোছালো ভাবে শুরু হয়েছে আরো একটি শিক্ষাবর্ষ। ফেব্রুয়ারির এস এস সি সমমানের পরীক্ষা চলে গেছে এপ্রিলে। জানুয়ারি শেষ। এখন অধিকাংশ পাঠ্যবই পৌঁছায়নি শিক্ষার্থীদের হাতে। রাস্তায় নেমেছে প্রাথমিক, এবতেদায়ী শিক্ষকরা। প্রস্তুতি নিচ্ছে বেসরকারি শিক্ষকরাও। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে এখন ও রয়ে গেছে অস্বস্তি, উত্তেজনা, আন্দোলন, দখল। সব মিলিয়ে রাজনীতির মাঠের সাথে তাল মিলিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে শিক্ষাঙ্গনের অস্থিরতা। 

তবুও আশা করছি, সরকার শিক্ষার প্রতি আন্তরিক হবে। গোছালো এবং পরিকল্পিতভাবে শুরু হবে সামনের শিক্ষাবর্ষ। সাথে সাথে শিক্ষাব্যবস্থা হবে যুগোপযোগী, আধুনিক এবং আপামর জনসাধারণের বোধ বিশ্বাসের আস্থার প্রতীক। শিক্ষকতা হবে সমাজের সবচেয়ে সম্মানিত এবং মর্যাদাপূর্ণ পেশা।

Comments

    Please login to post comment. Login