পোস্টস

গল্প

একজন খারাপ মানুষ থেকে ভাল মানুষ হয়ে উঠার গল্প

১৮ মে ২০২৪

তোফায়েল ইসলাম

মূল লেখক তোফায়েল ইসলাম

আমাদের সমাজে পরিবর্তনের গল্পগুলো সবসময়ই আকর্ষণীয়। এটি তখনই আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে যখন একজন খারাপ মানুষ নিজের জীবনের পথ পরিবর্তন করে একজন ভাল মানুষে পরিণত হয়। আজকের গল্পটি এমন একজন মানুষের, যার জীবন ছিল অপরাধ ও অন্ধকারে পূর্ণ, কিন্তু নিজের ইচ্ছাশক্তি ও সহানুভূতির মাধ্যমে সে হয়ে উঠেছিল এক অনুপ্রেরণাদায়ক ব্যক্তিত্ব।

সেলিমের জন্ম হয়েছিল শহরের একটি দরিদ্র এলাকায়। তাঁর বাবা ছিলেন একজন দিনমজুর, মা গৃহিণী। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে সেলিমের শৈশব ছিল নানা কষ্ট ও বঞ্চনায় পরিপূর্ণ। ছোটবেলা থেকেই তার মনে হতাশা আর ক্রোধের জন্ম নেয়। স্কুলে পড়াশোনা করার ইচ্ছা থাকলেও, বাবা-মায়ের সামর্থ্য ছিল না তাকে পড়াশোনার উপকরণ সরবরাহ করার।

দশ বছর বয়সেই সেলিম কাজ শুরু করে দেয়, রাস্তায় চা বিক্রি করা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ছোটখাটো কাজ। কিন্তু এই কাজগুলোর মধ্যেও সেলিমের মধ্যে একটি অশান্তি বিরাজ করত। তার মনে হত, সমাজ তাকে ন্যায্য সুযোগ দিচ্ছে না।

একদিন, সেলিমের জীবনে বড় পরিবর্তন আসে যখন সে তার বন্ধুর মাধ্যমে স্থানীয় গ্যাং-এর সাথে পরিচিত হয়। গ্যাং-এর সদস্যরা তাকে প্রলোভন দেখায় দ্রুত অর্থ ও ক্ষমতার। তারাও ছিল দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা যুবক, যারা সহজ পথে ধনী হওয়ার স্বপ্ন দেখত।

প্রথমে ছোটখাটো চুরি থেকে শুরু করে, ধীরে ধীরে সেলিম গুরুতর অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। সে নিজেই বুঝতে পারল না, কিভাবে ধীরে ধীরে তার জীবনে অন্ধকারের ছায়া নেমে এল। গ্যাং-এর অন্যান্য সদস্যদের মতোই, সেলিমও নেশা করতে শুরু করল। তার জীবন হয়ে উঠল অপরাধ, নেশা আর হিংসায় পূর্ণ।

একদিন, এক বড় চুরির পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, একটি ধনী বাড়িতে ঢুকে সব মূল্যবান জিনিস লুট করতে হবে। সেলিম আর তার দল পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু করে। কিন্তু হঠাৎ করেই সবকিছু ভেঙে পড়ে, যখন বাড়ির মালিক ফিরে আসে। তাদের দেখে ভয় পেয়ে যায়, আর ডাকাতদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।

সেলিমের মনে তখনই একটি পরিবর্তন আসে, যখন সে দেখতে পায় একটি ছোট মেয়ে ভয়ে কাঁপছে। মেয়েটির চোখে ভয় ও বেদনাকে দেখে সেলিমের মনে নিজের ছোটবেলার স্মৃতি ভেসে উঠে। তার মনে হয়, কিভাবে সে নিজেই একদিন এমনই ছিল, অসহায় ও বঞ্চিত।

সে মুহূর্তেই সেলিম সিদ্ধান্ত নেয়, আর নয়। সে মেয়েটিকে রক্ষা করে দল থেকে বেরিয়ে আসে। এই পরিবর্তনটি ছিল তার জীবনের সবচেয়ে বড় মোড়।

সেলিম সিদ্ধান্ত নিল, সে আর অপরাধ করবে না। কিন্তু পুরানো জীবন থেকে বেরিয়ে আসা এত সহজ ছিল না। তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ ছিল, পুলিশ তার খোঁজে ছিল। তবুও, সে পালিয়ে গিয়ে নতুন জীবনের জন্য চেষ্টা করতে থাকে।

সে একটি ছোট শহরে গিয়ে নিজেকে আড়াল করে। নতুন করে শুরু করার জন্য সেখানে একটি দোকানে কাজ শুরু করে। এই কাজগুলো তার জন্য নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে আসে। যদিও তার ভিতরের অপরাধ প্রবণতা মাঝে মাঝে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করে, তবুও সে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিল নিজেকে পরিবর্তনের পথে নিয়ে আসতে।

কয়েক বছর পর, সেলিম একটি সমাজসেবী সংগঠনের সাথে কাজ শুরু করে। এই সংগঠনটি দরিদ্র শিশুদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য কাজ করত। সেলিমের জীবনে এটি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। তার নিজের জীবনের কষ্ট আর বঞ্চনার কথা ভেবে, সে সেসব শিশুদের সাহায্য করতে চেয়েছিল, যেন তাদেরও তার মতো কষ্ট পেতে না হয়।

সংগঠনের কাজের মাধ্যমে সেলিম ধীরে ধীরে সমাজে নিজের একটি জায়গা করে নেয়। সে তার অভিজ্ঞতা আর পরিবর্তনের গল্প অন্যদের সাথে শেয়ার করে, যেটা অনেককেই অনুপ্রাণিত করে। তার জীবনের গল্প শুনে অনেকেই তাদের জীবনেও পরিবর্তন আনার চেষ্টা করে।

একদিন, সেলিম তার পুরানো এলাকার দিকে ফিরে যায়। সে দেখতে পায়, তার পুরানো বন্ধুরা এখনও অপরাধে লিপ্ত আছে। তাদের মধ্যে একজনকে সেলিমের পরিবর্তনের গল্প শোনায়। প্রথমে কেউই তার কথা বিশ্বাস করতে চায় না, কিন্তু ধীরে ধীরে তার আন্তরিকতা ও পরিশ্রম দেখে অনেকেই অনুপ্রাণিত হয়।

সেলিম তার পুরানো গ্যাং-এর কিছু সদস্যকে পরিবর্তনের পথে নিয়ে আসে। সে তাদের জন্য একটি পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপন করে, যেখানে তারা নতুন জীবনের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারে। এই কেন্দ্রটি হয়ে ওঠে তার জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য।

সমাপ্তি
সেলিমের জীবন হল পরিবর্তনের প্রতীক। তার জীবনের এই পরিবর্তন আমাদের দেখায়, কিভাবে একজন মানুষ নিজের ইচ্ছাশক্তি ও আন্তরিকতা দিয়ে সবকিছু পরিবর্তন করতে পারে। তার গল্প আমাদের শিখায়, যে সমাজের বঞ্চনা ও অবহেলার মধ্যেও একজন মানুষ আলো খুঁজে পেতে পারে।

সেলিম এখন সমাজের একজন সম্মানিত ব্যক্তি। তার কাজ ও গল্প মানুষের মনে নতুন আশার সঞ্চার করে। তার জীবন একটি উদাহরণ হয়ে থেকে যায়, যে কেউই চাইলেই খারাপ থেকে ভাল মানুষ হয়ে উঠতে পারে, যদি তার মধ্যে সত্যিকারের ইচ্ছা আর পরিশ্রম থাকে।