Posts

গল্প

অভিশপ্ত রাজপ্রাসাদ – চূড়ান্ত রহস্য

January 30, 2025

Raisul Islam Rownok

34
View

ছায়ানগর নামে একটি গ্রাম ছিল। ছোট্ট এই গ্রামে লোকসংখ্যা খুবই কম। গ্রামের এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে ছিল এক পুরোনো রাজপ্রাসাদ, যা সবাই "অভিশপ্ত রাজপ্রাসাদ" বলে চিনত। কেন অভিশপ্ত? সেটা কিছুক্ষণ পরেই বুঝতে পারবে।

অতীতের ভয়াবহতা

অনেকদিন আগের কথা, যখন এই প্রাসাদ ছিল জাঁকজমকের প্রতীক। রাজা এখানেই বসবাস করতেন। কিন্তু একদিন এক ভয়াবহ আগুনে সব শেষ হয়ে যায়। রাজাসহ প্রাসাদের অনেক বাসিন্দা পুড়ে মারা যায়, আর সেই ঘটনার পর থেকে রাজপ্রাসাদটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে।

অনেক বছর কেটে যায়। একদিন কিছু বিদেশি একটি সিনেমার শুটিংয়ের জন্য প্রাসাদে আসে। কিন্তু শুটিং চলাকালীন অদ্ভুতভাবে তারা সবাই এক রহস্যময় রোগে আক্রান্ত হয় এবং তড়িঘড়ি করে গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। এরপর থেকে যে-ই রাজপ্রাসাদে যেত, সে-ও একই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যেত। ধীরে ধীরে সেই রোগ গ্রামে মহামারি হয়ে ছড়িয়ে পড়ে।

ভীতসন্ত্রস্ত গ্রামবাসী আশপাশের গ্রাম থেকে ওঝাদের ডেকে আনে। ওঝারা দাবি করে, রাজপ্রাসাদটি অভিশপ্ত। আগুনে পুড়ে মারা যারা মারা গিয়েছে তাদের আত্মারা এখনো এখানে ঘুরে বেড়ায়। যে-ই সেখানে যাবে, সে এবং তার পরিবার মৃত্যুর মুখে পড়বে। এরপর থেকে রাজপ্রাসাদের ধারে-কাছেও কেউ যেত না।

কিন্তু রাত হলে, প্রাসাদ থেকে ভেসে আসত অদ্ভুত সব শব্দ। , আর মাঝে মাঝে অদ্ভুত আলোর ঝলকানি! এতে গ্রামের মানুষের ভয় আরও বেড়ে যায়।

তিন বন্ধুর রহস্য-ভেদ

অনেক বছর পর একদিন তিনজন শহরের ছেলে ছায়ানগরে আসে—মুন্না, রনি আর রাফি। মুন্না ও রনি ছিল দুঃসাহসী, কিন্তু রাফি ছিল ভীতু। তারা গ্রামের মানুষের কাছ থেকে রাজপ্রাসাদের গল্প শুনে আগ্রহী হয়ে ওঠে। তারা ঠিক করল, যেভাবেই হোক, সেখানে যাবে।

গ্রামের মানুষ অনেক বুঝিয়ে তাদের আটকানোর চেষ্টা করল, কিন্তু মুন্না ও রনি কারও কথা শুনল না। ভয় পেয়ে রাফি রাজি হয়নি, সে বাইরে অপেক্ষা করতে লাগল।

প্রাসাদে ঢুকতেই চারপাশে অসংখ্য বাদুড় উড়ে গেল, বাতাসে ভেসে এল এক ধরনের বিশ্রী গন্ধ। মেঝেতে পুরু বাদুড়ের মল জমে ছিল। প্রাসাদের ভেতর অন্ধকার, ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকা পুরোনো আসবাবপত্র আর দেয়ালে লেগে থাকা কিছুর দাগ তাদের গা ছমছম করিয়ে তুলল।

হঠাৎ তারা অনুভব করল, যেন কেউ ফিসফিস করে কথা বলছে!

রনি কাঁপা গলায় বলল, "মুন্না, তুই কিছু শুনেছিস?"

মুন্না ফিসফিস করে জবাব দিল, "হ্যাঁ… কে যেন বলছে… 'এখান থেকে চলে যা…'"

এমন সময় হঠাৎ একটা জানালা নিজে থেকেই ধীরে ধীরে খুলে গেল! সঙ্গে সঙ্গে প্রচণ্ড বাতাস বয়ে গেল ঘরজুড়ে। আতঙ্কে তারা দ্রুত প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে এলো।

কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই মুন্না ও রনি মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ে।

রাফি ভয় পেয়ে তাদের হাসপাতালে নিয়ে গেল। ডাক্তাররা পরীক্ষা করে জানাল, তারা "নিপা" নামের এক ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, যা বাদুড়ের মাধ্যমে ছড়ায়।

প্রকৃত সত্য উন্মোচন

কিছুদিন পর তারা সুস্থ হয়ে যায়। এবার তারা বুঝতে পারে, আসলে প্রাসাদটি অভিশপ্ত নয়। তারা গ্রামের মানুষদের বোঝানোর জন্য আবার সেখানে ফিরে যায়, তবে এবার তারা মাস্ক ও প্রতিরক্ষামূলক পোশাক পরে।

এইবার তারা ভয় পায়নি। বরং, তারা খুঁজে বের করল—রাতে অদ্ভুত শব্দ আসত বাতাসে উড়তে থাকা বাদুড়ড়ের কারণে। কারণ বাদুর মূলত রাতে ঘোরাফেরা করে।জানালাগুলো এমনভাবে ভাঙা ছিল যে বাতাস ঢুকলে সেগুলো আপনা থেকেই খুলে যেত।

আর যে আলোর ঝলকানি দেখা যেত? সেটা ছিল প্রাসাদের ভেতরে ফসফরাস ধাতুর উপস্থিতির কারণে, যা রাতে একধরনের জ্বলা আলো সৃষ্টি করত।

মুন্না ও রনি গ্রামের মানুষদের বোঝাল, এখানে কোনো আত্মা নেই। সব ছিল মানুষের ভুল ধারণা আর ভয়।

কিন্তু গল্পের এখানেই শেষ নয়।

প্রাসাদে ঘুরতে ঘুরতে তারা একটা গোপন কুঠুরি খুঁজে পেল! সেখানে কিছু পুরোনো কাগজ আর ধাতব বাক্স রাখা ছিল। কৌতূহলী হয়ে বাক্স খুলতেই তাদের চোখ বিস্ময়ে ছানাবড়া হয়ে গেল…

বাক্সভর্তি সোনার মোহর!

মুন্না উত্তেজিত হয়ে বলল, "তাহলে এই প্রাসাদ শুধু অভিশপ্ত বলে ভয় পেত না, বরং এখানে গুপ্তধনও ছিল!"

তারা বুঝতে পারল, হয়তো বহু বছর আগে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে বাদুড়দের এখানে এনে রেখেছিল, যাতে কেউ এখানে না আসে এবং গুপ্তধন চিরদিনের জন্য হারিয়ে যায়।

এই আবিষ্কার পুরো গ্রামের ভাগ্য বদলে দিল।

সরকারকে জানানো হলে গবেষকরা এসে জায়গাটি নিরাপদ করল। রাজপ্রাসাদ থেকে বাদুড়দের সরানো হলো, ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানো হলো, আর গুপ্তধন উদ্ধার করা হলো।

শেষের পরিণতি

একসময় যে প্রাসাদকে সবাই অভিশপ্ত বলে ভয় পেত, আজ সেটি হয়ে উঠল ইতিহাসের অংশ। পর্যটকরা সেখানে আসতে শুরু করল, এবং ছায়ানগর একটি নতুন পরিচিতি পেল—একটি রহস্যময় গ্রাম, যেখানে একসময় 'অভিশপ্ত' রাজপ্রাসাদ ছিল, কিন্তু এখন তা হয়ে উঠেছে ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান।

আর এই সবই সম্ভব হয়েছিল তিনজন কিশোরের কৌতূহল, সাহস, আর বুদ্ধিমত্তার কারণে।

Comments

    Please login to post comment. Login