Posts

চিন্তা

জুলাই ৩৬ বিশ্ববিদ্যালয়!

January 30, 2025

ফারদিন ফেরদৌস

40
View

রাজধানীর সরকারি সাতটি বড় কলেজের জন্য যে পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় করার পরিকল্পনা করছে সরকার, সেটির নাম হতে পারে ‘জুলাই ৩৬ বিশ্ববিদ্যালয়’। এই নাম প্রস্তাব করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজের নেতৃত্বাধীন কমিটি। শিক্ষার্থীরা চাইলে এই নামটি গ্রহণ করা হতে পারে।

আজ বৃহস্পতিবার ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজসহ এ-সংক্রান্ত কমিটির তিন সদস্য শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানেই এই নাম প্রস্তাব করা হয়।

এ বিষয়ে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ প্রথম আলোকে বলেছেন, কয়েকটি নামের মধ্যে ‘জুলাই ৩৬ বিশ্ববিদ্যালয়’ নামটি তাঁদের বিশেষভাবে আকৃষ্ট করেছে। শিক্ষা উপদেষ্টাও এই নামের প্রশংসা করেছেন। তবে ছাত্ররা যেটা বলবে, সেটাই চূড়ান্ত হবে।

প্রস্তাবক যে জুলাই স্পিরিট সেল করে নিজের আখের গোছানোর প্ল্যান করেছেন এটা নিশ্চয়ই প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার বুঝবে। মানে এই দেশে চেতনার বাণিজ্যের ঘোর সহসা কাটবে না। বিগত সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে সকল কর্মকান্ড সিদ্ধ করে নিয়েছে। এখন আবার শুরু হয়েছে জুলাই চেতনা।

বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক ভ্যালুজ বহন করতে হয়। বৈশ্বিক মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হতে হয়। বিদেশি ডেলিগেটদেরকে বারবার বুঝিয়ে বলতে হবে 'জুলাইয়ের ৩৬ তারিখ' বিষয়টা কী? জুলাই মাস দূরে থাক, এমনকি গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার, চান্দ্র মাস, হিজরি সন কিংবা বাংলা পঞ্জিকার কোনো মাসই ৩৬ দিনে হয় না! এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যখন বিদেশে পড়াশোনা ও চাকরিবাকরি করতে যাবেন তাদেরকেও জুলাই ৩৬ নাম নিয়ে বিস্তর প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে। সবাই তো আর আমাদের আন্দোলনের স্পিরিট বুঝবে না। কেউ কেউ এই বিষয় নিয়ে হাসি তামাশাও করতে পারে।

এমনকি পরবর্তী নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলেও এই নাম তারা রাখবে না। সবচেয়ে বড় কথা আপনি ৭ কলেজকে আনকোরা বিশ্ববিদ্যালয় দেবেন, তাহলে দেবেন্দ্র কলেজ, আনন্দমোহন কলেজ, ব্রজমোহন কলেজ, ভিক্টোরিয়া কলেজ, কারমাইকেল কলেজ, সা'দত কলেজ তারা কি ঘাসে মুখ দিয়ে বসে থাকবে?

ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজে শিক্ষার্থী প্রায় দুই লাখ। শিক্ষক এক হাজারের বেশি। বাকি কলেজগুলোতে আরো বেশি শিক্ষক, অনেক বেশি শিক্ষার্থী।

একদেশে দুই আইন কেমনে চালাবেন?
আন্দোলন করছে বলে কাউকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বানিয়ে দেবেন। আর আন্দোলন শুরু করে নাই বলে অন্য কলেজকে যার যার জায়গায় রেখে দেবেন এই দ্বিচারিতা সভ্য সমাজে অচল। এমনটা সর্বজনবিদিত হবে না কস্মিনকালেও।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে শক্তিশালী করে, দেশের বিভাগ অনুযায়ী ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের আঞ্চলিক শাখা স্থাপন করুন। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সব কলেজকে রাখাটাই হবে যুক্তিযুক্ত। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আঞ্চলিক শাখাগুলোর অঞ্চলভিত্তিক নাম হতে পারে অথবা জাতীয়ভাবে অবিসংবাদিত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বের নামে হতে পারে। যেমন রংপুর অঞ্চলের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হতে পারে শহিদ আবু সাঈদ বিশ্ববিদ্যালয়।

অন্যথায় ৭ কলেজ সংকট কাটবে না বরং আরো ঘনীভূত হবে। সরকার যদি ৭ কলেজকে আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় বানানোর সিদ্ধান্তে অনড় থাকে তাহলে খুব সহসাই হয়ত আমরা দেখব অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী কলেজও বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে রাস্তায় নেমেছে। সেখানকার শিক্ষার্থীরাও অনশন করছে।

এই দেশে এখন এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে, সব দাবি-দাওয়া এসে যেন এক মোহনায় মিলিত হয়েছে।
চাইলেই যেন সবকিছু মুখের সামনে পাওয়া যাচ্ছে।

লেখক: সাংবাদিক
৩০ জানুয়ারি ২০২৫

Comments

    Please login to post comment. Login