Posts

চিন্তা

মানুষ ও নারী

January 31, 2025

Abu Saium Shuhan

146
View

 যুগের ধর্ম এই-

পীড়ন করিলে সে পীড়ন এসে পীড়া দিবে তোমাকেই।                 –কাজী নজরুল ইসলাম

      মানুষ স্বপ্রণোদিত হয়ে নিজেকে ‘সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব’ হিসেবে বিবেচিত হওয়ার দাবিটি চলমান কর্মকাণ্ড এবং ভবিষ্যৎ নীতি নির্ধারণের উপর ভিত্তি করে দিন দিন নিতান্তই অমূলক হয়ে পড়ছে।কিন্তু 'X' ক্রোমোজোমের উপর ‘Y’ ক্রোমোজোমের শ্রেষ্ঠত্বের দাবিটি বিশেষত বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে প্রকট থেকে প্রকটতর হয়ে যাচ্ছে। প্রাসঙ্গিক আলোচনার পূর্বে ‘মানুষ’ ধারণাটি পরিষ্কার করে নেওয়া অতি যুক্তিযুক্ত। বিবর্তনের ধারায় জন্ম নেওয়া মানুষ সেই শুরু থেকেই আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সংঘর্ষ, যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত ছিল। বর্তমান সময়ের সম্মুখ বর্বর যুদ্ধ না থাকলেও একপ্রকার স্নায়ু যুদ্ধ চলমান যার উদ্দেশ্য একই ধরে নেয়া যায়। তাই সর্বপ্রথম মানুষের অধিকার অর্থাৎ মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়া অত্যন্ত জরুরী। আধুনিক যুগে তাতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে নারীর অধিকার। কেন নারীকে তার অধিকার প্রতিষ্ঠায় নতুন দ্বার উন্মোচন করতে হলো? কারণ হিসেবে একটি দিকই সামনে আসে তা হলো নারীকে মানুষ হিসেবে মনে করার প্রয়োজনীয় সদিচ্ছার অভাব। অতীত ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায় পৃথিবীর ইতিহাসকে এক দিক দিয়ে বিবেচনা করলে নারী ইতিহাসকে অন্য দিক দিয়ে উপলব্ধি করতে হয়। কারণ তাকে সংগ্রাম করতে হয়েছে সকল নিপীযড়নের বিরুদ্ধে, নিজেকে মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠার লড়াই, একই সাথে ঘরের ভিতরে এবং বাইরে পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সমসাময়িক সময়ে নারী অধিকার বিষয়টি অতি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। গত কয়েকদিন আগে নারীদের ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে ‘বিশেষ গোষ্ঠীর’ অতর্কিত হামলায় ফুটবল খেলা জনসম্মুখে প্রদর্শিত না হতে পারার বিষয়টি বিশেষ উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে যা নিঃসন্দেহে জুলাই ২৪শে বৈষমবিরোধী আন্দোলনের স্পষ্টতই পরিপন্থী। এই ঘটনাকে সমুদ্রের এক ফোঁটা জলের সঙ্গে তুলনা করা চলে। খেলার জগতে সাম্প্রতিক সময়ে মেয়েদের বিশেষ সাফল্য অর্জিত হলেও বেতন বৈষম্য, লজিস্টিকসের ঘাটতি সহ নানা প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছে তারা। বাংলাদেশে অন্যতম রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পের প্রায় ৮০ভাগ কর্মচারী নারী হলেও উক্ত চাকরিটি করতে গিয়ে নারীরা সমাজের বিভিন্ন স্তরে নানাভাবে হেনস্থা সম্মুখীন হচ্ছে। এরপর সর্বোচ্চ বৈষম্যের শিকার হয় হয় সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকার প্রতিষ্ঠায়। বাংলাদেশ একটি ইসলামিক রাষ্ট্র না হওয়া সত্ত্বেও নারী-পুরুষের সম্পত্তি ভাগের ক্ষেত্রে প্রচলিত ইসলামিক আইনের প্রয়োগে বর্তমান আধুনিক সমাজে ন্যায্যতার স্পষ্ট লঙ্ঘন।

      জুলাই ২৪ এর আন্দোলন আমাদের মধ্যে যে চেতনা, শক্তির সঞ্চয় করেছে, সে শক্তির বলে বলীয়ান হয়ে আমাদের সকল অনিশ্চয়তা, অন্যায় দূর করতে হবে। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নারী-পুরুষ সকলে তাদের যোগ্যতার ভিত্তিতে সঠিক জায়গায় আসীন হবে। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা হওয়ার পরই লৈঙ্গিক পরিচয় কে বড় করে নারী হিসেবে তাদের প্রতি যে বৈষম্য করা হয় সেগুলোর প্রতি সকল মানুষের তীক্ষ্ণ নজর দিতে হবে। সকল ধরনের বেতন বৈষম্য পরিহার করতে হবে। সম্পত্তি ভাগের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আরও নিশ্চিত করতে হবে তাদের পোশাকের স্বাধীনতা। নারীকে নারীর মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার দিতে হবে। এমন একটি অর্থনৈতিক কাঠামো গ্রহণ করতে হবে যাতে করে প্রত্যেক নারী তাদের নিজ অর্থনৈতিক মুক্তির পথ নিজেরাই খুঁজে নিতে পারে। এভাবে গণতান্ত্রিক অধিকারকে সুসংহত করে, জলবায়ু দুর্যোগ মোকাবেলা করে, অর্থনৈতিক, সামাজিক, পারিবারিক, সাংস্কৃতিক প্রতিবন্ধকতা জয় করে বাংলাদেশে নারীরা হয়ে উঠবে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী নারী।

Comments

    Please login to post comment. Login