প্রেম ও প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশ তাঁর বনলতা সেন কবিতায় কী দারুণভাবেই না বলেছেন,
সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন
সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;
পৃথিবীর সব রং নিভে গেলে পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন
তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল;
সব পাখি ঘরে আসে— সব নদী— ফুরায় এ-জীবনের সব লেনদেন;
থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।
দিনাবসানে সব রঙ আঁধারে বিলীন হওমার পরে কবির যখন সময় হয় দু-দণ্ড শান্তি দেয়া বনলতা সেনের মুখোমুখি বসবার। যেসময় জোনাকির রঙ ঝিলমিল গল্পরা পাণ্ডুলিপির আয়োজন করে; ঠিক সেসময় টাইম মেশিনে অতীতে ফিরে আমাদের পুলিশেরা কী বলে দেখুন?
বই প্রকাশের আগেই পাণ্ডুলিপি যাচাই করুক বাংলা একাডেমি, চায় পুলিশ। এটা তো খুব ভালো প্রস্তাব।
'বাংলা একাডেমি ও পুলিশের ইতিহাস: ফ্যাসিজম সবিস্তার সরেজমিন' -শীর্ষক বই লিখে ফেলুন। আপনার বই একাডেমিই প্রকাশ করে দেবে। ভালো স্পন্সরশিপ করবে খোদ পুলিশ বিভাগ। লটারি ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে নেক্সট একাডেমি পুরস্কার আপনারই। ভাবতে পারছি পুরস্কারের ওই তালিকা নিয়ে কোথাও কোনো কথা উঠবে না। উঠতে পারেই না। হ!
খবর প্রথম আলোর...👇
অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে—এমন কনটেন্ট ঠেকাতে মেলায় বই প্রকাশের আগেই পাণ্ডুলিপি যাচাই করতে বাংলা একাডেমিকে বলেছে পুলিশ।
এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, এর আগে বইয়ের কনটেন্ট নিয়ে মেলায় সমস্যা হয়েছে, এমন পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশের কোনো উদ্যোগ আছে কি না? জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘আমরা (বাংলা একাডেমিকে) রিকোয়েস্ট করেছি, এ রকম কোনো বই যেন মেলায় না আসে, যেখানে উসকানিমূলক কথা বা লেখা আছে। এটা যেন ওনারা স্ক্যানিং করেন, ভেটিং করে স্টলে উপস্থাপন করেন। আমি আশা করি, তাঁরা তাঁদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবেন।’
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘আমরা এবার বাংলা একাডেমিকে সাজেস্ট করছি, আগামীতে নতুন যে বইগুলো প্রকাশিত হবে, তার পাণ্ডুলিপি আগেই যেন বাংলা একাডেমিতে জমা দেওয়া হয়। তারা এটা যাচাই-বাছাই করবে, পড়ে দেখবে…। আশা করি আগামী বছর থেকে এটা আমরা করাইতে পারব বাংলা একাডেমিকে দিয়ে, বই প্রকাশের আগে পাণ্ডুলিপি তাদের দিতে হবে। তারা অনুমতি দিলেই সেটা শুধু প্রকাশ হবে।’
মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তচিন্তা আটকে দেয়া এবং সরকার বিরোধিতাকে নিয়ন্ত্রণের ম্যাকানিজম বানানোটা Despotic গভমেন্টের কাজ। আপনারা না বৈষম্যবিরোধীদের ম্যান্ডেট নিয়ে দেশ চালাচ্ছেন? তাহলে কথাবার্তায় এমন হার্ডলাইনার কনজারভেটিভ হয়ে যাচ্ছেন কেন? bigotry, extremism, radicalism, illiteracy, superstition, narrowness, counterculture, hatred, প্রভৃতিকে ভয় পান;
free thinking বা open mind কে কিছুতেই নয়!
জীবনানন্দকে তাঁর মতো আনন্দে থাকতে দিন।
খামোখা বিরক্ত করবেন না প্লিজ।🫵
লেখক: সাংবাদিক
৩১ জানুয়ারি ২০২৫