Posts

চিন্তা

ক্ষমতায় বসলে সবাই কেন রাবণ হয়ে যায়!

February 2, 2025

ফারদিন ফেরদৌস

48
View



জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বহু রক্তের বিনিময়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করবার পরই আমরা ধারণা করেছিলাম, ক্ষমতার বলয়ে থাকা ব্যক্তিরা শহীদ ও আহতদের আর খবর নেবেন না। শহীদ পরিবার কিছুই পাবে না। আহতদের দিকে আর কেউ ফিরে তাকাবে না। বস্তুত আমাদের ধারণা সত্যি হয়েছে। 

আন্দোলনের ৬ মাসের মধ্যে উপেক্ষিত মানুষদেরকে রাস্তায় নামতে হচ্ছে। দাবি আদায়ে অনশনের মতো কর্মসূচিতে যেতে হচ্ছে। অথচ যাদের অমূল্য জীবন ও অঙ্গহানির ওপর দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার এসেছে, সেই নিপীড়িত মানুষের অগ্রাধিকার থাকবার কথা ছিল সবার আগে। দেশে কতকিছুই হচ্ছে! কত স্ট্যাটাস হাতবদল হচ্ছে। কতজনে কতকিছুই না পাচ্ছে! এমনকি অবসর থেকে ধরে এনে পছন্দের অনেককেই ডাবল বেতনে চাকরিবাকরি দেয়া হচ্ছে। পাচ্ছে না কেবল ক্ষমতা বদলে দেয়া প্রত্যক্ষ নির্যাতনের শিকার সম্মুখসারির মানুষেরা। কী বিস্ময়কর ব্যাপার! 

এই দেশে ক্ষমতায় গিয়ে প্রায় সবাই ক্ষমতা কাঠামো বদলে দেয়া বীরদের বেমালুম ভুলে যায়। নিজেদের ছাড়া আর কাউকেই চেনে না। নিজেদের আখের গোছানো ও ক্ষমতার সময়সীমা বাড়ানোর প্রাণপণ পদ্ধতির পেছনে অবিরাম ছোটা ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারে না। এটিই বুঝি আমাদের বাঙালির চিরায়ত রক্তের দোষ। 

প্রথম আলো আজকের খবরে জানাচ্ছে, জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের পরিবারগুলোর কোনো খোঁজ অন্তর্বর্তী সরকার নিচ্ছে না, এমন অভিযোগ এনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিবারগুলোর একদল সদস্য। তাঁরা বলছেন, অনেকের পরিবার মানবেতর জীবন পার করছে। অন্তর্বর্তী সরকার তাঁদের পুনর্বাসনে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। এমনকি হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের ক্ষেত্রে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। শহীদদের এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। দ্রুততম সময়ে এসব দাবি পূরণ না হলে রাজপথে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। 

গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেওয়া শহীদ পরিবারের সদস্যরা এ কথাগুলো বলেছেন। সেখানে বলা হয়, দাবি মেনে নেওয়ার বিষয়ে ৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শহীদ পরিবারগুলোর সদস্যদের সঙ্গে সরকার বৈঠক না করলে রাজপথে অবস্থান ও অনশন কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে। ৪ ফেব্রুয়ারি এই ঘোষণা আসবে। সংবাদ সম্মেলনের শিরোনাম ছিল, ‘প্রতিটি হত্যার আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা, শহীদ পরিবারের ন্যায্য দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সংবাদ সম্মেলন।’ 

অথচ যাদের প্রাণের বিনিময়ে মাফিয়া রাজনীতির বদল ঘটেছে। যাদের রক্তের বিনিময়ে নতুন বাংলাদেশ এসেছে বলে দাবি করা হচ্ছে, সেই তাদের জন্য নানামুখী কর্মসূচি ও ফাণ্ডিং এর কথা বলা হয়েছিল। বরাদ্দের কথা জানানো হয়েছিল। মাত্র ৬ মাসেই সব কেমন চুপসে গেল। মানবতা থমকে গিয়ে অপ রাজনীতিটাই আবার জিইয়ে উঠল। এই দেশ থেকে Hegemony ও despotism আর কবে দূর হবে? গণ মানুষ কবে আর তাদের আরাধ্য অধিকার ফিরে পাবে? 

আমরা জানতে চাই জুলাই ফাউন্ডেশনের অর্থকড়ি কোথায় গেল? কেন নির্মম নিপীড়নের শিকার মানুষকে রাস্তায় নেমে আবার চোখের জল ফেলতে হবে? কেন তাঁদেরকে কাঁদতে হবে? কেন তাঁদের দুঃখের শেষ হবে না? 

যাদের সর্বস্ব ত্যাগে আপনারা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা পদ-পদবী নিচ্ছেন, নিজেদের অর্থনৈতিক শক্তিকে নতুন ভিত্তি দিচ্ছেন, মনের মতো tax মওকুফ করিয়ে নিচ্ছেন, মামলা থেকে মুক্তি পাচ্ছেন, দামি গাড়িতে ঘুরছেন, রাষ্ট্রীয় প্রটোকল নিচ্ছেন, দামি পার্কে‌ গিয়ে বিয়েশাদি করছেন, নতুন দল গড়ে দেশের একচ্ছত্র ও একচেটিয়া ক্ষমতার অধিকারী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন, দেশনায়ক খেতাব নিচ্ছেন; সেই‌ নির্মম নিষ্পেষণের শিকার গণ মানুষকে অসহায় অবস্থায় রাস্তায় নামতে দেখে আপনাদের ন্যূনতম লজ্জাবোধ হচ্ছে না? দায় মনে করছেন না? 

আমরা কিন্তু মরমে মরে যাচ্ছি। এমনটা কেন হবে? শরীরে বুলেটের আঁচড় খেয়ে দেখেছেন কখনো? এমনকি ফুলের সামান্য টোকাও? নাহ্! কিছুই খাননি আপনারা। শহীদ আবু সাঈদ ও মীর মুগ্ধরা অকাতরে নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিয়ে আপনাদের জন্য সোনার চামচ এনে দিয়েছে। ওটা মুখে নিয়েই আরাম-আয়েশে শান-সৌকতে জগতব্যাপী ঘুরতে থাকুন। 

লেখক: সাংবাদিক
২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
 

Comments

    Please login to post comment. Login