Posts

গল্প

গেষ্ট হাউজের ভূত

February 2, 2025

Khan Muhammad Wasiq Aniq

29
View

গেস্ট হাউসের ভূত

পরিচিতি
রফিক সাহেব একজন পাকা ব্যবসায়ী, কিন্তু জীবনে একটু রোমাঞ্চ দরকার বলে মাঝে মাঝে তিনি ভ্রমণে বের হন। এবার তিনি ঠিক করলেন, শহরের কোলাহল থেকে দূরে একটা ছোট্ট গ্রামে গিয়ে কয়েকদিন থাকবেন। এক বন্ধুর পরামর্শে তিনি ‘শ্যামলী গেস্ট হাউস’ নামের একটা পুরনো রিসোর্টে উঠলেন।

আগমনী দৃশ্য
গেস্ট হাউসে ঢুকতেই কেয়ারটেকার কুদ্দুস মিয়া একগাল হাসি দিয়ে বললেন,
— “স্যার, আপনি ভাগ্যবান, এই সিজনে তেমন কেউ আসে না, পুরো গেস্ট হাউসটা একদম ফাঁকা। আপনি নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন।”

রফিক সাহেব একটু আশ্চর্য হলেন। পুরো রিসোর্ট ফাঁকা! ব্যাপারটা একটু অদ্ভুতই লাগল। তবে যেহেতু তিনি অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করেন, তাই ব্যাপারটা উপভোগই করছিলেন।

অদ্ভুত রাত
রাতের খাবার খেয়ে তিনি রুমে ফিরে এলেন। মোবাইলের নেটওয়ার্ক নেই, টিভিও ঠিকমতো চলছে না। বাইরে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক আর মাঝে মাঝে কুকুরের আওয়াজ ছাড়া আর কিছুই শোনা যাচ্ছে না।

হঠাৎ জানালার পর্দা একঝটকায় উড়ে গেল। রফিক সাহেব চমকে উঠে দেখলেন, কেউ নেই। এরপরই বাথরুমের শাওয়ার থেকে হঠাৎ পানি পড়া শুরু হলো! তিনি ধীরে ধীরে বাথরুমের দিকে এগিয়ে গেলেন। কিন্তু দরজা খুলতেই পানি পড়া বন্ধ হয়ে গেল।

তিনি ঘুমানোর চেষ্টা করলেন, কিন্তু বারবার মনে হচ্ছিল, কেউ যেন ঘরের মধ্যে ধীর পায়ে হাঁটছে।

ভূতের আবির্ভাব
হঠাৎ ফিসফিসানো একটা শব্দ কানে এলো,
— “আমি… আমি এই ঘরের পুরনো বাসিন্দা…”

রফিক সাহেব ভয়ে গলা শুকিয়ে গেল! বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠে পড়লেন। দরজার দিকে দৌড়াতে যাবেন, তখনই দেখলেন জানালার পাশ দিয়ে সাদা একটা অবয়ব হেঁটে যাচ্ছে!

তিনি কাঁপতে কাঁপতে জিজ্ঞেস করলেন,
— “কে… কে আপনি?”

ভূতের মতো অবয়বটা বলল,
— “আমি এই গেস্ট হাউসের পুরনো মালিক। আমাকে এক প্রতারক ব্যবসায়ী ধোঁকা দিয়ে সব কেড়ে নিয়েছে, এখন আমি প্রতিশোধ চাই!”

রফিক সাহেব প্রায় অজ্ঞান হয়ে পড়ার উপক্রম! তিনি ভাবতে লাগলেন, জীবনে কত লোককে ঠকিয়েছেন, কোনো ভুল করে ফেলেছেন নাকি!

সত্য উদঘাটন
ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে দরজার দিকে দৌড় দিলেন। কিন্তু ঠিক তখনই পেছন থেকে ভূত বলে উঠল,
— “স্যার! দাঁড়ান! দরজাটা বাইরে থেকে বন্ধ, আমি মজা করছিলাম!”

রফিক সাহেব থমকে গিয়ে ভালো করে তাকালেন। ঘরের কোণে দাঁড়িয়ে থাকা ভূতটা ধীরে ধীরে কাছে এলো— এ যে কেয়ারটেকার কুদ্দুস মিয়া!

— “কুদ্দুস! তুমি? এই নাটক কেন?”

কুদ্দুস মিয়া হাসতে হাসতে বলল,
— “স্যার, আপনি তো নতুন এসেছেন, তাই একটু মজা করলাম! আসলে এটা আমাদের ছোটখাটো বিনোদন। অতিথিরা এলে আমরা এভাবেই একটু ভৌতিক আবহ তৈরি করি, যাতে তারা ভয় পেয়ে বেশি দিন না থাকে। বেশি থাকলে রান্না-বান্না, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ঝামেলা বাড়ে!”

রফিক সাহেব প্রথমে একটু রেগে গেলেও পরে হো হো করে হেসে উঠলেন। তিনি বুঝতে পারলেন, এই গেস্ট হাউসের লোকজন কাজ কম করার জন্যই এই ভূতের নাটক সাজিয়েছে!

পরদিন সকালে, হাসতে হাসতে গেস্ট হাউস ছাড়লেন। তবে যাওয়ার সময় কুদ্দুস মিয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন,
— “তুমি ভূত সাজতে যতই পারদর্শী হও না কেন, আমাকে বোকা বানানো অত সহজ নয়!”

কুদ্দুস মাথা চুলকে বলল,
— “স্যার, আপনার মতো মানুষ খুব কম আসে! কিন্তু কথা দিলাম, পরেরবার আপনি এলে আসল ভূতই দেখাবো!”

এ কথা শুনে রফিক সাহেব দ্রুত গাড়িতে উঠে চলে গেলেন, মনে মনে ভাবলেন, "আবার আসব নাকি?"

Comments

    Please login to post comment. Login