
বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ফ্যাসিস্ট শাসনামলে দলটির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের মতো অবস্থার সম্মুখীন হয়। তবে বর্তমানে জামায়াত রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ সক্রিয় এবং ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এ পরিস্থিতিতে অনেকেই ধারণা করছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে জামায়াত সরকার গঠন করতে পারে।
এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন ওঠে— জামায়াত সরকার গঠন করলে বিশ্বের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক কেমন হবে?
যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক
বর্তমান বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্র অন্যতম প্রধান পরাশক্তি। তাই বাংলাদেশের মতো একটি দেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে এবং ভবিষ্যতেও রাখবে। অন্যদিকে, ভারতকে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে চাপে রাখতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা প্রয়োজন হতে পারে।
যদিও জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে মার্কিন প্রশাসনের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে, তবে অতীতে যখন আওয়ামী লীগ সরকার জামায়াতের নেতাদের গ্রেপ্তার ও ফাঁসি দিয়েছিল, তখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে কিছু প্রতিবাদ এসেছিল। তাছাড়া, জামায়াতকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশকে "কট্টর ইসলামপন্থী রাষ্ট্র" বানানোর অভিযোগ তোলা হলেও এর বাস্তবভিত্তি নেই।
তাই জামায়াত সরকার গঠন করলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভব, তবে তা সহজ হবে না।
চীনের সাথে সম্পর্ক
বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বরাবরই সুসম্পর্ক রয়েছে। চীন দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ শক্তি এবং ভারতীয় আগ্রাসন ঠেকানোর জন্য চীনের সহযোগিতা অপরিহার্য। তাই জামায়াত সরকার গঠন করলেও চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক থাকবে বলে আশা করা যায়।
ভারতকে মোকাবিলা করার কৌশল
ভারত দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে আসছে। অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারত হস্তক্ষেপ করতে পারে এবং জামায়াতের উত্থান ভারত ভালো চোখে নাও দেখাতে পারে। তাই ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি তৈরি করতে হলে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক জোরদার করা জরুরি।
পরিশেষে
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সরকার যেই গঠন করুক না কেন, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ইতিবাচক ভাবমূর্তি বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। জামায়াত সরকার গঠন করলে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারতের সাথে কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রেখে পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা করতে হবে, যাতে বাংলাদেশ জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে।