পার্ট ১: শত্রুতার অন্ধকার
ঢাকা শহর দু’ভাগে বিভক্ত— একদিকে "ব্ল্যাক স্কোয়াড", অন্যদিকে "রেড ড্রাগন"। এই দুই গ্যাং বছরের পর বছর শহরের রাজত্বের জন্য লড়াই করে যাচ্ছে।
ব্ল্যাক স্কোয়াডের দ্বিতীয় প্রধান আদিব রহমান— ঠান্ডা মাথার, বুদ্ধিমান এবং ভয়হীন এক যোদ্ধা। সে বিশ্বাস করে, দুর্বলতা মানেই মৃত্যু। অন্যদিকে, রেড ড্রাগনের অন্যতম সদস্য সায়রা খান— এক সাহসী তরুণী, যে প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছে। তার বাবা একসময় ব্ল্যাক স্কোয়াডের হাতে প্রাণ হারিয়েছিলেন, আর সেই ক্ষত সে কখনো ভুলতে পারেনি।
তারা একে অপরের শত্রু। কিংবা হয়তো কিছুটা বেশি...
পার্ট ২: অপ্রত্যাশিত মুখোমুখি
এক রাতে, ব্ল্যাক স্কোয়াডের গোপন ডেরায় হামলা চালায় রেড ড্রাগন। বন্দুকের গুলি ছুটে যায় চারপাশে, ধোঁয়ার মধ্যে শত্রুরা মুখোমুখি হয়।
তবে হঠাৎ করেই…
সায়রার সামনে এসে দাঁড়ায় আদিব। দু’জনের চোখ এক মুহূর্তের জন্য আটকে যায়।
"তুমি?!"
সময়ের স্রোত যেন পেছনে ফিরে যায়।
ছোটবেলার সেই বন্ধু, যে একসময় তার ছায়াসঙ্গী ছিল, আজ তার সামনে অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে!
সায়রার মনে পড়ে— স্কুলের মাঠে দৌড়ানো, বৃষ্টিতে কাদায় মাখামাখি হওয়া, দুঃখের দিনে একে অপরের পাশে থাকা… আর এখন? এখন তারা পরস্পরের প্রাণের শত্রু!
পার্ট ৩: স্মৃতির ছায়া
আদিবও সারা রাত ঘুমাতে পারে না।
সায়রা… সে কি সত্যিই আমার শত্রু? নাকি আমরা কেবল আমাদের পরিবারের পাপের শিকার?
ছোটবেলার দিনগুলো তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে—
সায়রা যখন ছোট্ট ছিল, একবার খেলতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিল, আর আদিব তার হাত ধরে বলেছিল, "আমি থাকলে তোমার কিছু হবে না!"
কিন্তু বাস্তবতা বদলে গেছে। এখন তারা দু'জন আলাদা পথে, আলাদা যুদ্ধে লড়ছে।
পার্ট ৪: প্রেম বনাম কর্তব্য
পরের দিন, রেড ড্রাগনের প্রধান সায়রাকে কড়া নির্দেশ দেয়—
"তুমি যদি প্রমাণ করতে চাও যে তুমি আমাদের দলের প্রতি বিশ্বস্ত, তবে আদিবকে হত্যা করো!"
সায়রার মন কেঁপে ওঠে।
অন্যদিকে, ব্ল্যাক স্কোয়াডও আদিবকে সতর্ক করে দেয়—
"যদি তুমি আমাদের শত্রুর প্রতি নরম হয়ে পড়ো, তবে তুমি আর আমাদের সদস্য নও!"
আদিব ও সায়রা বুঝতে পারে, তাদের সামনে মাত্র দুটি পথ— হয় একে অপরকে হত্যা করতে হবে, নয়তো সবকিছু ছেড়ে পালাতে হবে।
পার্ট ৫: ভালোবাসার কাছে আত্মসমর্পণ
এক রাতে, সায়রা চুপিসারে আদিবের সাথে দেখা করতে আসে।
চাঁদের আলোয় দাঁড়িয়ে থাকা আদিবের চোখে সে ভয় দেখতে পায় না, বরং এক অদ্ভুত প্রশান্তি।
"তুমি কি সত্যিই আমাকে মারতে এসেছ?"— আদিব ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে।
সায়রার চোখ ভিজে ওঠে।
"আমি কীভাবে তোমাকে মারব, আদিব? আমি তো তোমাকে আজও ভালোবাসি!"
এক মুহূর্ত নীরবতা। তারপর আদিব ধীরে ধীরে বলে,
"তাহলে আমাদের পালিয়ে যেতে হবে, সায়রা। এই যুদ্ধের কোনো শেষ নেই। আমাদের যদি বাঁচতে হয়, তাহলে এই দুনিয়া ছাড়তে হবে!"
সায়রা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।
"তুমি কি নিশ্চিত?"
"তুমি থাকলে আমি নিশ্চিত।"
পার্ট ৬: শেষ লড়াই
সায়রা ও আদিব পালানোর পরিকল্পনা করে। কিন্তু গ্যাং সদস্যরা সেটা টের পেয়ে যায়।
তারা ধরা পড়ে যায়, এবং দুই গ্যাং তাদের সামনে দাঁড় করিয়ে ফেলে।
রেড ড্রাগনের প্রধান চিৎকার করে, "সায়রা, তুমি একজন বিশ্বাসঘাতক!"
ব্ল্যাক স্কোয়াডের লিডারও চিৎকার করে ওঠে, "আদিব, তুমি আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছ!"
ঠিক তখনই, আদিব সামনে এসে বলে,
"এটা কি তোমাদের জীবন? শুধু রক্ত, প্রতিশোধ আর মৃত্যু? আমরা কি সারাজীবন শত্রু হয়েই থাকবো?"
সায়রাও বলে, "আমাদের পরিবার একসময় বন্ধু ছিল। কেন আমরা এই প্রতিহিংসার খেলায় নিজেদের শেষ করবো?"
তাদের কথাগুলো সবাইকে ভাবিয়ে তোলে। কিছু সদস্য পিছু হটে, কারণ তারাও জানে— এই শত্রুতার কোনো মানে নেই!
অবশেষে, দুই গ্যাং অস্ত্র ফেলে দেয়।
তারা বুঝতে পারে, এই যুদ্ধের অবসান হওয়া দরকার।
শত্রুতার চক্র শেষ হয়।
পার্ট ৭: নতুন জীবন
কয়েক মাস পর...
শহরের ব্যস্ত রাস্তায় এক কোণে ছোট্ট একটি ক্যাফে। জানালার পাশে বসে আছে আদিব ও সায়রা, একসঙ্গে কফির কাপ হাতে।
বাইরে সূর্য ধীরে ধীরে ডুবে যাচ্ছে, রোদ লালচে আভা ছড়িয়ে দিচ্ছে শহরের আকাশে।
সায়রা চুপচাপ জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকে। গাড়ির হর্ন, মানুষের কোলাহল— সবকিছুই স্বাভাবিক মনে হয়। অথচ কিছুদিন আগেও তাদের জীবন ছিল এক টুকরো আগুনের মধ্যে বন্দী।
সে ধীরে ধীরে বলে, "আমরা কি সত্যিই পালিয়ে বাঁচতে পেরেছি?"
আদিব তার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসে। সে জানে, এই প্রশ্নের উত্তর সহজ নয়।
তারপর সায়রার হাত ধরে বলে, "আমরা পালাইনি, সায়রা। আমরা লড়াই করেছি, জিতেছি, আর বেঁচে থাকার নতুন পথ বেছে নিয়েছি।"
সায়রার চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে। এতদিন পর যেন সত্যিকারের মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নিচ্ছে তারা।
"তাহলে এবার আমাদের গল্পটা নতুন করে শুরু করা যাক?"— সায়রা চোখে একরাশ ভালোবাসা নিয়ে বলে।
আদিব কফির কাপে ছোট্ট চুমুক দিয়ে বলে, "শুরু তো অনেক আগেই হয়ে গেছে... শুধু এবার আর বাধা থাকবে না।"
বাইরে হালকা বাতাস বইতে থাকে। সূর্যাস্তের আলোয় তাদের মুখ ঝলমল করে ওঠে।
ক্যাফের জানালার পাশে বসে থাকা দুই প্রেমিক যেন সাক্ষী হয় এক নতুন গল্পের— যেখানে শত্রুতার জায়গা নেয় ভালোবাসা, আর ভয়কে জয় করে নেয় একসাথে পথচলার অঙ্গীকার।
(শেষ)