হারানো দিনগুলোর খোঁজে
শহরটা আজকাল অচেনা লাগে অর্ণবের কাছে। রঙিন আলো, ব্যস্ত সড়ক, আর মানুষজনের কোলাহল—সবকিছু তার কাছে কেমন যেন বিস্বাদ মনে হয়। অথচ এই শহরেই কেটেছে তার শৈশব, প্রথম প্রেম, প্রথম স্বপ্ন দেখার দিনগুলো।
দশ বছর পর দেশে ফিরেছে সে। বিদেশে থাকার সময়টায় সবকিছু যেন বদলে গেছে। পুরোনো বন্ধুদের কেউ আর যোগাযোগ রাখে না, প্রিয় চায়ের দোকানটা এখন বড় কোনো ব্র্যান্ডের কফিশপ হয়ে গেছে, আর বাড়ির পাশের গলিটা এখন এতটাই অপরিচিত যে মনে হয় অন্য কোনো জায়গায় এসে পড়েছে।
অর্ণব একটা সন্ধ্যায় হাঁটতে বের হলো। উদ্দেশ্যহীনভাবে হাঁটতে হাঁটতে সে এসে দাঁড়ায় পুরোনো স্কুলের সামনে। গেটের ভেতরে উঁকি দিতেই মনে পড়ে গেল ছোটবেলার হাজারো স্মৃতি—বেঞ্চের ওপর পা তুলে বসে গল্প করা, ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ক্যানটিনে সিঙ্গারা খাওয়া, মাঠে বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলার দিনগুলো।
হঠাৎ পিছন থেকে একটা কণ্ঠ ভেসে আসে, “অর্ণব?”
সে ঘুরে দাঁড়ায়। সামনে দাঁড়িয়ে এক চেনা মুখ—শুভ! ছোটবেলার সবচেয়ে কাছের বন্ধু।
“তুই!”
দুজনের চোখে একরকম বিস্ময়। এক মুহূর্ত চুপ থেকে একসঙ্গে হাসিতে ফেটে পড়ে তারা।
শুভ বলে, “তোকে দেখে বিশ্বাসই হচ্ছে না! কতোদিন পর! কেমন আছিস রে?”
অর্ণব হাসতে হাসতে বলে, “ভালো আছি, কিন্তু তোর সাথে দেখা না হলে হয়তো এই শহরটা সত্যি ভুলে যেতাম।”
সেদিন দুজন অনেক গল্প করল। পুরোনো দিনের স্মৃতিগুলো আবার যেন জীবন্ত হয়ে উঠল। পুরোনো বন্ধুত্বের উষ্ণতা অর্ণবকে বুঝিয়ে দিল, শহরটা বদলে গেলেও কিছু সম্পর্ক কখনো পুরোনো হয় না।
শেষ রাতে বাড়ি ফেরার সময় অর্ণব মনে মনে বলল, "আমি আবার ফিরে এসেছি... আমার হারানো দিনগুলোর খোঁজে!"