শেষ ভালোবাসা
শাহাদাৎ হোসেন
রাশেদ জানত, তার জীবনে ভালোবাসা আর কোনোদিন আসবে না। প্রথম প্রেমে ভয়ংকরভাবে আঘাত পেয়েছিল সে। তারপর থেকে ভালোবাসার প্রতি এক ধরনের অনীহা জন্মেছিল। কিন্তু ভাগ্যের খেলা যে এত অদ্ভুত হতে পারে, তা সে কল্পনাও করেনি।
শীতের বিকেলে ধুলোমাখা বইয়ের দোকানে এক তরুণী এসে দাঁড়াল। মেয়েটির চোখ ছিল গভীর, যেন সেখানে হাজারো গল্প লুকিয়ে আছে। রাশেদ তখন পুরোনো বই ঘাটছিল, মেয়েটি এগিয়ে এসে বলল, “এক্সকিউজ মি, জীবনানন্দের ‘বনলতা সেন’ আছে?”
রাশেদ তাকিয়ে দেখল, মেয়েটির কণ্ঠে এক অদ্ভুত কোমলতা। সে মৃদু হেসে পুরোনো একটা বই এগিয়ে দিল। মেয়েটি আনন্দিত হয়ে বলল, “আমি রূপা, কবিতা পড়তে খুব ভালোবাসি।”
এরপর বইয়ের দোকানই হয়ে উঠল তাদের পরিচয়ের সেতু। ধীরে ধীরে রাশেদ বুঝতে পারল, তার শূন্য হৃদয়ে আবারও অনুভূতি জাগছে। কিন্তু ভয় ছিল, যদি আবারও কষ্ট পেতে হয়?
একদিন রূপা বলল, “রাশেদ, ভালোবাসা মানেই কি কষ্ট?”
রাশেদ চুপ করে থাকল। রূপা হাসল, “যদি কষ্ট পাওয়ার ভয়েই আমরা ভালোবাসা এড়িয়ে চলি, তাহলে তো জীবনের সবচেয়ে সুন্দর অনুভূতিটাই হারিয়ে ফেলব।”
সেই মুহূর্তেই রাশেদ বুঝল, ভালোবাসা আবারও তার দরজায় কড়া নাড়ছে। সে আর ভয় পেতে চায় না।
শীতের সেই সন্ধ্যায়, পুরোনো বইয়ের গন্ধে ভরা ছোট্ট দোকানে, রাশেদ নতুন করে ভালোবাসতে শিখল। এটা তার শেষ ভালোবাসা—একটা ভালোবাসা, যা আর কোনোদিন হারাবে না।
৷৷ সমাপ্ত