বাসুদেব বাবুর বয়স পঁয়ত্রিশ ছুঁই ছুঁই, পাল বংশের সর্বশেষ চেরাগ। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে ছোট দুই বোনের ভরণ পোষণের দায়িত্ব পালন করতে করতে সঠিক সময়ে নিজের প্রয়োজনীয় কাজ গুলা আর করা হয়ে উঠে নি।
দেড় বছরের চেষ্টা আর পারিবারিক জোর জবরদস্তি বা এক প্রকার ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েই একটু দেরিতে হলেও আজ বিয়ের পিঁড়িতে বসতে যাচ্ছেন বাসুদেব পাল।
গন্তব্য - শহর থেকে একটু দূরের মফস্বল শহরের শ্বশুর বাড়ি।
বিয়ের সব আনুষ্ঠানিকতা সেখানেই সম্পন্ন হবে।
বাসুদেব বাবুর অনিচ্ছাতেই খুব একটা ঢাকঢোল পিটিয়ে আর বিয়ে হচ্ছে না তাই ভাড়া করা ৩/৪ টা মাইক্রোবাসে চড়েই পাত্র পাত্রীর দিকে যাত্রা শুরু করলো।
মকবুল ড্রাইভার এই পেশায় আছেন বেশি হলে বছর চারেক হবে তবে ড্রাইভিং এর হাত এখনই বেশ পাকা। তার বাবা ছিল নবাব বাড়ির দারোয়ান, সে বাসাতেই মকবুল বড় হয়েছে - মালিকের ছেলের সাথে থাকাটাই ছিল তার একমাত্র কাজ আর সেখান থেকেই তার গাড়ি চালানোর হাতে খড়ি।
নবাব পুত্র বিদেশে চলে যাওয়ার পর নবাব সাহেব লাইসেন্সটা করে দিয়ে মকবুলকে ডেকে বললেন, -
‘বাবা, এবার তুমি নিজে করে খাও’।
অবশ্য তাতেই যথেষ্ট খুশি মকবুল সাহেব। পরনে পাঞ্জাবি মুখ ভরতি দাড়ি আর মাথায় টুপি পরা মধ্যবয়সী মানুষটা খুবই কম কথা বলেন।
যাত্রা শুরুতে মকবুল সাহেব বাসুদেব বাবুকে শুধু একটা কথাই বলেছিলেন;
- দাদা আমি তো রোজা রেখেছি, আযানটা হলে আমাকে কোথাও একটু ইফতার করার সময়টা দিবেন।
যেই কথা সেই কাজ।
বাবু সন্ধ্যা নামার কিছু আগেই রাস্তার পাশের একটা হোটেলে থামলেন – সবাই টুকটাক চা-নাস্তা খাবে আরকি।
বাসুদেব কিছু খাবার দাবার কিনে গাড়িতে বসে থাকা মকবুলের কাছে গিয়ে বললেন,
- ভাই আমিতো হিন্দু মানুষ আপনার জন্য কিছু ইফতার কিনলাম, আপনি কি নিবেন ?
মকবুল সাহেব বললেন,
- ভাই, ইফতারি তো ইফতারি এখানে হিন্দু-মুসলিম বলে কোনো কথা নাই।
পরস্পরের প্রতি সৌহার্দপূর্ণ এই আচরণের আরেক নাম হচ্ছে অসাম্প্রদায়িকতা।