Posts

গল্প

বাইজিদ বোস্তামী

February 3, 2025

Masum bhillah

50
View

মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম 

'মুরাকাবা' একটি বহুল প্রচলিত শব্দ মুসলিম সমাজের সুফিদের কাছে।সুফি সাধক আলেমরা আল্লাহর নৈকট্য লাভে  মুরাকাবাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।তাই বাইজিদ বোস্তামী রাহমাতুল্লাহি তায়ালা আলাইহিও মুরাকাবা করতেন।
একবার যখন তিনি মুরাকাবায় আল্লাহ তায়ালার ধ্যানরত অবস্থায় ছিলেন তখন ইলহাম হলো,হে বাইজিদ!তুমি মুরাকাবা ভঙ্গ করে হিন্দুদের মন্দিরে চলে যাও।এরপর তিনি মুরাকাবা ভঙ্গ করে ব্যাকুল হয়ে পড়লেন, আমি মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও মন্দিরে যাওয়ার ইলহাম হলো কেন?আল্লাহ তায়াআলা মনে হয় আমার উপর অসন্তুষ্ট হয়েছেন।এ কথা বলে অঝোর ধারায় নয়নের বাঁধ ভেঙে নীর বহিয়ে দিলেন।দুরুদ সালাম পড়ে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করতে করতে ঘুমিয়ে গেলেন।ঘুমের ভিতর আবারো ইলহাম হলো,হে বায়জিদ!তুমি হিন্দুদের মন্দিরে যাও।এটা আল্লাহ তাআলার হুকুম।
ঘুম ভঙ্গ করে ফজরের নামাজের পর তিনি আল্লাহ তায়ালার হুকুম পালনার্থে হিন্দুদের মন্দিরে চলে গেলেন।তবে মুসলিম পোশাকে নয় হিন্দুদের ধুতি পরিহিত অবস্থায় সেখানে গমন করলেন।
মন্দিরের ভিতরে সকল হিন্দুরা তাদের মূর্তি প্রতিমার পূজায় রতো ছিল।এটা দেখে তিনি ব্যথিত হয়ে ভাবতে লাগলেন আমাকে কেন এই স্থানে আসার হুকুম দেওয়া হলো? এরা তো সবাই শিরকে লিপ্ত আছে।আল্লাহ তায়ালা কি আমার উপর অসন্তুষ্ট হয়ে এই হুকুম করেছেন?? এরই মধ্যে হিন্দুদের একজন বড় সাধু বাবা আসলো।এই সাধু বাবা প্রতিবছর এ সময়ে মন্দিরে এসে তাদের ধর্ম মতে হিন্দুদের প্রতি নসিহত করে।কিন্তু আজ কোন নসিহত করতেছে না।এটা দেখে অন্যান্য হিন্দুরা বলল,কি হলো সাধু বাবা! আজকে কেন কোন নসিহত করছেন না?
সাধু বাবা বলল,আজ কিভাবে নসিহত করব!
তোমাদের মাঝে একজন মুসলিম উপস্থিত আছেন।যিনি আমাদের ধর্মের পরীক্ষা নেওয়ার জন্য এসেছেন।এ কথা শুনে অন্যান্য হিন্দুরা চরম উত্তেজিত অবস্থায় বলল,সাধু বাবা একবার শুধু আমাদেরকে দেখিয়ে দিন,আমরা তাকে শেষ করে ফেলব।
সাধু বাবা বললেন, না'তোমাদের কিছুই করতে হবে না।আমি একটি কৌশল অবলম্বন করতেছি।যদি সে এর কাছে হেরে যায় তবে তাকে এখানেই জবাই করা হবে।হে মুসলমান! তুমি কে?আমাদের সামনে আসো।অতঃপর বাইজিদ বোস্তামি রহমাতুল্লাহি তায়ালা আলাইহি মহান আল্লাহ পাকের নামের জিকির করতে করতে সামনে এগিয়ে এলেন।এটা দেখে সাধু বাবা ধমক দিয়ে বলল,তোমার কি একটুও ভয় করছে না!তুমি কিভাবে হিন্দুদের মন্দিরে এসে এভাবে তোমার ধর্মের কাজ করতে পারো।বাইজিদ বোস্তামী রহমাতুল্লাহি তা'আলা আলাইহি বললেন,আমার কোন ভয় নেই!কেননা আমকে দুনিয়ার কেউ এখানে আসার হুকুম দেয়নি!আমাকে এখানে আসার হুকুম দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা।  
সাধু বাবা বললেন,তাহলে আমি তোমাকে কিছু প্রশ্ন করব।যদি তুমি এর সঠিক উত্তর না দিতে পারো, তাহলে তোমাকে এই স্থানে জবাই করা হবে।বাইজিদ বোস্তামী রহমাতুল্লাহি তা'আলা আলাইহি বললেন,আর আমি যদি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারি তবে কি করবে?সাধু বাবা বলল,তবে আমি তোমাকে সকলের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দিতেছি!
যদি তুমি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারো তাহলে আমি সহ আমরা সকলেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করবো।
বাইজিদ বোস্তামী রহমাতুল্লাহি তা'আলা আলাইহি বললেন,ঠিক আছে তোমার প্রশ্ন করো।
সাধু বাবা বলল আমার প্রশ্নগুলো হল,
এক. ওই এক কোন এক,যেই এক কখনো কোনদিন দুই হবে না??
দুই. ওই দুই কোন দুই,যেই দুই কখনো তিন হবে না??
তিন. ওই তিন কোন তিন,যেই তিন কখনো চার হবে না??
চার. ওই চার কোন চার,যেই চার কখনো পাঁচ হবে না??
পাঁচ. ওই পাঁচ কোন পাঁচ,যেই পাঁচ কখনো ছয় হবে না??
ছয়. ওই ছয় কোন ছয়, যেই ছয় কখনো সাত হবে না??
সাত. ওই সাত কোন সাত,যেই সাত কখনো আট হবে না??
আট. ওই আট কোন আট, যেই আট কখনো নয় হবে না??
নয়. ওই নয় কোন নয়, যেই নয় কখনো দশ হবে না??
দশ.ওই দশ কোন দশ, যেই দশ পরিপূর্ণ??

এগারো. চোখের পানি নয়,নদী সমুদ্রের পানিও নয়,এমনকি পৃথিবীতে মানুষ যত প্রকার পানির কথা জানে তাও নয়,ওই পানি কোন পানি??

বারো.ব্যাঙ ঘ্যাং ঘ্যাং করে ঢেকে কি বলে??

তেরো.রাত আসলে দিন কোথায় যায়,আবার দিন আসলে রাত কোথায় যায়?

চৌদ্দ.মানুষও নয় জ্বীনো নয় এমন কি ফেরেশতাও নয়,এমন কোন জাতি, যাদের কাছে ওহি পাঠানো হয়েছে??

পনেরো. পৃথিবীতে একটি গাছ আছে,যে গাছের বারোটি ঢাল রয়েছে।প্রত্যেক ঢালে ত্রিশটি পাতা,প্রত্যেকটি পাতায় পাঁচটি মুকুল রয়েছে ,ওই গাছটি কোন গাছ??

ষোলো.পৃথিবীর সকল কবর নিজস্থানে স্থির থাকে,কিন্তু ওই কবর কোনটি যে কবর তার মধ্যে বসবাসকারীকে নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করেছে??

সতেরো.কুকুর ঘেউ ঘেউ করে কি বলে??

সাধু বাবার প্রশ্ন শেষ হলে বাইজিদ বোস্তামী রহমাতুল্লাহি তা'আলা আলাইহি বলেন,আমি প্রতিটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর জানি।তোমরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাও।সাধু বাবা বলল,যদি তুমি প্রশ্নগুলির সঠিক উত্তর জেনে থাকো তবে বলো দেখি।
বাইজিদ বোস্তামী রহমাতুল্লাহি তা'আলা আলাইহি 'সাধু বাবার' প্রশ্নের উত্তরগুলি বলতে লাগলেন,
এক.যেই এক কখনো কোনদিন দুই হবে না,ওই এক হল আমার মহান আল্লাহ তায়ালা।কখনো কোনদিন আল্লাহ দুইজন হবে না।যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেছেন, "আপনি বলুন,তিনি আল্লাহ্‌ তিনি এক"{সূরাতুল ইখলাস}

দুই.যেই দুই কখনো তিন হবে না,ওই দুই হল রাত এবং দিন।কোনদিন রাত দুইটি হবে না এবং কোনদিন দিনও দুইটি হবে না?
তিন.যেই তিন কখনো চার হবে না,ওই তিন হলো আরশ,কুরসি এবং কলম।

চার.যেই চার কখনো পাঁচ হবে না,ওই চার হল তাওরাত,যাবুর,ইনজিল এবং কুরআন মাজীদ।সবচেয়ে বড় আসমানী কিতাব চারখানা।তা কোনদিন পাঁচ হবে না।

পাঁচ. যেই পাঁচ কখনো ছয় হবে না,ওই পাঁচ হল মুসলমানদের দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ।যা কোনদিন ছয় ওয়াক্ত হবে না।

ছয়.যেই ছয় কখনো সাত হবে না,ওই ছয় হল মহান আল্লাহ তায়ালা আসমান এবং জমিনকে ছয় দিনের সৃষ্টি করেছেন।তা কোনদিন সাত হবে না।যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেছেন,
"নিশ্চয় তোমাদের  রব  আল্লাহ , যিনি আকাশমণ্ডলী  ও পৃথিবী  ছয়    দিনে  সৃষ্টি  করেছেন।"{সূরাতুল আরাফ-৫৪}

সাত.যেই সাত কখনো আট হবে না,ওই সাত হলো সাতটি আসমান।যা কোনদিন আট হবে না।যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেছেন,
"যিনি সপ্ত আস্‌মান সৃষ্টি করেছেন একটার উপর  অপরটা।"{সূরাতুল মূলক}

আট.যেই আট কখনো নয় হবে না,ওই আট হলো আল্লাহ তায়ালার আরশে সর্বসময় আট জন ফেরেশতা আল্লাহর হুকুম পালনের রতো রয়েছে।যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেন,
"সেদিন আপনার রবের আরশকে  আটজন   ফিরিশ্‌তা  তাদের   উপর    বহন করবে।"{সূরাতুল হাক্ব-১৭}

নয়.যেই নয় কখনো দশ হবে না,ওই নয় হল পৃথিবীর জমিনে নয় জন ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী ছিল এবং তারা কোনদিন সংশোধন হতো না। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেছেন,
"আর   শহরের   মধ্যে   নয়জন    লোক     ছিলো  যারা  ভূ-পৃষ্ঠে  অশান্তি  সৃষ্টি  করতো  এবং  সংশোধন  চাইতো না। " {সূরাতুল নামল-৪৮}

দশ.যেই দশ পরিপূর্ণ,ঔই দশ হল মুসলমানদের হজে ওয়াজিব ছুটে গেলে দম দিতে হয়।কিন্তু যার আর্থিক সমস্যা রয়েছে,তার জন্য করণীয় হলো হজে থাকা অবস্থায় তিনটি এবং বাড়িতে এসে সাতটি রোজা রাখা।ওই পরিপূর্ণ দশ হলো এই দশটি রোজা।যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেছেন,
"অতঃপর যার জন্যে তাও সহজলভ্য হবে না, সে হজ্জের (সময়ের) মধ্যে তিন দিন, আর হজ্জ থেকে ফেরার পর সাত দিন রোযা রাখবে। এ হলো পূর্ণ দশদিন (রোযা)। এ (শিথিলতা) তার জন্যে, যার পরিবার পরিজন মসজিদে হারামের নিকট অবস্থান করে না (অর্থাৎ যে মক্কার অধিবাসী নয়)।" {সূরাতুল বাকারা-১৯৬}

এগারো. চোখের পানি নয়,নদী সমুদ্রের পানিও নয়,এমনকি পৃথিবীতে মানুষ যত প্রকার পানির কথা জানে তাও নয়,ওই পানি হলো "ঘোড়া" দৌড়ালে তাদের শরীরে এক প্রকার ঘাম নির্গত হয়,যা দেখে পানির মতো মনে হয়।প্রশ্নে উল্লেখিত পানি হল ঘোড়ার ঘামের পানি।

বারো.ব্যাঙ ঘ্যাং ঘ্যাং করে আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করে।যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেন,
" যা কিছু আকাশমন্ডলীতে এবং যা কিছু পৃথিবীতে রয়েছে (সমস্তই) আল্লাহ্‌র পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। আর তিনি মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।"{সূরাতুল হাশর}

তেরো.রাত আসলে দিন আল্লাহর কাছে যায়,আবার দিন আসলে রাত আল্লাহর কাছে যায়।

চৌদ্দ.মানুষও নয় জ্বীনো নয় এমন কি কোনো ফেরেশতাও নয়,এমন যেই জাতির কাছে ওহি পাঠানো হয়েছে তারা হলো মৌমাছি।

পনেরো.,যে গাছের বারোটি ঢাল রয়েছে।প্রত্যেক ঢালে ত্রিশটি পাতা,প্রত্যেকটি পাতায় পাঁচটি মুকুল রয়েছে ,ওই গাছটির নাম হলো,বছর।বছরে বারো মাস,বারো মাস হল গাছের বরোটি ঢাল।প্রত্যেক ঢালে ত্রিশটি পাতা হলো,প্রতি মাসে  ত্রিশ দিন।আর প্রত্যেকটি পাতায় পাঁচটি মুকুল হলো, মুসলমানদের প্রত্যেক দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ।

ষোলো. যেই কবর তার মধ্যে বসবাসকারীকে নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করেছে,ওই কবর হলো হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালামের চল্লিশ দিন মাছের পেটের কবর।

সতেরো.কুকুর ঘেউ ঘেউ করে বলে,সাবধান মুসলমান! নামাজী হয়ে যাও।দোযখের আযাব বড়ই কঠিন।

প্রশ্নোত্তর দেওয়া শেষ হলে হিন্দু সাধু বাবা বলল, সমস্ত উত্তর সঠিক হয়েছে।অতঃপর বাইজিদ বোস্তামী রহমাতুল্লাহি তা'আলা আলাইহি বললেন,তোমরা আমাকে এতগুলো প্রশ্ন করেছ, এবার আমি তোমাদেরকে দুইটি প্রশ্ন করব,তোমরা এর উত্তর দাও।
এক.আসমানের চাবি কি??
দুই.জান্নাতের চাবি কি??
প্রশ্নদুটি শুনে সাধু বাবা চুপ করে রইলেন।এমত অবস্থায় অন্যান্য হিন্দুরা বলল সাধু বাবা,আপনি কি এর উত্তর জানেন না??সে বলল আমি জানি,কিন্তু এর উত্তর দিলে তোমরা তোমাদের ধর্মের উপর দুর্বল হয়ে পড়বে।সকল হিন্দুরা বলল কোন সমস্যা নেই আপনি এর উত্তর বলুন।অতঃপর  সাধুবাবা প্রশ্নের উত্তরে বললেন,আসমান ও জান্নাতের চাবি হলো মুসলমানদের কালিমা "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ" ﷺ
সাধু বাবার এহেনো উত্তর প্রধানের কারণে সকল হিন্দুদের মনে আরো দৃঢ় বিশ্বাস হয়ে গেল যে,মুসলমানদের ধর্মই সঠিক।তাই তারা সাধু বাবার দোয়া প্রতিশ্রুতি মোতাবেক, সাধু বাবা সহ সকল হিন্দুরা বাইজিদ বোস্তামি রাহমাতুল্লাহি তা'আলা আলাইহির কাছে মুসলমান হওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করল।তখন বাইজিদ বোস্তামী রাহমাতুল্লাহি তায়ালা আলাইহি তাদের সকলকে তওবা পড়িয়ে দ্বীনে ইসলামের দীক্ষায় দীক্ষিত করলেন।এভাবে অসংখ্য অমুসলিম হিন্দুরা বায়েজিদ বোস্তামি রাহমাতুল্লাহি তা'আলা আলাইহির হাতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে মুসলমান হয়ে গেল।এবং বাইজিদ বোস্তামি রাহমাতুল্লাহি তায়ালা আলাইহিও বুঝতে পারলেন,কেন মহান আল্লাহ তায়ালা তাকে হিন্দুদের মন্দিরে পাঠিয়েছিলেন।

Comments

    Please login to post comment. Login