Posts

গল্প

শুদ্ধ প্রেমের কষ্ট

February 4, 2025

Akash Ulal

139
View

শুদ্ধ প্রেমের কষ্ট 

(১) প্রথম দেখা: এক অলৌকিক উপস্থিতি

রুদ্র কখনোই ভাবেনি, একদিন এমন কিছু ঘটবে তার জীবনে, যা তাকে চিরকাল বদলে দেবে। সে শুধুমাত্র নিয়মিত একজন কর্মচারী ছিল, যার জীবন ছিল একঘেয়ে। কিন্তু এক বৃষ্টির দিনে, তার জীবনে এসে পড়ল তৃষা।

একদিন, রুদ্র বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে অফিস থেকে ফিরছিল। হঠাৎ, এক ছোট্ট পার্কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটা মেয়ে চোখে পড়ল—তৃষা।

তৃষা তার দিকে তাকিয়ে ছিল, এক অদ্ভুতভাবে, যেন তাকে আগেই চিনে রেখেছে।

— “আপনি ঠিক আছেন?” রুদ্র হঠাৎ এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করল।

তৃষা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল। তার চোখে যেন কোনো অদ্ভুত মায়া ছিল। তারপর মৃদু হাসল, “কিছু কিছু বৃষ্টি থামে না, জানেন?”

রুদ্র শুধু মাথা নেড়ে বলল, “হ্যাঁ, তবে কিছু বৃষ্টি হয়তো আমাদের না জানিয়ে চলে যায়।”

এই কথাগুলো রুদ্রর মনের মধ্যে বাজে, কেন জানি না, তৃষার সাথে তার পরিচয়ের কোনো গভীরতা ছিল।

(২) ভালোবাসার যন্ত্রণার অদৃশ্য ছায়া

রুদ্র তৃষাকে ভালোবাসতে শুরু করেছিল, তবে কিছু একটা ছিল—যা কখনো বোঝা যাচ্ছিল না। তৃষা হঠাৎ একদিন বলল,

— “রুদ্র, তুমি কি জানো, কিছু ভালোবাসা সময়ের সীমা ছাড়িয়ে যায়?”

রুদ্র অবাক হয়ে বলল, “কেমন মানে, তৃষা?”

তৃষা চুপ ছিল। তার চোখে এক ধরনের অদ্ভুত ম্লান ভাব ছিল। তারপর সে বলল, “তুমি কি কখনো অনুভব করেছ যে আমাদের গল্পটা খুব পুরনো, খুব পরিচিত? মনে হয়, আমি তোমাকে বহু আগে জানি।”

রুদ্র কিছু না বললেও, তার মনে এক অদ্ভুত অনুভূতি চলে এসেছিল।

(৩) হারিয়ে যাওয়ার আগে এক অদ্ভুত শূন্যতা

একদিন, তৃষা রুদ্রকে বলল,
— “যদি আমি কখনো চলে যাই, তুমি কি খুঁজবে আমাকে?”

রুদ্র কিছুই বলতে পারল না। তৃষা তখন তার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
— “তবে তুমি আমাকে কখনো পাবো না, রুদ্র।”

এটা শুনে রুদ্র ভেবেছিল, হয়তো তৃষা একটা পরীক্ষা নিচ্ছে। কিন্তু কয়েকদিন পরই তৃষা অদৃশ্য হয়ে গেল। কোথাও তার দেখা মিলল না।

এখন রুদ্রর মাথায় নানা প্রশ্ন ঘুরছিল—তৃষা আসলে কোথায় গেল? কেন সে গায়েব হয়ে গেল?

(৪) এক অদ্ভুত রহস্যের সামনে

একদিন, রুদ্র তৃষার পুরোনো বইগুলো যাচাই করতে গিয়ে একটা অদ্ভুত চিঠি পেল। সেই চিঠির মধ্যে লেখা ছিল,

“তৃষা, তুমি কি জানো, তুমি কখনো পুরোপুরি মানুষ ছিলে না? তুমি এক ধরনের ছায়া, একটি জগতের মধ্যে বন্দি। তুমি একজন 'এথেরিয়াল'—এক ধরনের আত্মা, যাকে বাস্তবতা অনুভব করতে পারে না, শুধু ভালোবাসার ছায়ায় রয়ে যায়।”

রুদ্র অবাক হয়ে চিঠিটা পড়ল। তবে, এই চিঠি তার কাছে কিছু না কিছু শিখিয়ে গেল। তৃষা আসলে বাস্তবের কোনো মানুষ ছিল না!

(৫) শেষ উপলব্ধি: এক অনন্ত ভালোবাসা

তৃষার চিহ্ন কোথাও ছিল না। সে ফিরে আসল না। রুদ্র একসময় বুঝল, তৃষা ছিল না—সে ছিল তার কল্পনার এক অংশ। কিন্তু সে কখনো ভাবেনি, কল্পনাও এত শক্তিশালী হতে পারে।

তৃষা ছিল তার জীবনের এক প্রজেকশন, এক অদৃশ্য ছায়া, যাকে সে ভেবেছিল বাস্তব। আর এই ছায়া এখন রুদ্রর মনের মধ্যে বাস করে।

এখন রুদ্র জানে, তৃষার মতো প্রেম, কষ্ট, ছায়া—এই সব কিছু কোনো সময়ের সীমা ছাড়িয়ে চলে যায়। হয়তো তাদের গল্প পুরোপুরি অসম্পূর্ণ, কিন্তু রুদ্র জানে—তৃষা তার মধ্যে থেকে যাবে, চিরকাল, এক অমর ভালোবাসা হিসেবে।

“কিছু কিছু প্রেম পৃথিবী থেকে হারিয়ে যায় না, তারা কেবল অন্য এক জগতে রয়ে যায়, যেখানে সময় এবং বাস্তবতা তার শাসন করতে পারে না।”

Comments

    Please login to post comment. Login