রূপকথা: হারানো পৃথিবীর দেবী
(১) একটি অদৃশ্য রাজ্য
এককালে, পৃথিবীতে একটি রাজ্য ছিল যা কেউ দেখতে পায়নি। এটি ছিল ভোররাজ্য, একটি পৃথিবীর কোণায় অবস্থিত যেখানে সূর্য কখনো ওঠে না, শুধু চাঁদের আলো শীতলভাবে ঝরে পড়ত। পৃথিবীর অন্য সবার চোখে এটা ছিল অদৃশ্য, কারণ এটি ছিল একমাত্র প্রকৃতির নিজস্ব পৃথিবী—মানুষেরা জানত না এর অস্তিত্ব। এই রাজ্যে, দেবীর মতো এক মেয়ে বাস করত—এলিয়ানা, যার জন্ম হয়েছিল মেঘের মধ্যে। তার অস্তিত্ব ছিল এক রহস্য—না সে সাধারণ মানুষ ছিল, না কোনো দেবী, তবে সে ছিল এক বিশেষ শক্তির অধিকারী।
এলিয়ানা ছোট থেকেই জানত, তার ভাগ্য অন্যদের মতো নয়। সে কখনো সাধারণ জীবন যাপন করতে পারেনি, কারণ তার শক্তি ছিল তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সে মেঘের মাঝে চলাফেরা করতে পারত, বাতাসের সুরে কথা বলতে পারত, এবং পৃথিবী থেকে হারিয়ে যেতে পারত। তবে তার সবচেয়ে বড় রহস্য ছিল—সে কি এই পৃথিবীর অংশ ছিল না?
(২) এলিয়ানার চ্যালেঞ্জ
এলিয়ানা একদিন জানতে পারে, যে পৃথিবীতে তার অস্তিত্ব এক বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে সৃষ্টি হয়েছিল। তবে তার শক্তি কেবল তখনই পূর্ণ হবে, যদি সে ভোররাজ্য থেকে বের হয়ে পৃথিবীর অন্যান্য রাজ্যে প্রবেশ করতে পারে। কিন্তু তার জন্য তাকে অতিক্রম করতে হবে এক ভয়ঙ্কর প্রাচীর, যা পৃথিবী ও স্বর্গের মাঝখানে বিরাজ করে—অন্ধকার সীমান্ত। এটা একটি প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ছিল, যা পৃথিবীর সব শক্তিকে একত্রে ঠেকিয়ে রাখত।
এলিয়ানা জানতো, যদি সে অন্ধকার সীমান্ত পেরিয়ে যেতে পারে, তবে পৃথিবী ও স্বর্গের সীমানা ভেঙে যাবে এবং তার অমূল্য শক্তি প্রকাশ পাবে। কিন্তু এই যাত্রায় ছিল এক ভয়ঙ্কর বিপদ—অন্ধকার সীমান্তের মাঝে এক রহস্যময় গোপন প্রাচীন দানব বাস করত, যাকে কেউ কখনো পরাজিত করতে পারেনি। তার নাম ছিল ভেইক, এবং সে ছিল আকাশের নিচে নিঃশেষিত এক দেবতত্ত্ব।
(৩) এলিয়ানার যাত্রা
এলিয়ানা একদিন নির্ধারণ করে নেয়, সে এই যাত্রায় যাবে। সে নিজের মেঘের প্রাসাদ ত্যাগ করে এবং অন্ধকার সীমান্তের দিকে রওনা দেয়। পথে তার সঙ্গে যোগ দেয় এক পিপঁড়ে রাজা, যার নাম ছিল আরথান। আরথান ছিল এক সাহসী, স্মার্ট, কিন্তু একদম ছোট এক রাজা, যার অস্তিত্ব পৃথিবীজুড়ে খুব কম লোকই জানত। তবে সে জানতো—এলিয়ানার পথে তার সহায়তা প্রয়োজন।
এলিয়ানা ও আরথান একযোগে অন্ধকার সীমান্তে পৌঁছানোর পর, তারা দেখতে পায় এক বিশাল এবং ভয়ঙ্কর গেট। তবে সেই গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ভেইক ছিল একজন বিশাল দৈত্য, যার চোখে পৃথিবীর সমস্ত কষ্টের প্রতিফলন ছিল।
(৪) ভেইকের বিপদ
ভেইক তাদের সামনে আসতে আসতে বলে, "তোমরা পৃথিবী থেকে বের হতে চাইছো? তবে, জানো যে এই পথ আর কারও জন্য খোলা হয়নি। আমি আকাশের একমাত্র রক্ষক, এবং যদি তোমরা চাই, তোমাদের ইচ্ছা পূর্ণ করতে হবে। কিন্তু ইচ্ছা পূর্ণ হলে তোমাদের জীবন হারাতে হবে।"
এলিয়ানা ও আরথান একসাথে জবাব দেয়, "আমরা যদি একে অপরের জন্য নিজেদের জীবন দিতেও পারি, তবে পৃথিবীকে বাঁচাতে চাই।"
এলিয়ানা তখন তার শক্তি ব্যবহার করে, ভেইকের চোখে প্রবেশ করে। এক অদ্ভুত প্রলয়ের মাঝে, সে অনুভব করে, ভেইক শুধু এক ভয়ঙ্কর দৈত্য নয়—সে আসলে একটি জীবন্ত জীব। তার মধ্যে এক গভীর দুঃখ এবং শূন্যতা ছিল, যা সবার চোখে অদৃশ্য ছিল।
এলিয়ানা তখন ভেইককে জিজ্ঞেস করে, "কেন তুমি এত ভয়ংকর হয়ে উঠেছো?"
ভেইক স্তম্ভিত হয়ে বলে, "আমি এক সময় পৃথিবীর সেরা দেবতা ছিলাম, কিন্তু আমাকে একে অপরকে ভুল বুঝিয়ে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল। আমি এখন নিজেকে শুধরে নিতে পারি না, কারণ আমি জানি না আমার উদ্দেশ্য কী।"
এলিয়ানা তখন ভেইকের চোখে নিজের চোখ ফেলতে থাকে এবং বলল, "তোমার উদ্দেশ্য ছিল সবাইকে একত্রিত করা, তুমি ভুল পথে চলে গেছো। তবে এখনো সময় আছে, তুমি যদি চাও, পৃথিবীকে শান্তি দিতে পারো।"
(৫) পৃথিবীর মুক্তি
ভেইক এলিয়ানার কথা শুনে ধীরে ধীরে পরিবর্তন হতে শুরু করে। তার ভয়ের অন্ধকার হারিয়ে গেল, এবং সে নিজেকে ছেড়ে দিল। এলিয়ানা ও আরথান, ভেইকের সাহায্যে, অবশেষে অন্ধকার সীমান্ত পেরিয়ে পৃথিবীতে পৌঁছায়। পৃথিবীর রাজ্যগুলো একত্রিত হয়ে এলিয়ানা ও তার শক্তি গ্রহণ করে। ভোররাজ্য থেকে বেরিয়ে এলিয়ানা পৃথিবীকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়।
এরপর, পৃথিবীতে নতুন এক যুগ শুরু হয়, যেখানে সব রাজ্যের মধ্যে শান্তি, ঐক্য এবং সহযোগিতা প্রতিষ্ঠিত হয়। আর ভেইক, পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী সত্তা হয়ে ওঠে, যার কাছে পৃথিবীর মানুষ কখনোই অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার ভয় পায়নি।
এলিয়ানা আর তার বন্ধু আরথান পৃথিবীতে ফিরে এসে নিজেদের রাজ্য গড়ে তুলল, যেখানে সবাই একে অপরকে সহায়তা করবে এবং বিশ্বাস করবে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল—এলিয়ানা জানত, অন্ধকারের মাঝেও আলোর সন্ধান পাওয়া সম্ভব।