গল্প: ‘চাকরি জীবনের কষ্ট’
(১) আশা ও অভাবের মধ্যে জীবন
মাহমুদ হোসেনের জীবন ছিল এক অদ্ভুত চক্র। সে প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে, এক কাপ কফি হাতে, যেভাবে সবাই নিজের দিন শুরু করে, ঠিক সেভাবেই। তবে তার জীবন সাধারণ ছিল না। সে জানতো, তার চাকরির পরিসীমা সীমানাবদ্ধ। সে একজন হিসাবরক্ষক, একটি ছোট কোম্পানিতে কাজ করে, প্রতিদিন সকালে ৯টা থেকে ৭টা পর্যন্ত। কাজটা একদিকে নিশ্চয়তা দেয়, কিন্তু অন্যদিকে, মনে হত জীবনটা কোথাও আটকে গেছে।
অফিসের চার দেয়ালের মধ্যে মাহমুদ খুব অল্প সেলফ-স্যাটিসফেকশন পায়। সময় বয়ে যায়, আর তার আয়ে সংসার চালাতে, স্ত্রীর চিকিৎসা, মেয়ে নূরের পড়াশোনা—সব কিছুর জন্য প্রচণ্ড চেষ্টা করতে হয়। দুঃখের কথা, কখনোই তার সেই পরিশ্রমের মূল্য সঠিকভাবে মেলে না।
(২) বিপদের প্রথম সংকেত
একদিন, কাজের শেষে, যখন মাহমুদ তার ডেস্কে বসে ছিল, তার বস এসে বলল, “তুমি একটু সোজা হয়ে বসো, আর তোমার কাজটা আরো ভালো করার চেষ্টা করো। আমি কিন্তু বিশ্বাস করি, তোমার মধ্যে অনেক কিছু করার ক্ষমতা আছে।” কিন্তু ঠিক পরের সপ্তাহেই সেলফ-রেটিং কমিয়ে দেওয়া হলো, কর্মক্ষমতা সম্পর্কে আর কিছু না বলে, “আমরা একটা রিভিউ করবো, দেখি তোমার কাজের অবস্থা।” মাহমুদের মনে হাজারটা প্রশ্ন খেলে গেল—“এত পরিশ্রমের পরেও, কি আমার স্বীকৃতি এভাবে হবেনা? এই ছোট পদে থেকে কি আমার জীবনে কোনদিন উন্নতি আসবে?”
তারপর থেকে, এক অদ্ভুত অনুভূতি তাকে দংশন করতে থাকে। অফিসের অজ্ঞতা, ভবিষ্যতের অন্ধকার—এইসব চিন্তা তাকে ক্রমেই ঘিরে ফেলছিল।
(৩) আত্মবিশ্বাস হারানোর পরিণতি
মাহমুদ জানতো, জীবন প্রতিদিন তার সামনের দিকে বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসবে, তবে একদিন সন্ধ্যায়, যখন তাকে সেলিম স্যারের কাছ থেকে কিছু অতিরিক্ত কাজের চাপ দেওয়া হয়, তার সহকর্মীরা যখন চুপচাপ বসে থাকে, তার চোখে এক ধরনের হতাশা আসতে থাকে। সে মনে মনে বলছিল, “আমার কি কখনো উন্নতি হবে? অফিসের সবাই আমার কাজের গুরুত্ব না দিলে আমি কি করে সত্যি কিছু অর্জন করতে পারব?”
একদিন, রাতে বাসায় ফিরতে ফিরতে, সে বুঝতে পারলো, তার ছেলেবেলার স্বপ্নগুলো সারা জীবনে অধরা রয়ে যাবে যদি সে এখনো একই জায়গায় আটকে থাকে।
(৪) চ্যালেঞ্জের পালা
এক সন্ধ্যায়, অফিসের কাজের চাপ এত বেড়ে যায় যে, তার হাঁটু কাঁপতে থাকে। সোহানী, তার স্ত্রী, জানতো কিছু একটা ঠিকমতো চলছে না। একদিন সে মাহমুদকে সরাসরি বলল, “তুমি কি নিজের স্বপ্নের কথা ভুলে গেছো? জীবন তো এভাবে কেটে যাবে না, তোমাকে কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”
মাহমুদ বুঝতে পারলো, সঠিক সিদ্ধান্ত না নিলে সে এক অন্ধকার জীবনে হারিয়ে যাবে। সে জানতো, শুধু চাকরির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে সে কখনোই কিছু পরিবর্তন আনতে পারবে না। সে একটু ভেবে সিদ্ধান্ত নিল, চাকরি ছাড়াও কিছু করা যেতে পারে, কিন্তু আগের মতোই পরিবার, কাজ আর জীবনযাত্রার সব কিছুর ভার বহন করতে হবে।
(৫) নিজের অস্তিত্ব ফিরে পাওয়া
মাহমুদ একদিন অফিসে গিয়ে বলল, “বস, আমি আরও কিছু দায়িত্ব নিতে চাই, আমি উন্নতি করতে চাই।” অবাক হয়ে বস তাকে গুরুত্ব দিলো। অফিসে তার কাজের গতি বদলাতে শুরু করল, সেলিম স্যারও এবার তাকে আরও দায়িত্ব দিলেন। ধীরে ধীরে, মাহমুদ বুঝতে পারলো, সে যে ক্ষমতা ধারণ করে তা শুধু অফিসে নয়, বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কাজে লাগানো সম্ভব। এখন সে শুধু চাকরির জন্য কাজ করতো না, সে তার নিজের দক্ষতা ও ক্ষমতাকে কাজে লাগাচ্ছিল।
মাহমুদ বুঝতে পারলো, জীবনের একমাত্র পরিবর্তন শুধু টাকা বা সেলফ-এচিভমেন্টে নয়—বরং নিজের আত্মবিশ্বাস আর কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে।
শেষ কথা
মাহমুদ এখন জানে, জীবনে জয়ী হতে গেলে শুধু বাহ্যিক সাফল্য নয়, ভিতরের বিশ্বাস ও আত্মবিশ্বাসও প্রয়োজন। সে জানে, কষ্টের পথে যতদূরই হাঁটতে হোক, কেবল সঠিক দৃষ্টিকোণ ও পরিকল্পনা দিয়েই মানুষের সাফল্য আসতে পারে।
এই গল্পে পাবেন এক চাকরিজীবীর জীবনযুদ্ধ, যেখানে সে আবিষ্কার করে, সত্যিকার সাফল্য একমাত্র পরিশ্রম ও আত্মবিশ্বাসেই নিহিত।