ভালোবাসার পৃথিবী
শহরটা ব্যস্ত, যান্ত্রিক। এখানে কেউ কারও দিকে তাকায় না, কেউ কারও অনুভূতি বোঝে না। হাসির চেয়ে ক্লান্তির ছাপ বেশি, ভালোবাসার চেয়ে স্বার্থের দৌড় বেশি। তবু এই শহরের এক কোণে ছিল একটুকরো শান্তি—একটা ছোট্ট ফুলের দোকান, নাম "স্বপ্নের বাগান"।
দোকানের মালিক তিথি, এক অদ্ভুত মেয়ে। তার বিশ্বাস, ভালোবাসা শুধু কোনো গল্পের বইয়ে সীমাবদ্ধ নয়, বরং সেটাকে ছড়িয়ে দিতে হয়, অনুভব করতে হয়। তাই প্রতিদিন দোকানে এলে কেউ না কেউ একটা না একটা ফুল উপহার পেত, এক টুকরো ভালোবাসা পেত।
একটি বিশেষ সন্ধ্যা
একদিন সন্ধ্যায় এক যুবক দোকানে এলো। চোখে ক্লান্তি, মুখে বিষণ্নতার ছাপ। নাম শুভ।
তিথি হাসিমুখে বলল,
— "আপনার জন্য কী ফুল দিতে পারি?"
শুভ ম্লান হেসে বলল,
— "নিজের জন্য একটা ফুল নিতে এসেছি। আজ আমার জন্মদিন, অথচ কেউ মনে রাখেনি।"
তিথির চোখে বিস্ময় জেগে উঠল। একটু চুপ থেকে সে একটা লাল গোলাপ বাড়িয়ে দিল,
— "এটা আমার তরফ থেকে উপহার। শুভ জন্মদিন!"
শুভ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। এই শহরে কেউ তাকে মনে রাখেনি, অথচ এক অচেনা মেয়ে তাকে ভালোবাসার স্পর্শ দিল!
সেই মুহূর্তেই যেন শহরের কোলাহল স্তব্ধ হয়ে গেল, যেন একটা অদৃশ্য আলো শুভর মনের অন্ধকার দূর করে দিল।
ভালোবাসার পৃথিবী
এরপর শুভ প্রায়ই আসতে লাগল তিথির দোকানে। কখনো গল্প করতে, কখনো স্রেফ বসে থাকতে। ধীরে ধীরে শুভ বুঝতে পারল, এই ছোট্ট দোকানটা শুধু ব্যবসার জন্য নয়, এটা এক ভালোবাসার পৃথিবী, যেখানে মানুষ এখনো মানুষকে ভালোবাসতে শেখে।
একদিন শুভ বলল,
— "তোমার দোকানের নাম হওয়া উচিত 'ভালোবাসার পৃথিবী'। কারণ তুমি মানুষকে ভালোবাসতে শেখাচ্ছো।"
তিথি মৃদু হেসে বলল,
— "ভালোবাসার পৃথিবী শুধু একটা দোকান নয়, এটা আমাদের হৃদয়ের মধ্যে তৈরি করা যায়। আমরা যদি একে অপরের প্রতি একটু যত্নশীল হই, তাহলে পুরো পৃথিবীটাই ভালোবাসায় ভরে উঠবে।"
শুভ সেদিন নতুন করে বুঝল—ভালোবাসা মানে শুধু রোমান্স নয়, ভালোবাসা মানে একে অপরের প্রতি একটু যত্ন, একটু সহানুভূতি, একটু হাসিমাখা মুখ।
শহরের ব্যস্ততা তখনো ছিল, যান্ত্রিকতা তখনো ছিল। কিন্তু তিথির "ভালোবাসার পৃথিবী" অনেক মানুষকে নতুন করে ভালোবাসতে শিখিয়েছিল।