মৃত্যুর ব্যবসা
রাত গভীর, কিন্তু হাসপাতালের করিডোরে হাহাকার থামেনি। জরুরি বিভাগের সামনে এক মা বিলাপ করে কাঁদছে। তার সাত বছরের ছেলে, রাসেল, কয়েক ঘণ্টা আগে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছে। ডাক্তার বলেছেন, দ্রুত অস্ত্রোপচার করতে হবে, কিন্তু একটাই শর্ত—আগে টাকা জমা দিতে হবে!
মা কাঁদতে কাঁদতে বলল, "স্যার, আমার কাছে এখন এত টাকা নেই, একটু দয়া করুন!"
কাউন্টারের লোক নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলল, "নিয়ম একটাই, আগে টাকা, তারপর চিকিৎসা!"
সিস্টেমের পেছনের কালো চেহারা
এই হাসপাতাল সরকারি, তবে সেবা যেন ব্যবসার চেয়েও বেশি লাভজনক। রোগীর আত্মীয়রা জানেও না, ওষুধের মূল্য তিনগুণ বেশি কেন নেওয়া হয়, কেন ফ্রি চিকিৎসা থাকার পরও ডাক্তাররা বাইরে চেম্বারে যেতে বলে।
এই হাসপাতালের পরিচালক, ডাক্তার, ওষুধ সরবরাহকারী—সবাই মিলে দুর্নীতির একটা চক্র তৈরি করেছে। টেন্ডার ম্যানিপুলেট করে বেশি দামে ওষুধ কেনা হয়, ফ্রি ওষুধ গায়েব হয়ে কালোবাজারে চলে যায়। আর রোগীদের শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি, সে যেন কেবলই এক সংখ্যা!
অপেক্ষা আর মৃত্যু
রাসেলের মা শেষমেশ ধার-দেনা করে টাকা যোগাড় করল, কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ডাক্তারের মুখ গম্ভীর, নার্স মাথা নিচু করে বলল, "আমরা চেষ্টা করেছি, কিন্তু বাঁচাতে পারলাম না।"
মায়ের চিৎকারে পুরো হাসপাতাল থমকে গেল। কেউ কিছু বলল না, কারণ সবাই জানে—এই মৃত্যু অপরিহার্য ছিল না, এটা ছিল টাকার অভাবে বিলম্বিত চিকিৎসার ফল।
তদন্ত, নাটক আর পরিণতি
সংবাদমাধ্যমে ঘটনাটা চাউর হলো। প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করল, দু-একজন নিম্নপদস্থ কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করল। কিন্তু যারা সত্যিকারের অপরাধী, তারা পর্দার আড়ালে রয়ে গেল।
দুই মাস পর সবকিছু আগের মতো চলতে লাগল। হাসপাতালের করিডোরে নতুন কোনো মায়ের কান্না প্রতিধ্বনিত হলো, নতুন কোনো রোগী টাকা জোগাড়ের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরতে লাগল।
রিকশাচালক রহমান হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করে বলল—
"এটা হাসপাতাল, না ব্যবসার বাজার?"