Posts

গল্প

একটি শূন্যতা, একটি স্বপ্ন

February 4, 2025

Akash Ulal

165
View

একটি শূন্যতা, একটি স্বপ্ন

শহরের এক কোণে, এক ছোট্ট বাড়িতে বাস করত রিফাত, ২৪ বছর বয়সী এক যুবক। ছোট থেকে সে জানত, সে পড়াশোনা করে সফল হবে। ভালো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন করার পর, তার ভেতরে ছিল এক অদম্য আশা—“এটাই সেই মুহূর্ত, যখন সব কিছু বদলে যাবে!”

কিন্তু বাস্তবতা ছিল আলাদা। রিফাতের ফ্রি সময় কেটে যাচ্ছিল সিভি আপডেট করতে, চাকরির জন্য আবেদন করতে, আবার প্রত্যাখ্যাত হতে। তার বাবা-মা বলতেন, “কিছু একটা তো কর, একদম বসে থেকো না। তোমার বয়স বাড়ছে, কিছু একটা করো!” কিন্তু রিফাত জানত, বাজারে এখন প্রতিযোগিতা এতই বেশি যে, শুধু সিভি আর ডিগ্রি দিয়ে চাকরি পাওয়া সম্ভব নয়। সে ঠিকই জানত, চাকরি পাওয়ার জন্য আগে “নিজস্ব একটা পরিচয়” তৈরি করতে হয়—কিন্তু কীভাবে?

একটু পরের সত্যি

একদিন রিফাত এক পরিচিতের মাধ্যমে শুনল একটি কোম্পানি তাদের ডিজিটাল মার্কেটিং বিভাগে নতুন তরুণদের নিয়োগ দিচ্ছে। “এটা আমার সুযোগ!”—ভাবল রিফাত। কিন্তু পরীক্ষার দিন ঠিক আধাঘণ্টা আগে, তার ল্যাপটপের স্ক্রীন হঠাৎ নষ্ট হয়ে গেল। তার হাতে সময় ছিল না নতুন ল্যাপটপ কিনতে, ফলে ইন্টারভিউ দিতে পারল না।

তখন, রিফাত বুঝতে পারল, এই সিস্টেমে শুধুমাত্র ডিগ্রি আর প্রমাণিত অভিজ্ঞতা নয়, মাঝে মাঝে শুধুমাত্র সময় আর প্রস্তুতি ছাড়া কিছুই কাজে আসে না। এই পরিস্থিতিতে তার ভেতরে এক ধরনের হতাশা তৈরি হলো—যেখানে সে তার প্রয়োজনীয় সুযোগের কাছে পৌঁছাতে পারছে না, কারণ সবকিছুই নির্ভর করছে ব্যাকগ্রাউন্ড, সুযোগ, এবং সময়ের ওপর।

অস্বীকার না করা, শিখতে থাকা

রিফাত কোনোদিন হাল ছাড়েনি। সে জানত, যদি চাকরি না হয়, তবে নিজেই কিছু শুরু করতে হবে। সে রাত-দিন এক করে ডিজিটাল মার্কেটিং, ফ্রিল্যান্সিং, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট শিখতে লাগল। কিছুদিন পর সে নিজের একটি ছোট্ট ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি খুলল।

কিন্তু, এখানে সমস্যা ছিল—এটি শুরু করার জন্য তার প্রচুর অর্থের প্রয়োজন ছিল, যা সে জোগাড় করতে পারছিল না। তার বাবা-মা তাকে কিছু সাহায্য করতে চাইলেও, তাদেরও টানাপড়েন ছিল। তখন রিফাত উপলব্ধি করল, সবার জন্য একটা সিস্টেম কাজ করে না। যাদের কাছে অর্থ আছে, তাদের জন্য সব কিছু সহজ, কিন্তু যাদের কাছে কিছু নেই, তাদের জন্য পথ তৈরি করতে হয় একদম শূন্য থেকে।

স্বপ্নের সংকল্প

এত কিছুর পরও, রিফাতের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, “সবকিছু একদিন বদলে যাবে, যদি আমি শুধু নিজের পথে এগিয়ে যাই।” তার সেই বিশ্বাসই তাকে সাহস যুগিয়েছিল। ধীরে ধীরে, ক্লায়েন্ট পাওয়া শুরু হলো, ছোট ছোট প্রজেক্ট পেলো, এবং কিছুদিন পর তার ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি চলতে শুরু করল।

একদিন, তার কাছে বড় একটি প্রতিষ্ঠান থেকে কাজের অফার এলো। এই চাকরি রিফাতের জীবনের প্রথম “বড় সুযোগ” ছিল। কিন্তু সে জানত, এই সাফল্য কেবল তার নিজস্ব বিশ্বাস আর সময়ের খেলা—আর কিছুই নয়।

পথের শেষ, আরেক শুরু

রিফাত জানত, তার এই পথ কখনোই সরল ছিল না। একদিন যদি সে চাকরি পেত, অন্য দিন পেত না। কখনো টাকা ছিল না, কখনো সময় ছিল না, কখনো ছিল না সঠিক সুযোগ। তবে এই অভিজ্ঞতা তাকে শিখিয়েছিল, জীবনে কখনোই “সব কিছু ঠিক সময়ে” হবে না। কিছু জিনিসের জন্য আমাদের নিজের হাতে সুযোগ তৈরি করতে হয়।

এখন, রিফাত নিজে প্রতিষ্ঠিত, কিন্তু সে জানে, যে হাজারো যুবক আজও তার মতো একটুখানি সুযোগের অপেক্ষায়। তারা জানে না, তাদের মতো হাজারো যুবক ঠিক কখন নিজের পরিচয় তৈরি করবে, কখন তাদের পথ খুঁজে পাবে। কিন্তু, রিফাত জানে, "কিছু সময় অপেক্ষা, আর কিছু সময় নিজের জন্য তৈরী করা সুযোগের খেলা!"

Comments

    Please login to post comment. Login