Posts

গল্প

অদৃশ্য শিকার: এক নারীর সংগ্রাম

February 4, 2025

Akash Ulal

123
View

অদৃশ্য শিকার: এক নারীর সংগ্রাম

লতিকা, এক শান্ত গ্রামে বড় হওয়া একটি মেয়ে, যাকে তার বাবা-মা ছোট থেকেই শিখিয়েছিলেন—“তুমি যা চাও, তুমি তা অর্জন করতে পারো, শুধু শিক্ষা আর পরিশ্রমে বিশ্বাস রাখো।” তার স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে একজন সফল নারী হওয়া, সমাজে নিজের জায়গা তৈরি করা। তাই যখন শহরের একটি নামকরা কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেল, তার মনে গাঁথা ছিল এক শক্তিশালী প্রত্যয়—“এখানে এসে আমি কিছুটা পারব।”

কিন্তু যখন সে প্রথম শহরের রাস্তায় পা রাখল, তখনই বুঝতে পারল—এখানে তার স্বপ্নের পথে নয়, বরং এক কঠিন যুদ্ধের পথ। প্রথম দিকে শহরের জীবন তার কাছে খুব রঙিন মনে হয়েছিল। নতুন বন্ধু, নতুন পরিবেশ, নতুন সুযোগ—সে ভেবেছিল, সবকিছু তার দিকেই আসছে। কিন্তু একদিন, কলেজ থেকে ফিরে যাওয়ার পথে সেই অদৃশ্য শিকারীর শিকার হয়ে গেল লতিকা।

এক দল ছেলেরা তার পেছনে চলে আসল, একে অপরকে উৎসাহিত করে, তাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করতে শুরু করল। সে প্রথমে ভেবেছিল, হয়তো কিছু না-হয়, কিন্তু যখন তাদের হাসি আর অপমানকর কথাগুলি তার কানে পৌঁছাল, সে অনুভব করল, এটা কোন সাধারণ ঘটনা নয়, এটা তার ব্যক্তিগত লজ্জা, তার আত্মবিশ্বাসের আঘাত।

সে জানত, শহরের রাস্তায় মেয়ে হওয়ার মানে হল না শুধুমাত্র কাজের জায়গায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নয়, বরং কোথাও বের হলে প্রতিটি মুহূর্তে তার নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। তবুও, কেন? কেন শুধু মেয়েদেরই ভয় পেতে হয়? কেন তাদের শরীর, তাদের সম্মান সব কিছুই সবার চোখে একটা ‘প্রপার্টি’?

এছাড়া, একদিন রাতে শহরের কোণায় ঘটে যাওয়া এক ভয়ঙ্কর ঘটনা লতিকাকে চমকে দিয়েছিল। এক মেয়ে, যে ছিল পরিচিত, তাকে ধর্ষণ করা হয়, আর কিছুদিন পর সমাজের অধিকাংশ মানুষ ঘটনাটি চাপা দিয়ে দেয়। পুলিশ কোন পদক্ষেপ নেয় না, সমাজের অনেকেই এটিকে স্রেফ একটা 'সাধারণ ঘটনা' হিসেবে গণ্য করে। এই ঘটনার পর, লতিকার চোখে স্পষ্ট হয়ে ওঠে, এটা শুধু তার বা এই মেয়েটির সমস্যা নয়, এটা পুরো সমাজের ব্যর্থতা।

এতদিন, সমাজ নারীদের একটা সামান্য উপকরণের মতো ব্যবহার করে এসেছে, কিন্তু কখনো কি কেউ প্রশ্ন করেছে, তারা কি তাদের স্বাধীনতার অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারে?

লতিকার মনে এক নতুন সংগ্রামের জন্ম হলো। সে জানত, এই সমাজের পরিবর্তন হবেনা যতদিন পর্যন্ত নারীরা এক হয়ে, সম্মান আর নিরাপত্তার জন্য লড়াই না করবে। এটাই তাদের অধিকার, তাদের যুদ্ধ, আর এই যুদ্ধ না করলে, মেয়েরা কখনোই মুক্তি পাবে না।

শেষ কথা

আজ লতিকা জানে, প্রতিটি মেয়ের নিরাপত্তা, সম্মান এবং স্বাধীনতা শুধুমাত্র তাদের নিজের হাতেই। কিন্তু সমাজের কাছে নারীর প্রতি শ্রদ্ধা কেবল একটি ধারণা নয়, একটি বাস্তবতা হতে হবে। যতদিন পর্যন্ত আমরা একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে, এক কণ্ঠে প্রতিবাদ না করি, ততদিন পর্যন্ত এই পৃথিবী পরিবর্তন হবে না।

লতিকা নিজের চোখে দেখেছে, পরিবর্তন তখনই সম্ভব, যখন নারীরা একত্রিত হবে, নিজেদের সম্মানকে রক্ষা করবে, এবং পৃথিবী জানবে—নারী মানেই শুধুমাত্র একটি শিকার নয়, বরং একজন সাহসী যোদ্ধা, যে তার অধিকার নিয়ে চলবে।

Comments

    Please login to post comment. Login