Posts

গল্প

একটি ভাঙা স্বপ্নের গল্প

February 4, 2025

Akash Ulal

115
View

একটি ভাঙা স্বপ্নের গল্প

রহমত আলী, এক ছোট্ট গ্রামে বাস করেন। তিনি একজন কৃষক, যিনি প্রতিদিন সূর্যোদয়ের আগে জমিতে কাজ শুরু করেন এবং সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে আসেন। তাঁর জীবনে সুখ বলতে কিছুই নেই, তবে একটি ছোট স্বপ্ন ছিল—নিজের দুই সন্তানকে ভাল শিক্ষায় শিক্ষিত করে একটি সুন্দর ভবিষ্যত দিতে। কিন্তু বাস্তবতা ক্রমশ তাকে নিঃস্ব করে চলেছে।

রহমত আলীর স্ত্রী, আছিয়া, সারা দিন ঘরের কাজে ব্যস্ত থাকে। তাদের একমাত্র ছেলে, সাদিক, পড়াশোনা করতে ভালোবাসে, আর মেয়ে, সাফিয়া, স্কুলে যায়। কিন্তু যেহেতু রহমত আলী প্রতি বছর ফসলের লাভে অনেকটাই সীমাবদ্ধ থাকে, তিনি খুব একটা ভাল কিছু নিশ্চিত করতে পারেন না। তবে তার চেষ্টার কোনো কমতি নেই—তিনিই সেই বাবা, যিনি নিজের কষ্টে ঠেলে চলে যান শুধুমাত্র সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য।

একদিন, সাদিক তার বাবাকে বলেছিল, “বাবা, আমি বড় হয়ে ডাক্তার হতে চাই।” রহমত আলী হাসলেন, কিন্তু সেই হাসির মধ্যে এক ধরনের দুঃখ ছিল। তার মনে হয়েছিল, “এটা কি সম্ভব? আমি তো বছরে দুইবেলা পেট ভরে খেতে পারি না, কিভাবে তার পড়াশোনার খরচ জোগাবো?” তবে তিনি কিছু বললেন না, শুধু বলেন, “বাবা, তুমি ভালো করে পড়ালেখা করো, আমি সব ঠিক করে দেবো।”

কিন্তু বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। এক বছর, ফসল খারাপ হল। বৃষ্টি না হওয়া, জমি উর্বর না থাকা—সব কিছু মিলিয়ে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রহমত আলী তার ছোট্ট জমি বিক্রি করতে বাধ্য হন, আর সে টাকায় ঋণ পরিশোধ করেন। সাদিকের স্কুলের টিউশন ফি পরিশোধের জন্যও টাকা নেই।

রহমত আলী প্রতি রাতে বিছানায় শুয়ে ভাবতেন, “আমি আমার সন্তানদের জন্য কিছুই করতে পারব না। তাদের যে স্বপ্ন, আমি তো তা কখনোই পূরণ করতে পারব না। আমি যদি তাদের ভালো কিছু দিতে পারতাম, যদি একটু বেশি টাকা পেতাম…”

একদিন সাদিক নিজে থেকেই কাজ খুঁজে বের করে, এলাকার এক দোকানে কাজ করতে শুরু করে। বাবার চেষ্টার প্রশংসা সে জানত, কিন্তু নিজেই কিছু করতে চেয়েছিল। সাফিয়া স্কুলের পড়াশোনার পাশাপাশি স্থানীয় এক দোকানে সহায়িকা হিসেবে কাজ করতে লাগলো। তবে এত কষ্টের পরেও, রহমত আলীর মুখে হাসি লেগে থাকত—“তাদের জন্য জীবন বাঁচিয়ে রাখাটা আমার দায়িত্ব। একদিন তারা তাদের স্বপ্ন পূরণ করবে, এবং আমি তাদের পাশে থাকব।”

শেষ কথা

রহমত আলী জানতেন, তার জীবন ভরা কষ্টে। তবে তিনি আরও জানতেন, এই কষ্টগুলিই একদিন তার সন্তানদের সাফল্যের পথে বাধা হিসেবে দাঁড়াবে না। একদিন, সাদিক তার পড়াশোনা শেষ করবে, ডাক্তার হবে, আর সাফিয়া তার স্কুলের শিক্ষক হয়ে গ্রামে ফিরে আসবে। রহমত আলী জানতেন—যতদিন তিনি বেঁচে থাকবেন, তার সন্তানদের জন্য নিজের জীবনের সমস্ত কষ্ট সহ্য করবেন।

Comments

    Please login to post comment. Login