বড়লোক বাবার অহংকার ও দুর্নীতি
শাহিদুল আলী ছিলেন শহরের এক বড় ব্যবসায়ী, যিনি নিজের ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে দিনরাত এক করে পরিশ্রম করেছিলেন। তার হাতে ছিল হাজার কোটি টাকার সম্পদ, এবং তিনি নিজেকে মনে করতেন শহরের এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। তার অহংকার ছিল অপরিসীম—তিনি বিশ্বাস করতেন যে অর্থই সবকিছু। তার কাছে পৃথিবী ছিল শুধুমাত্র ব্যবসা, লাভ এবং শক্তি। তবে এই অহংকারের সাথে এক অন্ধকার দিক ছিল—তাকে কখনোই প্রকৃত নৈতিকতা ও সততার প্রতি আস্থা ছিল না। তার জন্য, সব কিছুই লাভের বিষয়। আর এই লাভের জন্য কখনোই তিনি দুর্নীতির পথে যেতে পিছপা হতেন না।
শাহিদুল আলী যখন তার ব্যবসার জন্য সরকারি প্রকল্পে অংশগ্রহণ করলেন, তখন সেখানে দুর্নীতি আর অশুদ্ধতার এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়। তিনি জানতেন, নিয়ম ভেঙে সঠিক পথ ধরে কিছু করা সম্ভব নয়, তাই তিনি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে তাদেরকে ঘুষ দিয়ে নিজেদের পকেটে টাকা ভরতে শুরু করলেন। বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে তিনি নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করতেন, অথচ প্রাথমিক মূল্য বেশি দেখিয়ে ফায়দা উঠাতেন। কিন্তু সবাই জানতো, শাহিদুল আলী যখন এ ধরনের দুর্নীতি করত, তখন তার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলত না, কারণ তার অর্থের শক্তি ছিল।
তার ছেলে, সাইফুল, ছোটবেলা থেকেই বাবার ব্যবসা দেখেছিল। তবে সে জানত, বাবা যে পথটি বেছে নিয়েছে, সেটি সঠিক নয়। সাইফুল পড়াশোনা শেষে নিজের জীবনে সৎভাবে কিছু করতে চেয়েছিল। কিন্তু তার বাবার মধ্যে যে দুর্নীতির গন্ধ ছিল, তা সে ঠিকভাবে জানত না। একদিন, সাইফুল বুঝতে পারে যে, তার বাবার সমস্ত সাফল্যের পেছনে দুর্নীতি ও অন্যায়ের একটি বড় ভূমিকা রয়েছে।
একদিন সাইফুল বাবাকে সরাসরি প্রশ্ন করেছিল, “বাবা, তুমি তো বলো মানুষের জন্য কিছু করতে, কিন্তু তুমি নিজের ব্যবসার জন্য কত অসৎ কাজ করছো! কি জন্য এতটা ঝুঁকি নিচ্ছো?” শাহিদুল আলী রেগে গিয়ে বললেন, “তুমি কী জানো না, এখানে যে না থাকে, সে কখনো কিছু পায় না! এই পৃথিবী শুধু সৎ পথে চলতে পারে না, তুমি যত খুশি পড়াশোনা করো, কিন্তু আমি যা করেছি, তাতে মানুষকে একেবারে হেরে যেতে হয়নি।’’
কিন্তু একদিন, শাহিদুল আলী অবশেষে ধরা পড়েন। এক সরকারি তদন্তের সময় তার অসংখ্য দুর্নীতির কাণ্ড ফাঁস হয়ে যায়। তিনি জড়িয়ে পড়েন এক বড়ো আর্থিক কেলেঙ্কারিতে, যেখানে ঘুষ, মিথ্যাচার এবং অবৈধ লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া যায়। এই ঘটনার পর, সাইফুল দুঃখিত হয়ে যায়, কারণ সে বুঝতে পারে, তার বাবার পথভ্রষ্টতা তার নিজের সৎ পথে চলার জন্য এক বড়ো বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
সাইফুল সিদ্ধান্ত নেয়, সে আর তার বাবার মতো অর্থের মোহে গ্রাস হবে না। তার বাবার মতো সফলতা নয়, সে মানুষের কল্যাণে, সৎ পথে কাজ করতে চায়। সাইফুল জানত, এটি একটি লম্বা পথ, কিন্তু একদিন সে সেই সত্যিকারের সাফল্য অর্জন করবে, যা তার বাবা কখনো বুঝতে পারেননি।
শেষ কথা
এটি শুধু এক বাবার দুর্নীতি ও অহংকারের গল্প নয়, এটি সমাজের একটি বাস্তব চিত্র। যেখানে একজন বাবা তার সাফল্যের জন্য দুর্নীতি ও অসৎ পথ বেছে নেয়, কিন্তু তার সন্তান সেই পথে না হাঁটতে চায়। এটি এক কঠিন সিদ্ধান্তের গল্প—যেখানে, সৎ পথে চললে হয়তো বিলম্ব হবে, কিন্তু একদিন সাফল্য সঠিকভাবে আসে।