Posts

গল্প

মায়ের স্মৃতি

February 4, 2025

Yeashin

126
View

মনে পড়ে সেই শৈশবের কথা যখন মা নিজ হাতে না খাইয়ে দিলে খেতে পারতাম না। মায়ের দুচোখ না দেখলে ঘুম আসতো না। স্কুল থেকে ফিরে মাকে না দেখলে মন উতাল পাতাল করত। তখনকার সময়টাই ভালো ছিল। না খাইয়ে দাইয়ে গোসল করিয়ে দুপুরবেলা ঘুম পাড়িয়ে দিত। ঘুম থেকে উঠে বিকেলে খেলার জন্য বাহিরে  নিয়ে যেত। 

সন্ধ্যার পর মা পড়াশোনা করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়তো। মা বসে আমাদেরকে সকল পড়া  কমপ্লিট করে দিত। হুট করে  কারেন্ট চলে গেলে আমাদের অনেক ভালো লাগতো। মনে মনে ভাবতাম কারণটা অনেক দেরি করে আসুক। তাহলে আজকে আর পড়তে হবে না। মা তখন আমাদেরকে নানা রকম গল্প শোনাতো। মায়ের একটা গল্প সবসময় মনে পড়ে বলতোঃ এক দেশে এক  রাজা  থাকতো। রাজা টা ভীষণ রাগী,  রাজার ছিল তিনটি রানী। রানী গুলো স্বভাবসুলভ খুব মিষ্টি। বড় রানিতার নাম ছিল মায়াবতী, মেজটার নাম কেশবতী, আর ছোট রানিতার নাম ছিল পদ্মাবতী। রাজা  সবাইকে নিয়ে খুব মজা করছিল। হুট করে পদ্মাবতী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। রাজা সবচেয়ে বেশি ভালবাসত তার ছোট রানী পদ্মাবতীকে। পদ্মাবতীর অসুস্থতার খবর শুনে রাজা আর টিকে থাকতে পারলো না। সকল প্রকার কবিরাজ ও যার কাছে খবর গেল রাজার বার্তা। 

রাজা বলেছিল যে আমার রানীকে সুস্থ করে দিতে পারবে তাকে নগদ ১০০০০ রুপি দেওয়া হবে। এইটা শুনে সকলের মাথা টৈ টুম্বর হতে থাকলো। চারদিকে নানা রকম  ওঝা আসলো। রানীকে  সুস্থ করতে সবাই ব্যর্থ হয়ে গেল। কেউ রানীকে  সুস্থ করতে পারল না। 

তিন দিন পর করে একটা বালক আসলো। রানীকে দেখে তিনি বলল আমি সুস্থ করে দিতে পারব। এই কথা শুনে রাজার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। রানীকে সুস্থ করতে হলে প্রয়োজন একটা সোনালী হাঁস। আর সেই সোনালী হাস পূর্ণিমার রাতে একটা সোনার ডিম পাড়ে। সেই ডিম রানীকে খাওয়াতে হবে। তাহলে রানী সুস্থ হতে পারবেন। এটা শুনে রাজা সোনালী হাসখোঁজার জন্য ব্যস্ত হয়ে গেল। একদিন রাতে সোনালী হাস খুঁজে পেল। আর পূর্ণিমা রাতে সোনালী হাসছে একটি ডিম পাড়লো। আর সেই ডিম রাজা রানী কে খাওয়ালো। আর রানী সুস্থ হয়ে গেলো।

এভাবে মা হাজারো গল্প শুনি আমাদের ঘুম পাড়িয়ে দিত। নানা রকম গল্পে আমরা নিজেদেরকে মাতিয়ে রাখতাম। 

এখন আমাদের বয়স অনেক বড় হয়ে গেছে। ঠিকমতো মায়ের সাথে সময় কাটাতে পারিনা। না পারি নিজেদের অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে। মায়ের সাথে সময় কাটাতেও পারিনা। কিন্তু শৈশবে সেই স্মৃতিগুলো আজও ভেসে উঠে চোখের কোনায়। কখনো কান্নারত হয়ে মনে পড়ে মা কেমন আছো আরেকটা গল্প শোনাবে।

এভাবেই দিন যায় মাস যায় কিন্তু শৈশবকে ফিরে পাওয়া যায় না। শৈশবের ক্লান্তিহীন মায়ের কোলেও ঘুমানো যায় না। মাকে জড়িয়ে ধরে পড়াগুলো বলা যায় না। 

Comments

    Please login to post comment. Login