ছায়া মানুষ (পর্ব ৩)
নুহাশ একদিকে গা শিরশির করে, অন্যদিকে মাথার মধ্যে উত্তেজনা ও আতঙ্কে ভরা অনুভূতি নিয়ে রাস্তা ধরে হাঁটতে থাকল। প্রতিটি পদক্ষেপ যেন তাকে আরো গভীরে নিয়ে যাচ্ছিল। তার মনে হচ্ছে, কিছু একটা তাকে তার অতীতের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে, এবং এই শূন্যতা তাকে শ্বাসরোধ করে ফেলছে।
তার মোবাইল আবার কেঁপে উঠল। অনিচ্ছাসত্ত্বেও সে এটি বের করল। একই অপরিচিত নম্বর থেকে আবার একটি মেসেজ এসেছে—
"দ্বার খুলে গেছে, নুহাশ। তুমি যদি জানো, তাহলে বেরিয়ে এসো।"
সেই মুহূর্তে, তার মনে এক অদ্ভুত প্রলোভন সৃষ্টি হল। মেসেজে কিছু না কিছু ছিল, যা তার ভেতরেও ভয় এবং কৌতূহল জাগিয়ে তুলেছিল। তবে, তার জন্য যদি সে সত্যিই বের হয়ে যায়, তাহলে কি হবে? এই প্রশ্ন তার মাথায় ঘুরছিল।
সে অবচেতনভাবে ঠিক পথ ধরে এগিয়ে চলল, তার মনে কোনো সঠিক চিন্তা না থাকলেও।
হঠাৎ, তার সামনে একটা তীব্র ঝলকানি দেখা দিল—এটা কি কোনো আলো? না, এ যেন অন্ধকারের একটা ছায়া।
বাতাসে একটা ঝড় উঠতে শুরু করল। শহরের মধ্যে যেন কোনো অজানা শক্তি কাজ করছে। নুহাশ তাড়াহুড়ো করে দ্রুত পা ফেলতে থাকল।
যখন সে রাস্তার মোড় ঘুরে সামনে গিয়ে থামল, তখন তার চোখের সামনে দৃশ্যটা আরো স্পষ্ট হল। সেই ছায়ামানুষ, যে তাকে একাধিক বার ভয় দেখিয়েছে, এবার সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু এবার সে চুপ ছিল না। তার মুখে ছিল এক অদ্ভুত হাসি।
"তুমি আসলে কি জানো?" ছায়ামানুষটি এবার একটু এগিয়ে এসে বলল। তার গলার স্বর ছিল গভীর ও স্নিগ্ধ, কিন্তু ভয়ের সাথে মিশে ছিল।
নুহাশ সজাগ হয়ে উঠল, "তুমি কে? এবং আমাকে এসব কী বলছো?"
ছায়ামানুষটি আবার এক পা এগিয়ে এসে বলল, "আমি তোমার ভয়, তোমার অতীত। তুমি তোমার অন্তর্নিহিত অভ্যন্তরীণ সত্য থেকে পালাচ্ছো, কিন্তু সত্য কখনো পালায় না।"
নুহাশের গা শিউরে উঠল। সে নিশ্চিত ছিল, এটি কেবল একটা ছায়া, কিন্তু কি এক রহস্যময় অভ্যন্তরীণ শক্তি তাকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছিল!
"তুমি আমাকে কি করতে বলছ?" নুহাশ তার কণ্ঠে দৃঢ়তা রাখার চেষ্টা করল।
ছায়ামানুষটি এবার একটা ঠাণ্ডা হাসি দিয়ে বলল, "তুমি যদি সত্যি জানতে চাও, তুমি আমার সাথে চলতে হবে।"
নুহাশ অবচেতনভাবে এক পা এগিয়ে গেল। তার মাঝে কিছু একটা পালানোর পথ দেয়ার চেষ্টা করছিল, কিন্তু সেই অজানা শক্তি তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল।
"তুমি যদি আমাকে অনুসরণ করো, তুমি তোমার অতীতের মুখোমুখি হবে, তবে সত্যি জানতে পারবে," ছায়ামানুষটি বলল।
নুহাশ কোনো শব্দ না করে তার দিকে এগিয়ে চলল। সে জানত, এই পথ তাকে অজানার দিকে নিয়ে যাবে। কিন্তু কৌতূহল এবং ভয়ের মিশ্রণ তাকে এক চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে নিয়ে এল—এবার তাকে কিছু জানতে হবে।
(চলবে…)