Posts

চিন্তা

আগলে না রাখি যদি ভালো, খারাপটারে কে রুধিতে পারে!

February 4, 2025

ফারদিন ফেরদৌস

38
View

গত ২০ জানুয়ারি আফগানিস্তান-পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী খোস্ত প্রদেশে একটি ‘গ্র্যাজুয়েশন’ অনুষ্ঠানে কথা বলছিলেন ওই দেশের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ আব্বাস স্তানিকজাই। বক্তৃতায় তিনি কন্যাশিশুদের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা এবং নারীদের উচ্চশিক্ষায় তালেবান সরকারের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করেন।

বক্তৃতায় মোহাম্মদ আব্বাস স্তানিকজাই বলেছিলেন, ‘এটার [নারীশিক্ষায় নিষেধাজ্ঞার] জন্য কোনো অজুহাত দেওয়া যায় না, বর্তমানেও না এবং ভবিষ্যতেও না। আমরা দুই কোটি মানুষের প্রতি অন্যায় করছি।’ তিনি আরও বলেছিলেন, ‘হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর জমানায় নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য জ্ঞানের দরজা খোলা ছিল। [তখন] সেখানে এত অসাধারণ সব নারী ছিলেন যে আমি যদি তাঁদের অবদান সম্পর্কে বিস্তারিত বলতে যাই, তাহলে অনেক সময় লাগবে।’

এই বক্তৃতা ও নিজের সমালোচনার কথা শুনে মোহাম্মদ আব্বাস স্তানিকজাইকে গ্রেপ্তার করতে এবং তাঁর ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন তা'লেবানের সুপ্রিম লিডার হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা। এই পরিস্থিতিতে মোহাম্মদ আব্বাস স্তানিকজাই আফগানিস্তান ত্যাগ করে দুবাই চলে যান।

দ্য গার্ডিয়ানের বরাতে এমন একটি খবর আজ প্রথম আলোতে পরিবেশন করা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রেজেন্ট করা এই খবরের লিংকে ওই মন্ত্রী ও প্রথম আলোকে ধুয়ে দিয়েছে বাঙালি বিদ্বজ সমাজ। তাদের কথা তালেবান যা করেছে ঠিক করেছে। ওই মন্ত্রীর দেশ ত্যাগ খুবই উচিত কাজ হয়েছে। নারীর আবার শিক্ষা কী? তারা আবার মানুষ নাকি?

তো এমন এক সমাজে সুবা নামের ১১ বছরের এক কন্যা শিশু তার টিকটক বন্ধুর সাথে পালিয়ে গিয়ে নওগাঁয় ধরা পড়ার পর ওই মেয়েকেও যাচ্ছেতাই ভাষায় গালিগালাজ শুনতে হচ্ছে। কেউ ভাবছে না অমন এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে তার নিজের মেয়েও পড়তে পারত। যে ফুঁসলিয়ে মেয়েটিকে ঘরের বাইরে নিয়ে গেছে ওই ধুরন্ধর ছেলেটি কারো চোখেই দোষী নয়, যত দোষ কেবল ওই মেয়েটির। কারণ সে মেয়ে। সে অধস্তন। পুরুষের চোখে ঊন মানুষ। নারীর কোনো আলাদা সত্তা থাকতে নেই। সে বরাবর দ্বিতীয় লিঙ্গ। পুরুষ গুরুতর অপরাধ করলেও তার দায় গিয়ে চাপবে কোনো না কোনো নারীর ওপর। নারীর জন্মই যেন আজন্মের পাপ। বিস্ময়করভাবে এই পুরুষ কিনা আবার মায়ের জন্য আদিখ্যেতা দেখায়। 'মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত' -এমন ধর্মকথা শোনায়। সবটাই যে কথার কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় পুরুষের উন্মাতাল ঢেউ দেখলেই বুঝা যায়।

ভাইলোগ সমাজ বাস্তবতার বিকৃতিটা অনুভব করুন। সবার হাতে ফালতু মোবাইল। যেখানে কাজের চেয়ে অকাজ ভয়ানকভাবে বেশি। পরিবার যদি সন্তানকে সময় না দেয়, সে দুষ্টু বন্ধুর কানকথায় মজে যেতে পারে। এর দায় সবার আগে আমাদের বেখেয়াল। কোনোমতেই ওই অবিকশিত মগজধারী শিশুটির ওপর সমস্ত দায় চাপিয়ে নিজেদের অবদমন ও জিঘাংসা মেটানো যায় না। এর কোনো‌ মানেও নেই।

আমরা চাইব অভিভাবকরা ভালো হোক। রাষ্ট্র তার নাগরিকের প্রতি যথার্থ কর্তব্য ফিরে পাক। সমাজ ও সংস্কৃতি সভ্য হয়ে উঠুক। মানুষের প্রতি মানুষের দায়িত্ব ও মমত্ববোধ জাগ্রত হোক। পরিবার নিজের সন্তানকে চোখে চোখে রাখুক। আদর যত্ন করুক। যাতে কোনো দুষ্টগ্রহের খপ্পরে পড়ে শিশুরা বিভ্রান্ত, বেপরোয়া বা ইঁচড়ে পাকা না হয়ে পড়ে।

আপাতত এটাই স্বস্তি মেয়েটিকে উদ্ধার করে নিরাপত্তা হেফাজতে নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সকল কালিমা ভুলে মেয়েটি হয়ত জীবনপথে আবার ঘুরে দাঁড়াবে। ছেলেটিও তার শিশুতোষ ভ্রান্তির কথা ভুলে গিয়ে সত্যিকারের মানুষ হয়ে উঠবে।

ঢালাওভাবে কোনো নারী বা কন্যার গায়ে কালিমা লেপনের আগে মায়ের মুখটা যেন আমরা মনে রাখি। 
মায়ের পবিত্র উদর ছাড়া পুরুষ জীবন মিছে।
আমরা যদি ভালোত্বকে নিজেরা বরণ না করি, খোদ ঈশ্বরও আমাদের জীবন মঙ্গলময় ও কল্যাণময় করে দেবেন না। এটাই ঐশ্বরিক ওয়াদা। কাজেই আগলে না রাখি যদি সকল ভালো, ভয়ঙ্কর খারাপটারে কে আর রুধিতে পারে!

লেখক: সাংবাদিক
৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

Comments

    Please login to post comment. Login