Posts

গল্প

"অদ্ভুত ঘটনা"

February 5, 2025

Tina islam

Original Author শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

47
View

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা "অদ্ভুত ঘটনা" একটি রোমাঞ্চকর এবং রহস্যময় গল্প, যেখানে ঘটনাপ্রবাহ একেবারে অপ্রত্যাশিতভাবে মোড় নেয়। গল্পের মূল চরিত্র এক তরুণী, যিনি কিছু অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে দেখে অবাক হন এবং একসময় পুরো পরিস্থিতি অদ্ভুতভাবে তার জীবনে প্রবাহিত হতে থাকে।

গল্পের শুরুতে, আমরা পরিচিত হচ্ছি একটি শান্ত শহরের সাথে, যেখানে একদল বন্ধু মিলে জমিয়ে গল্পের আসর বসিয়ে, একে অপরকে নানা ধরনের গল্প শুনায়। এর মধ্যে এক তরুণী, শোভা, যিনি খুব চুপচাপ এবং মেধাবী, একদিন তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে গল্পের আসরে বসে ছিলেন। সেদিন সন্ধ্যায়, আকাশে মেঘের গড়ানো এবং দূর থেকে বাজ পড়ছিল। সেই সময়, তারা এক অদ্ভুত, ভয়ঙ্কর গল্প শোনানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

শোভা একসময় একটু হাসতে হাসতেই বললেন, "আজ রাতে, আমি একটি অদ্ভুত ঘটনা ঘটিয়েছি।" তাঁর কথায় সবাই অবাক হয়ে গেল। সবাই খুব কৌতূহল নিয়ে তাঁকে শোনার জন্য প্রস্তুত হয়ে পড়ল। শোভা বললেন, "আমি গতকাল রাতে ঘুমানোর আগে এক আশ্চর্য স্বপ্ন দেখেছিলাম।" তিনি জানালেন, রাতের অন্ধকারে এক অজানা পুরনো বাড়ির দিকে হাঁটতে হাঁটতে গিয়ে তিনি নিজেকে এক অদ্ভুত পৃথিবীতে আবিষ্কার করেন। সেখানে তুষারের মতো সাদা মেঘ ভাসছিল এবং বাতাসে ঠান্ডা লেগে যাচ্ছিল। সেই জায়গাটিতে ছিল অনেক পুরনো ভবন, যার প্রতিটি দেয়াল ছিল পাথর দিয়ে তৈরি এবং প্রতিটি জানালায় অদ্ভুত এক স্নিগ্ধতা ছিল।

হঠাৎ করে, একটি দরজা খুলে যায় এবং সেখানে একটা পুরানো পকেট ঘড়ি রাখা ছিল। শোভা সেই ঘড়িটি তুলে দেখতে পায়, সময় সেখানে একদম থেমে গেছে। কিন্তু ঘড়িটির কাচের ভেতর যেন এক রহস্যময় আলো জ্বলছিল। শোভা তা দেখে অবাক হয়ে পড়েন, তারপর হঠাৎ ঘড়িটির কাচের মধ্যে তার নিজের প্রতিচ্ছবি দেখতে পান, যা একেবারে ভিন্ন এবং অদ্ভুত। তখনই তিনি অনুভব করেন যে, কিছু অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে চলেছে।

এমন সময়, তাঁর চোখের সামনে হঠাৎ করেই এক ঝলক অদ্ভুত দৃশ্য চলে আসে—এক অন্ধকার চেহারা যার মুখ ছিল অস্পষ্ট, কিন্তু তার চোখ দুটি যেন শোভাকে সরাসরি লক্ষ্য করছিল। সে মুহূর্তে শোভার মনে হয়, সে কোথাও হারিয়ে গেছে। অদ্ভুতভাবে, সে চিৎকার করতে গিয়ে হাত থেকে ঘড়িটি পড়ে যায়। ঘড়িটি পড়ে গিয়ে থেমে যায়, আর তখনই চারপাশে অদ্ভুত এক নীরবতা বিরাজ করে।

শোভা জানালেন, ঘড়িটি যখন পড়ে গেল, তখন তার চারপাশে এমন একটি অদ্ভুত শব্দ শোনা যায়, যা কোন মানুষের জন্য নয়। সেটা যেন আরেকটি পৃথিবী থেকে আসা আওয়াজ ছিল। পরক্ষণেই শোভা আবিষ্কার করেন যে, তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন না। বাড়ির ভেতরের প্রবাহিত বাতাস তাকে বাধা দিচ্ছিল। কিন্তু কীভাবে সে বের হবে, তা তার কাছে এক রহস্য হয়ে ওঠে।

কিছুক্ষণ পর, শোভা টের পান যে, ঘড়িটির কাচের মধ্যে আবার নতুন করে সময় চলতে শুরু করেছে। তখনই তার সামনে একটি নতুন দরজা খুলে যায়। সেই দরজা দিয়ে শোভা যখন বেরিয়ে আসেন, তখন তিনি নিজেকে অন্য একটি জায়গায় খুঁজে পান। সে জায়গায় ছিল অনেক মানুষের ভীড়, কিন্তু সকলেই যেন একদম নিস্তেজ এবং নির্বিকার। শোভা তাদের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারেন যে, তারা সবাই কিছু অদ্ভুত কারণে সেখানে এসেছে, এবং তাদের চোখে একই রকম বিভ্রম।

এই সবকিছু শোভার কাছে এক অদ্ভুত ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়। আর সেখান থেকেই শুরু হয় তার আরেক জীবন, যেখানে সে এক ভিন্ন পৃথিবীতে প্রবেশ করেছে এবং নিজেকে এক নতুন জীবনের সন্ধানে খুঁজে বের করার চেষ্টা চালাতে থাকে। অদ্ভুতভাবে, সে ফিরে আসে তার স্বাভাবিক জীবনে, কিন্তু তার মনে একটা প্রশ্ন রয়ে যায়—এটি কি শুধুই স্বপ্ন ছিল, না কি কোন সত্যি ঘটনা?

গল্পটি শোভার অভিজ্ঞতার মধ্যে রয়ে যায়, আর তার বন্ধুরা গল্পটি শোনার পর রীতিমতো অবাক হয়ে যায়। সবাই মনে মনে একে একে ভাবতে থাকে, যে আসলে শোভার দেখা এই অদ্ভুত ঘটনাটি কি শুধু একটি কল্পনা ছিল, নাকি সেটা একেবারে সত্যি ঘটনা?

Comments

    Please login to post comment. Login