Posts

সমালোচনা

নারীর স্বাধীনতা

February 5, 2025

Nasima Khan

30
View

নারীর  স্বাধীনতা 
------নাসিমা খান 
আমি যে স্বাধীনতার কথা বলছি সে স্বাধীনতা নতুন করে বঙ্গভূমি লাভের স্বাধীনতার কথা নয়। আমি যে স্বাধীনতার কথা বলছি সে স্বাধীনতা মানে ব্যভিচারী হওয়ার স্বাধীনতা নয়, অথবা জাঙ্গিয়া হাফ প্যান্ট পরার স্বাধীনতার কথাও নয়। তাহলে বলবেন তো, তাহলে চান কী ম্যাডাম?  
না আমি নারীর অবাধ মেলামেশা করার স্বাধীনতাও চাই না। সারাজীবন একটা বাক্যের ভাব সম্প্রসারণ করে এসেছি, বনেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃকোড়ে। আমি এই কথাটার স্বপক্ষে দাঁড়িয়ে দুটি কথা বলার স্বাধীনতা চাই। 
"দুর্জন বিদ্বান হইলেও পরিত্যাজ্য "-এই কথাটির স্বপক্ষে দাঁড়িয়ে কথা বলার স্বাধীনতা চাই। 
আপনারা বলতে পারেন, আহা! কে আপনাকে বারণ করেছে কথা বলতে?  স্বপক্ষে অথবা বিপক্ষে বলুন। আপনার কথা শোনার জন্য কেউ বসে নেই। 
জগৎ সংসারে এই প্রচলিত মতবিশ্বাসের জন্য আমাদের সকল স্বাধীনতা আজ বিলুপ্ত। আমার ডাইনে বাঁয়ে যেদিকে তাকাই দেখি সকলে স্বাধীনতা পাওয়ার জন্য কেমন কাতর। হায়রে স্বাধীনতা!  সে যে নামে আছে, কিতাবেও আছে কিন্তু ব্যবহারে নেই।  
আপনারা প্রত্যেকে বিশেষ করে আমার বোনেরা স্বামীর পদতলে বেহেশত একথা মানতে রাজি নন। কিন্তু আপনাদের আচরণে এটা স্পষ্ট প্রমাণিত হয়েছে স্বামীদের পায়ের নিচে স্ত্রীদিগের বেহেশত। আচ্ছা আপনিই তো স্বামীকে না খাওয়ায়ে আপনি মুখে কিছু তুলেন না। আর তাদের জন্য ভাত বেড়ে বসে না থাকতে পারলে আপনার মন কেমন কেমন করে। আপনি একবার এর বিপরীতে নিজের অবস্থানটা চিন্তা করে দেখেন ত! আপনার স্বামী আপনার জন্য রান্না করে টেবিলে ভাত বেড়ে বসে আছেন। আপনার জন্য না খেয়ে উৎকণ্ঠিত হয়ে বসে আছেন। আপনার শাড়ি কাপড় আয়রন করে সাজিয়ে রেখেছেন আলমারিতে। আপনি এসেই বলছেন, আহা সারাদিন কী করো যে ঘরদোর এত এলোমেলো? 
আমি জানি আপনার সে সাহস আছে। একা থাকার মনোবলও আছে। সামর্থ্যও আছে। কিন্তু আপনি স্বামীর সাথে এই ব্যবহারটা করার পরে নিজে কতটুকু অতৃপ্তিতে ভুগবেন বুঝতে পারেন? 
আপনি স্বামীর কাছে মনে বাঁধা। অর্থে নয়, সম্পদে নয় এমনকি শক্তিতেও নয়। নারীগণের পুরুষদের প্রতি যে টান সে শুধু টাকার জন্য, বিত্তের জন্য, স্মার্টনেসের জন্য  অথবা আলাপচারিতা, রসবোধের জন্য নয়। সে টান তার আত্মিক, সে টান তার নির্ভরতার। স্বামীর উপর নির্ভর করে যে সুখ, যে তৃপ্তি তা এই বিশ্বের অধিকার নিজ হাতে পেলেও সেই তৃপ্তি নারী পাবেন না। 
আমি নারী বলে যে বলছি তা নয়। কারাগারে, আদালতে, স্কুল কলেজে, অফিসে, সংসারে আমরা সব সময় স্বামীদের অবস্থানটা দেখতে চাই সর্বাগ্রে। 
সুতরাং নারীবাদী বোনেরা এবং নারীবাদী ভাইয়েরা আপনাদের বলছি, নারীদের হৃদয়ের যে কোমলতা তাকে পরিবর্তন করতে হলে প্রত্যেক নারীদের হার্টে যান্ত্রিক মেশিন সরবরাহ করুন। তাহলে সর্বক্ষেত্রে নারীও সমান অধিকারের জন্য সাইনবোর্ড টাঙাক অথবা হ্যান্ডবিল বিলি করুন আমি থাকব আপনাদের সাথে।

পথে ঘাটে স্বামী পরিত্যাক্ত রমনীদিগের যেরূপ আহাজারি দেখি, স্ত্রী পরিত্যক্ত পুরুষদের সেরকম হাহাকার নেই কেন? আহাজারি নেই কেন?  
হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন পুরুষরা যা পারে নারীরা তা সহ্য করার শক্তি রাখে না। স্বামীগণ বিবাহ করে বাসর রাতে স্ত্রীদের একটা কর্তব্যের কথা বিনয়ের সাথে তুলে ধরেন। তার বাবা মা-কে যেন কিছুতেই অযত্ন না করে অথবা সেবাযত্নের ত্রুটি যেন না হয়। আচ্ছা রমনীগণ আপনারা কয়জন স্ত্রী আছেন যে এই কথাটি ইনিয়েবিনিয়ে হলেও বলতে পেরেছেন আপনার বাবা মায়ের যেন অসম্মান না হয়? আপনার বাবা মায়ের যেন অযত্ন না হয়। পারেননি ত?  তাহলে থাক না এই নারী স্বাধীনতা। কেন বিনাকারণে এরকম স্বাধীনতা স্বাধীনতা করে চিৎকার করেন? 
আরে যে নারীদের পিতৃ সম্পত্তিতে সমান অধিকার নেই। বিয়ের পর বাবার বাড়িতে যার থাকার জন্য আলাদা ঘর তৈরি করা হয় না। গোঁ দানের মতো আপনাকে অন্য একটা পরিবারে দান করে দেন আজীবন দাসীবৃত্তি করবার জন্য। সেই স্বাধীনতা দিয়ে আপনি কী করবেন?  যে স্বাধীনতা আপনার পিতা আপনাকে দিতে পারেনি সেই স্বাধীনতা এই সমাজ আপনাকে কী করে দিবে? একজন পুরুষ আপনাকে কী করে দেবে?  রাখুন আপনাদের স্বাধীনতা!  বরং এটাই বিশ্বাস করুন, আপনাদের জন্য স্বামীর দাসত্ব করার ভিতরই রয়েছে আপনাদের পরিচয়, আপনাদের অস্তিত্ব, আপনাদের আত্মতৃপ্তি! 
কয়জন পুরুষ আপনার পরিচয় রক্ষা করবার জন্য হাতে শাখা, কপালে সিঁদুর পরিধান করতে পারবে! বিয়ের পর আপনারা স্বামীর মঙ্গলের জন্য নাকে নাক ফুল পরিধান করেন অনেকে। কিন্তু কয়জন পুরুষ তাদের নাকে নাক ফুল ত দূরে থাক আপনার জন্য নাক কান ছিদ্র করবে? 
এই যে সংস্কৃতি, এই যে ধারা সে শুধু আপনাদের দেশের জন্য সত্য নয়, সমগ্র বিশ্বেই রমনীগণ স্বামীর বশ্যতা স্বীকার করেই জীবন যাপন করেন। অনেক নাস্তিক আছেন যারা ধর্ম নয় বিজ্ঞান নিয়ে মেতে থাকেন। কিন্তু সেই বিজ্ঞানও তাদের পুরুষত্ব গরিমা থেকে টেনে তুলে আনতে পারেনি। তারাও ভিতরে বাইরে আদিগন্ত পুরুষ। 
তাদের হৃদয় কঠিন। অসীম ধৈর্য। তাদের কান্না অশ্রুতে নয় আগুনের ফুল্কিতে প্রকাশ পায় আর রমনীদিগের কান্না অশ্রুতে প্রকাশিত হয়। 
সুতরাং নারীগণ আপনারা নারীই হোন। নারীতেই আপনি সুন্দর। কারণ আপনার সৃষ্টির কাহিনি নারীই রচনা করেছেন। নারী যদি না ধারণ করত, এত টেস্ট টিউব বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করতে বিফল হতো। আর টেস্ট টিউব প্রাণীদের বুদ্ধিমত্তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। 
সুতরাং আপনার জন্য সংসার সবচেয়ে সুন্দর জায়গা। বনেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃকোড়ে।

তবে আমি একটু ভিন্ন জায়গায় দাঁড়িয়ে কথা বলব। স্বাধীনতার মানে সব ক্ষেত্রে একরকম নয়। আপনারা স্বাধীনতা চাইতে পারেন নির্দ্বিধায়। আপনাদের আবাসস্থল যখন ভয়ানক ভাবে খারাপ হয়ে যায় তখন সেই আবাসস্থল পুড়িয়ে দেবার স্বাধীনতা আপনার। আর আমিও এই স্বাধীনতাকামীদের ভিতর সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে যাব। আপনি কাঁদতে কাঁদতে যখন ক্লান্ত হয়ে যাবেন তখনই বুঝে নিবেন আপনার কান্না ভুল জায়গায় হয়ে গেছে। আপনার দুর্বলতা ভুল জায়গায় রচিত হয়েছে। আপনি পিছনে ফেরার জায়গা পাচ্ছেন না তখন আপনি সামনে হাঁটবেন। আমি জানি নারীর ভালোবাসা এত দুর্বল নয় যে সামান্য আঘাতে ভেঙ্গে যাবে। ভাঙতে আপনি চাচ্ছেন না কিন্তু ভেঙে ফেলতে আপনাকে বাধ্য করা হচ্ছে তখন অবশ্যই আপনি এই উক্তিটিকে শক্ত করে ধরে বলবেন, দুর্জন বিদ্বান হইলেও পরিত্যাজ্যা। 
এবং এটা আপনার স্বাধীনতা। আর আমি এই স্বাধীনতার পক্ষে এতক্ষণ ধরে বকবক করে এসেছি। আপনি ধৈর্য ধরে শুনেছেন এই জন্য আমি কৃতজ্ঞ। আপনি পিতার কাছ থেকে অবিচার পেয়েছেন, স্বামীর কাছ থেকে অবিচার পেয়েছেন। সংসার সমাজ আপনাকে কোনো স্বাধীনতা দেয়নি। সন্তানের কাছে আপনি অবসরে বোঝা হয়ে গেছেন। সন্তান বিয়ে দেবার পর আপনার মূল্যায়ন হয়নি। তথাপি সন্তানের দোষ না দিয়ে সন্তানের স্ত্রীর প্রশংসা করে বলছেন, আমার বউমা খারাপ নয়। 
কিন্তু আপনার জোর গলায় বলা উচিত ছিল আপনার সন্তান ভালো নয়। আপনার স্বাধীনতা এখানেও নেই। কারণ আপনি স্নেহের কাছে বন্দী। ছেলের বউ ভালো না খারাপ তার বিচার করবে আপনার সন্তান অর্থাৎ বউয়ের স্বামী। আপনি এটা বিচার করবার কে?  আপনাকে এক গ্লাস পানি দিতে আসার আগে আপনার ছেলের বউ আপনার সন্তানকে শুনিয়ে এসেছে, তোমার মা না একটা ইয়ে এক গ্লাস পানিও ঢেলে খেতে পারে না। 
আসলে অই এক গ্লাস পানি দেবার কর্তব্য ছিল আপনার ছেলের। আপনার ছেলের বউয়ের ছিল ওটা করুণা। তার কর্তব্য নয়। তার বিবাহের কাবিননামার কোথাও নেই, স্বামীর বাবা মায়ের সেবাযত্ন করা তার দায়িত্ব। আপনারা একজনের দায়িত্ব আর একজনের ঘাড়ে চাপিয়ে দেন বলেই আপনারা সারাজীবন নারী। 
বউ ভালো নয় অথবা শাশুড়ী খারাপ একথা আসার প্রশ্নই আসে না। কারণ পরের মেয়েটি স্বামীর জন্য এসেছে আপনার জন্য নয়। আপনার সন্তান খারাপ এই কথা স্বীকার করুন। আর স্বীকার করার শক্তি অর্জন করাই আপনার স্বাধীনতা। নিজের স্বাধীনতা নিজেই ভক্ষণ করে আপনারা যে স্বাধীনতা স্বাধীনতা বলে চিৎকার করেন, আমার কষ্ট হয়। সংসারে অবহেলা আর যন্ত্রণার শিকার হওয়া নারীরাই যুগে যুগে তাদের নিজেদের অধিকার, স্বাধীনতা খর্ব করে এসেছে। 
সাহস করে বলুন, "  দুর্জন বিদ্বান হইলেও পরিত্যাজ্যা "
কোনো না কোনো ভাবে নারী জীবন ভর পুরুষের মুখাপেক্ষী। বিয়ের আগে  পিতার, বিয়ের পর স্বামীর এবং বৃদ্ধ কালে পুত্রের। আপনার সাথে দুর্ব্যবহার করে যতদিন আপনার পিতা, স্বামী এবং সন্তান বেঁচে যাবে ততদিন পর্যন্ত কোনো নারীর স্বাধীনতা অর্জিত হবে না।

ছোট্ট একটা বাক্যকে সামনে রেখে আপনার সন্তানকে বড়ো হতে সাহায্য করুন। আমি এক হিন্দু রমনীর কথা জানি। যার বাবার বিশাল সম্পত্তির কানাকড়িও তার অধিকারে নেই অথচ ভ্রাতৃপ্রেম, পির্তৃপ্রেম দেখে আমি হতবাক হয়ে যায়। এই রমনীদিগের মুক্তি লাভ কী এই বিশ্বে কখনো সম্ভব?  হয়তো নতুন কোনো পৃথিবীতে নতুন কোনো আবাসে রমনীদিগের মন পুরুষদের মনের মতো ইস্পাতের তৈরি হতে পারে। সেদিন রমনীগণ তার স্বামী, পুত্র অথবা পিতার দিকে বৈষম্যতার জন্য চিৎকার করে বলার মানসিক স্বাধীনতা পাবে যে, দুর্জন বিদ্বান হইলেও পরিত্যাজ্যা, সাপের মস্তকে মণি থাকলেও সাপ বিষাক্ত।

Comments

    Please login to post comment. Login