আমি আপনাদের একটা "সত্যি" ভুতের গল্প শোনাব! যারা ভুত কি জানেন না তাদের বলছি। ভুত হচ্ছে এমন একটা অশরীরী আত্মা যাকে দিনের বেলা দেখা যায় না, দেখা যায় না রাতের বেলায়ও। তবে মাঝে মাঝে রাতের বেলা অনুভব করা যায়, আর কখনো কখনো........... দিনের বেলায়ও!
হাহাহাহাহা.........!!!!!!!
যারা ভিষন চমকে উঠেছেন তারা নড়বেন না, কারন, "ইউ আর নট এ্যালন"!!!!
আমি তখন নতুন চাকরি পেয়ে পুরান ঢাকায় বাসা নিয়েছি। বউ থাকে ময়মনসিংহ। যেদিন বাসায় উঠব, রাস্তায় এক বয়স্ক ভদ্রলোক হাত ধরে বললেন,
- এই বাসায় উঠছেন?
- জ্বী।
ভদ্রলোক ফিসফিস করে বললেন,
- সাবধানে থাকবেন, আপনি কিন্তু একা না!
জিনিস-পত্র গোছাতে গোছাতে রাত হয়ে গেল, তাই গেটে তালা দিয়ে হোটেলে গেলাম ভাত খেতে। মনে হলো বউকে একটা ফোন দেই, নিশ্চই চিন্তা করছে। কিন্তু পকেটে হাত দিয়ে ফোনটা পেলাম না। কি আশ্চর্য ফোনটা যতদূর মনে পরে নিয়েই তো বেড় হলাম, কোথায় গেলো? আশে পাশে কোথাও ফোনটা পেলাম না। বাধ্য হয়ে হোটেলের ফোন থেকে আমার নাম্বারে ফোন দিলাম। দুইটা রিং বাজতেই ওপাশ থেকে একটা নারী কন্ঠ ভেসে এলো, "ইউ আর নট এ্যালন"! তারপর লাইনটা কেটে গেলো। কয়েকবার চেষ্টা করেও আর কানেক্ট করতে পারলাম না! বুঝলাম ফোনটা খোঁয়া গেছে!
মন খারাপ করে বাসায় ফিরলাম, বউকে যে জানাবো ঠিকঠাক পৌছেছি তাও হলো না, নিশ্চই খুব দুশ্চিন্তা করবে! ভাবতে ভাবতে ঘরে ঢুকেই চমকে উঠলাম, টেবিলের উপরে ফোনটা পরে আছে। ভয়ে ভয়ে রান্নাঘর, টয়লেট, বারান্দা, ষ্টোর আর শেষ পর্যন্ত বিছানার নিচেও খুঁজে ফেললাম, কোথাও কেউ নেই!
কিন্তু কেউ যে ছিল টের পেলাম যখন মশারীর ভিতরে ঢুকে লাইট বন্ধ করে বিছানায় মাথাটা রাখতেই মনে হলো কে যেন ঘরের ভিতরে হাটছে। ওর নিশ্বাসের শব্দ এমন কি গলা খাকরিও শুনতে পেলাম খুব ভালো ভাবে। সাহস করে লাইট জ্বালাতে পারছিলাম না, মনে হচ্ছিল কাউকে দেখে ফেলব। কিন্তু কেউ একজন যখন মশারী তুলে ভিতরে ঢুকার চেষ্টা করতে লাগল তখন আর লাইট না জ্বালিয়ে পারলাম না! কিন্তু, কোথাও কেউ নাই!
সাথে সাথে বউ কে ফোন দিয়ে ঘুম ভাঙালাম আর সকালেই চলে আসতে বললাম। ভয়ে ভয়ে সারা রাত লাইট জ্বালিয়ে বসে রইলাম।
সকালে অফিসে যাওয়ার পথে বাড়িওয়ালাকে চাবি দিয়ে বললাম আমার বউ এলে যেন দিয়ে দেয়।
বেলা ১১টার দিকে বউ ফোন করল,
- এই, আমরা চলে আসছি। খুব সুন্দর বাসা নিয়েছো তো!
* বাসা পছন্দ হয়েছে?
- হবে না?
* গুড! বাসা চিনতে সমস্যা হয়নি তো?
- নাহ্, রাস্তাত খুব সোজা। আচ্ছা শোনো, বাসায় তো কিছুই নেই, আমরা খাব কি?
- আমরা বাইরে খাবো, আমি আধাঘন্টার মধ্যেই আসছি।
বাসায় এসে দেখি গেটে তালা। ভাবলাম মনে হয় ছেলেটার খিদা পেয়েছিল, তাই হয়ত ওকে বাইরে নিয়ে গেছে খাওয়ানোর জন্য। বাড়িওয়ালার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
- লাবন্য কি চাবি দিয়ে গেছে?
- লাবন্য এসেছে নাকি, কই? চাবি নিতে আসেনি তো!
আমি কেমন অবস হয়ে গেলাম। এসব কি হচ্ছে! পকেট থেকে ফোন বেড় করে বউকে ফোন দিলাম,
- হ্যালো, তুমি কোথায়?
- আমি তো এখনও মাইমেনসিং, সকালের বাসে টিকেট পাইনি। মোবাইলেও টাকা নাই যে তোমাকে জানাব। এখন বাস স্ট্যান্ডে যাচ্ছি। দুপুরের বাসে আসবো!
- আচ্ছা, ঢাকায় পৌছে ফোন দিও।
ঠাস্ করে ফোনটা রেখে দিলাম! সবকিছু যেন কেমন আবোল তাবোল লাগছিল! বাড়িওয়ালা জিজ্ঞেস করলো আমাকে এমন লাগছে কেন? কিছু হয়নি বলে মাতালের মত টলতে টলতে অফিসে চলে গেলাম। কাজে মন দিতে পারছিলাম না! গা গুলাচ্ছিলো, একটু জ্বর জ্বরও লাগছিলো!
বউকে নিয়ে যখন বাসায় ফিরলাম তখন অলরেডি সন্ধা পেরিয়ে গেছে। বউ হাত মুখ ধুয়ে রান্নায় লেগে গেলো আর আমি ছেলের সাথে খেলায় মেতে উঠলাম।
রান্না হতে বেশি সময় লাগলো না! আমার বউ মফস্বলের মেয়ে, রান্নাটা বেশ ভালোই জানে! তারাতারি খাওয়া দাওয়া করে শুয়ে পরলাম। ওরা বেশ টায়ার্ড ছিল। আমার উপর দিয়েও কম ধকল যায়নি। শুতেই সাথে সাথে ঘুমিয়ে পরলাম। কতক্ষন ঘুমিয়েছি জানি না! হঠাৎ ভিষন ঠান্ডা একটা হাত গায়ের উপর পরতেই ঘুম ভেঙে গেলো। তাকিয়ে দেখি দুটো জ্বল জ্বল চোখ আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে, ওর নিঃশ্বাস আমার গায়ের উপরে পরছিল। চিৎকার করে লাইট জ্বালালাম। বিছানা একদম ফাঁকা। কোথাও কেউ নেই!!!!
📌সমাপ্ত