Posts

গল্প

অনন্তের প্রহর

February 6, 2025

GSB Enterprise

129
View

শ্যামল, কুড়ি পেরোনো এক তরুণ, রিক্স চালায় ঢাকার রাস্তায়। দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পেডেল ঘুরিয়ে যা কামাই করে, তাতে কোন মতে চলে তার ছোট পরিবারের জীবন। বাবা অসুস্থ, মা সারাদিন রান্না করে আর ছোট বোনটা পড়াশোনা করে। শ্যামলের কাঁধে অনেক দায়িত্ব, কিন্তু কষ্ট করে যাওয়াটাই তার অভ্যাস। দারিদ্র্য তাকে কুঁড়ে খায়, কিন্তু তার অদম্য মনোবল আর পরিশ্রম করার ক্ষমতা তাকে আরও শক্ত করে তোলে।

অন্যদিকে, নদী, শহরের এক নামজাদা শিল্পপতি রশীদের মেয়ে। বড় বাড়িতে থাকে, দামী গাড়িতে ঘোরে, কিন্তু তার মনে কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা আছে। বাবা ব্যস্ত ব্যবসা নিয়ে, মা সমাজ সেবা আর পার্টি নিয়ে। নদীর কাছে দামী পোশাক, গয়না সবই আছে, কিন্তু একাকিত্ব আর নীরবতা তার চারপাশে যেন জড়িয়ে আছে।

একদিন, বৃষ্টি ঝরা সন্ধ্যায়, নদী তার গাড়িতে যাচ্ছিল কোথাও। হঠাৎ রাস্তায় জ্যাম, আর তার গাড়ি থমকে দাঁড়ালো। বৃষ্টি আরও জোরে নামলো, আর নদী গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো রাস্তার পাশে। হালকা হাওয়া আর বৃষ্টির ফোঁটা তার মুখে লাগছিল, যেন প্রকৃতি তাকে আহ্বান জানাচ্ছিল।

ঠিক তখনই, শ্যামল তার রিক্স নিয়ে সেখান দিয়ে যাচ্ছিল। নদীর দিকে তাকিয়ে থমকে গেল সে। বৃষ্টিভেজা নদীকে দেখে তার মনে যেন এক অজানা অনুভূতি জাগলো। নদীও শ্যামলের দিকে তাকাল, আর তাদের চোখে চোখ মিলল। সেই মুহূর্তে যেন সময় থেমে গেল, আর তাদের মধ্যে এক নীরব যোগাযোগ তৈরি হল।

এরপর থেকে তাদের দেখা হতো প্রায়ই, সেই বৃষ্টিভেজা রাস্তাতেই। কখনও কথা হতো, কখনও শুধু এক পলকের দেখা। তাদের মধ্যে একটা অদ্ভুত ভালবাসা জন্ম নিয়েছিল, যা তারা দুজনেই বুঝতে পারছিল, কিন্তু প্রকাশ করতে পারছিল না।

নদী শ্যামলের সরলতা আর পরিশ্রম করা দেখে মুগ্ধ হয়েছিল। আর শ্যামল, নদীর ভেতরের একাকিত্ব আর নীরবতাকে অনুভব করে তার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছিল। তাদের ভালবাসা ছিল যেন দুই ভিন্ন বিশ্বের মিলন, এক অজানা আকর্ষণ।

কিন্তু তাদের পথ টা সহজ ছিল না। নদীর বাবা ছিলেন একজন ধনী আর প্রভাবশালী ব্যক্তি। তিনি কখনও চাইতেন না তার মেয়ে একটা গরিব রিক্স চালকের সাথে সম্পর্ক রাখুক। অন্যদিকে, শ্যামলের পরিবারের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছিল। তার বাবার অসুস্থতা বেড়েছিল, আর বোনের পড়াশোনার খরচ যোগানো কঠিন হয়ে পড়েছিল।

একদিন, নদীর বাবা তাদের সম্পর্কের কথা জেনে গেলেন। তিনি রেগে গিয়ে নদীকে অনেক কথা বললেন, এবং শ্যামলকে তাদের জীবন থেকে চলে যেতে বললেন। নদী কান্না করল, কিন্তু তার বাবার কাছে সে কিছু বলতে পারল না। শ্যামল বুঝতে পারল, তাদের ভালবাসা যেন এক অসম্ভব স্বপ্ন। সে নদীর সুখের জন্য নীরবে চলে গেল শহর ছেড়ে, দূরে কোথাও।

অনেক বছর পেরিয়ে গেল। নদী বিয়ে করেছিল, কিন্তু তার মনে শ্যামলের স্মৃতি ছিল অম্লান। শ্যামল অনেক কষ্ট করে নিজের একটা ছোট ব্যবসা দাঁড় করিয়েছিল, কিন্তু নদীর কথা সে কখনও ভুলতে পারেনি।

একদিন, নদী শুনল শ্যামল আবার শহরে ফিরে এসেছে। সে খুব উত্তেজিত হয়ে শ্যামলের সাথে দেখা করতে গেল। কিন্তু যখন তারা দেখা করল, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। নদী তখন এক সন্তানের মা, আর শ্যামল তার কাজের মধ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে। তাদের মধ্যে কথা হলো, অনেক ক্ষণ নীরবতা ছিল, আর শেষে তারা একে অপরকে বিদায় জানালো। তাদের ভালবাসা ছিল অনন্ত, কিন্তু তাদের মিলন ছিল যেন এক অসম্ভব স্বপ্ন, যা কখনও পূরণ হলো না। তাদের গল্প একটা অপূর্ণ প্রেমের গল্প হয়ে থেকে গেল, অনন্তের প্রহরে।

Comments

    Please login to post comment. Login