Posts

চিন্তা

বিপ্লবের সাথে সাংস্কৃতিক নিধন পুরোদস্তুর সাংঘর্ষিক

February 7, 2025

ফারদিন ফেরদৌস

18
View

আপনারা এই বলছেন, মুক্তিযুদ্ধ মানেই বাংলাদেশ! পরক্ষণেই আবার বলছেন, ভারতের যোগসাজশে শেখ মুজিব পাকিস্তান ভেঙে ছারখার করেছেন। আচ্ছা, আপনাদের কথা মেনে নিলাম। পবিত্র পাকিস্তান ভেঙে স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ে শেখ মুজিব বিরাট অপরাধ করেছেন, সেজন্য তো তাঁর স্ত্রী, পরিবার, পুত্র, স্বজনসহ রাতের আঁধারে বাসায় গিয়ে অতর্কিতে হামলা চালিয়ে মেরে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়েছে। তারপরও মুজিবের ইটকাঠের নিরুপদ্রব বাড়ির প্রতি এত রাগ ও ঘৃণা থাকে কী করে? মুজিব তাঁর ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করে নিয়েছেন পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট। মানে একজনের বিচার আপনারা কয়বার করবেন? তাহলে কে বেশি আধিপত্যবাদী? কারা বেশি গণতন্ত্র ও মানবতাবিরোধী?

বিদেশে বসে শেখ হাসিনা রাজনীতি করছেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান বিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন এবং ছাত্র-জনতাকে ‌অপমান করছেন; ইত্যাকার নানাবিধ কার্যকরণ খুলে বলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ধানমন্ডি ৩২ ভাঙ্গার ঘটনাকে অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিত বলেছেন। কারণ তিনি জানেন, ঐতিহাসিক স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়া জেনোসাইডাল ক্রাইম এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গণহত্যার জন্য যেমন তৎকালীন স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা ও তাঁর অনুবর্তীরা আইনের আওতায় আসবেন, আদালতের দেয়া শাস্তি তাঁদেরকে মানতে হবে তেমনি একইভাবে ৩২ ভাঙার অপরাধও তামাদি থাকবে না।

ঐতিহাসিক স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়া কি‌ আন্তর্জাতিক অপরাধ? হ্যাঁ, ঐতিহাসিক বা সাংস্কৃতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংস করা আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এটি নির্ভর করে ধ্বংসের কারণ, প্রেক্ষাপট, এবং আন্তর্জাতিক আইন কীভাবে সেটিকে সংজ্ঞায়িত করে।

আন্তর্জাতিক আইনে ঐতিহাসিক স্থাপনা ধ্বংস সংক্রান্ত অন্যতম বিধানসমূহ:
১৯৫৪ সালের হেগ কনভেনশন: "Convention for the Protection of Cultural Property in the Event of Armed Conflict" অনুযায়ী, যুদ্ধ বা সংঘাতের সময় সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক স্থাপনা ধ্বংস করা একটি আন্তর্জাতিক অপরাধ।

১৯৯৮ সালের রোম স্ট্যাচুট (ICC - আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত): এর ৮(২)(বি)(৯) ধারা অনুযায়ী, "ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক বা ধর্মীয় স্থাপনা ধ্বংস করা" যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে, যদি এটি সামরিক প্রয়োজনের বাইরে হয়ে থাকে।

ইউনেস্কো কনভেনশন: ইউনেস্কো সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য কঠোর নীতিমালা অনুসরণ করে, এবং সদস্য রাষ্ট্রদের সাংস্কৃতিক স্থাপনা সংরক্ষণে বাধ্য করে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সম্প্রতি গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনী কর্তৃক ২০০টিরও বেশি ঐতিহাসিক স্থাপনা ধ্বংসের ঘটনা আন্তর্জাতিক মহলে "সাংস্কৃতিক গণহত্যা" হিসেবে নিন্দিত হয়েছে।

ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের মতো ঐতিহাসিক স্থাপনা ধ্বংসের ঘটনা আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় কোনো সুকৃতি হিসেবে বিবেচিত হবে না। এ ধরনের কর্মকাণ্ড একটি জাতির সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের ওপর আঘাত হানে, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিন্দার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

সর্বোপরি আধিপত্যবাদী শাসন পরিবর্তন করে দেয়া বীর বিপ্লবীরা কেন সাংস্কৃতিক নিধনে জড়িত হয়ে পড়বে? তাঁদের প্রধানতম দায় ও কর্তব্য সাম্যবাদী ও কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। যাতে অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশ ও মানুষ সম্মান ও মর্যাদায় বিশ্বসভায় জায়গা পাকাপোক্ত করতে পারে।

লেখক: সাংবাদিক 

৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

Comments

    Please login to post comment. Login