সুমনা আনমনে বসে ছিল বারান্দায়, শরৎকালের বিকেলে হালকা বাতাসে গাছের পাতাগুলো খসখস শব্দ করছিল। তার হাতে ছিল একটা পুরনো ডায়েরি, পাতাগুলো মলিন হয়ে গেছে, কিন্তু স্মৃতিগুলো এখনও জীবন্ত। ডায়েরিটা তার মায়ের ছিল, যখন তিনি বেঁচে ছিলেন, প্রায়ই লিখতেন তাতে নানা কথা।
সুমনা পাতা উল্টে গেল, একটা বিশেষ পৃষ্ঠায় চোখ আটকে গেল। সেখানে লেখা ছিল নীল প্রজাপতির কথা। মা লিখেছিলেন, নীল প্রজাপতি নাকি সৌভাগ্যের প্রতীক, কারও জীবনে একবার উড়ে এলে অনেক সুখ আর আনন্দ নিয়ে আসে।
সুমনার মনটা খারাপ হয়ে গেল। মায়ের মৃত্যুর পর তাদের জীবনে তো আর সুখ আসেনি। বরং একের পর এক কষ্ট যেন তাড়া করে ফিরছিল। বাবার অসুস্থতা, অভাব, আর সবশেষে তার নিজেরও একাকিত্ব - সবকিছু মিলিয়ে জীবনটা যেন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল।
সে দীর্ঘশ্বাস ফেলল, ডায়েরিটা বন্ধ করে উঠে দাঁড়াল। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখল, সূর্য অস্তাচলে, মেঘগুলো লাল রঙে ভেসে যাচ্ছে। হঠাৎ তার চোখে পড়ল একটা নীল প্রজাপতি।
প্রজাপতিটা উড়ে এসে তার সামনে দাঁড়ানো ফুলের টবে বসলো। সুমনা অবাক হয়ে দেখল, প্রজাপতির ডানায় সূর্যের আলো পড়ে চিকচিক করছে। সত্যিই কি এটা সৌভাগ্যের প্রতীক?
সে এগিয়ে গেল, আলতো করে প্রজাপতিটাকে ছুঁলো। প্রজাপতিটা উড়ে গেল না, যেন তার স্পর্শের জন্যেই অপেক্ষা করছিল। সুমনা হেসে ফেলল, এক অদ্ভুত ভালোলাগা অনুভব করলো।
পরের দিন থেকে সুমনার জীবনে পরিবর্তন আসতে শুরু করলো। বাবা ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠলেন, তাদের আর্থিক অবস্থারও উন্নতি হল। আর সুমনা? সে খুঁজে পেল নতুন করে বাঁচার মানে।
সে ছবি আঁকতে শুরু করলো, তার আঁকাগুলোতে ফুটে উঠল প্রকৃতির রূপ, নীল প্রজাপতির স্বপ্ন। তার ছবিগুলো পরিচিত মহলে প্রশংসা পেল, এমনকি একটা প্রদর্শনীতেও তার ছবি স্থান পেল।
সুমনা এখন সুখী, তার জীবনে আনন্দ আর সাফল্যে ভরে উঠেছে। নীল প্রজাপতি সত্যিই তার জীবনে সৌভাগ্য নিয়ে এসেছিল।
এই গল্পটি আশা, বিশ্বাস, আর ভাগ্যের প্রতীক নীল প্রজাপতির মাহাত্ম্য তুলে ধরে। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে জীবনে খারাপ সময় আসলেও, আশা ছাড়লে চলবে না। হয়তো কোনো এক সময়, কোনো এক মুহূর্তে, নীল প্রজাপতি এসে আমাদের জীবনেও সৌভাগ্য নিয়ে আসবে।
306
View