Posts

নিউজ

হিটলারের জার্মানিতে ২৫ হাজারের বেশি বই পোড়ানো হয়েছিল

May 18, 2024

নিউজ ফ্যাক্টরি

Featured Image
হিটলারের নাৎসি জার্মানিতে ৯১ বছর আগে ২৫  হাজারের বেশি বই পোড়ানো হয়েছিল। ১৯৩৩ সালের ১০ মে ‘আন-জার্মান’ নাম দিয়ে বিশ্ব সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য বই পুড়িয়ে দেয়া হয়। নাৎসি মতবাদকে সমর্থন করে না যেসব বই, সেগুলোকে আন-জার্মান নাম দিয়েছিল তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী। বই পোড়ানোর এই উৎসবে প্রচুর শিক্ষার্থী উৎসাহের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল। 

১৯৩৩ সালের ১০ মে সন্ধ্যায় বার্লিনের অপেরা স্কোয়ারে বই পোড়ানোর মূল উৎসবটি শুরু হয়েছিল। নাৎসি মতাদর্শের সমর্থনে জার্মান স্টুডেন্টস ইউনিয়ন ঘৃণ্য এই কাজটি করেছিল। ২৫ হাজারের বেশি বই সেখানে নেয়া হয়েছিল।  

হাজার হাজার দর্শকদের উপস্থিতিতে ৫ হাজারের মত শিক্ষার্থী বইগুলোতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল। বই পোড়ানোতে সাহায্য করার জন্য অগ্নিনির্বাপক কর্মীরাও সেখানে উপস্থিত ছিল। বই পোড়ানোর এই উৎসবটি কেবল বার্লিনেই সীমাবদ্ধ ছিল না। জার্মানির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক সপ্তাহজুড়ে তা অব্যাহত ছিল।  

১০ মে বই পোড়ানোর দিন ঘটনাস্থলে এমিল ও গোয়েন্দা বাহিনীর লেখক এরিখ কেস্টনারও উপস্থিত ছিলেন। তিনি স্বচক্ষে দেখেছেন ভয়ানক এই দৃশ্য। তিনি এটিকে ন্যাক্কারজনক একটি ঘটনা বলে উল্লেখ করেছিলেন।

এই ঘটনার পর অনেক লেখকই জার্মানি ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। তবে যারা দেশটিতে ছিলেন, তাদের অনেককেই জেলে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে তারা মারা গিয়েছেন, নতুবা তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল।     

আন-জার্মান বইয়ের তালিকায় বেশিরভাগই ইহুদী লেখকদের বই ছিল। তবে বামপন্থী, অসাম্প্রদায়িক এবং নাৎসি মতাদর্শের সমালোচক লেখকদের বইকেও কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। 

বের্টোল্ট ব্রেখট, এরিখ কেস্টনার, এরিখ মারিয়া রেমার্ক, হাইনরিখ মান, কার্ট টুচলস্কি, আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, এইচ জি ওয়েলস, ফ্রানৎস কাফকার মত লেখকদের বইও আন-জার্মান ক্যাটাগরিতে ফেলা হয়েছিল। এমনকি আলবার্ট আইনস্টাইন,  সিগমুন্ড ফ্রয়েড, কার্ল মার্কস, ফ্রেডরিখ এঙ্গেলসের বইও তাদের টার্গেট ছিল। সব মিলিয়ে ১০০ জনের মত জার্মান এবং ৪০ জনের বেশি বিদেশি লেখকের বই আন-জার্মান হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল।  

বই পোড়ানোর এই ঘটনার প্রায় ১০০ বছর আগে জার্মান কবি হেনরিখ হেইন তার ‘ট্রাজেডি আলমানসুর’ নাটকে বই পোড়ানোর বিপদ নিয়ে সতর্ক করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, ‘যেখানেই তারা বই পুড়িয়ে দেবে, শেষ পর্যন্ত মানুষকেও তারা পুড়িয়ে ফেলবে।'  

নাৎসি জার্মানিতে তার এই কথাই মর্মান্তিকভাবে সত্য প্রমাণিত হয়েছিল। ১৯৩৩ সালের জানুয়ারিতে হিটলার ক্ষমতায় আসার কয়েক মাস পর এই ঘটনা ঘটেছিল। এর মাধ্যমেই শুরু হয়েছিল নির্মম এক শাসনের, যা শত শত লেখককে নির্বাসনে যেতে বাধ্য করেছিল এবং লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করেছিল। 

এই উৎসবের ভিত্তিটি তৈরি করেছিল জোসেফ গোয়েবলসের প্রপাগান্ডা মন্ত্রণালয় এবং রাজনৈতিকভাবে অনুগত ছাত্র সংগঠনগুলো। তাদের অভিযোগ ছিল, রাষ্ট্র জয় করা হয়েছে কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নয়।   

নাৎসিরা জার্মানির ইন্টেলেকচুয়াল প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজেদের আয়ত্ত্বে আনার চেষ্টা করেছিল। তাদের এই প্রচেষ্টায় অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। বই পোড়ানো উৎসবে কেবল সাধারণ মানুষ অংশ নিয়েছিল তা নয়। সরকার থেকে অর্থনৈতিক লাভের আশায় বই বিক্রেতা সমিতিও এতে যোগ দিয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও অনেকেই এতে অংশ নিয়েছিলেন।     

সূত্র: ডি ডাব্লিউ, টাইমস অব ইন্ডিয়া  

Comments

    Please login to post comment. Login