Posts

গল্প

মিরা,মিরারস্বামি,মিরার বড় বোন হিরা,মিরার শাশুড়ী, হিরার স্বামী, পাড়াপ্রতিবেশি

February 9, 2025

mousumi akter mousumi

Original Author মিরার চোখে রক্ত

Translated by বাংলা

59
View

রাজনগর গ্রামের মেয়ে মিরা, মা,বাবা, বড় বোন নিয়ে ছোট্ট সংসার তাদের।বড় বোনের নাম হিরা,খুব অল্প বয়সে হিরা স্বামীর ঘরে চলে যায়।মিরা তখন সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে। খুব ভালোই দিন যাচ্ছিল মিরার।সারাদিন হাসি খেলায় মেতে থাকত মিরা,,,,কিছু দিন যেতে না যেতেই মিরার সংসারে নেমে আসে অন্ধকার।
মিরার বাবা হঠাৎ করে অসুস্থ  হয়ে পরে,, কিছু দিন যেতে না যেতেই মিরার বাবার শরীর আরো খারাপ অবস্থায় পরিনত হয়ে যায়,,ডাক্তারের কাছে গিয়ে জানতে পারে তার মরনব্যধি রোগ কেন্সার হয়েছে,,মিরার পরিবারে নেমে আসল অন্ধকারের কালো ছায়া। কোন কিছু বুঝার আগেই এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যায়।মিরার মা ছিল খুব  সহজসরল,,, কি ভাবে কি করবে সে বুঝতে পারছিল না,,, মিরা ও এ দিকে যৌবনে পা রাখল,,চার দিকের কিছু খারাপ লোকের নজর তার উপর এসে পরল,,ওই দিকে হিরার সংসারে টাকা পয়সার অভাবহিরার স্বামী ছিল নেশায় আসক্ত,,,তাই হিরা, মা বোনের পাশে দাঁড়াতে পারছিল না।তার নিজের স্বামীই মিরাকে নিয়ে উল্টা পাল্টা কথা বলত,,তাই মা বোনের কাছ থেকে নিজেকে ওতার স্বামী কে দূরে রাখার চেষ্টা করত।এদিকে মিরার মা কীভাবে কি করে মিরাকে ও সংসার ঠিকিয়ে রাখবে ভেবে পাচ্ছিল না,,, মানুষ মিরাকে নিয়ে উল্টা পাল্টা কথা বলতে লাগল।কেউ আবার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসল।মিরা দেখতে খুব সুন্দর ছিল তাই মিরাকে নিয়ে মিরার মা অনেক সপ্ন দেখত,,মিরাকে খুব ভালো ও বড় ঘরে বিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে ছিল তার,কিন্তু মানুষের কু নজরে সেই সপ্ন পূরণ হবে না বুঝতে পেরে মিরার মা মিরাকে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল,,পাশের গ্রামের একটা মধ্যে বিত্ত পরিবার থেকে বিয়ের প্রস্তাব যখন আসল মিরার মা সাত পাঁচ না ভেবে রাজি হয়ে গেল মিরার মা।মিরার বাবার কিছু জমানো টাকা মিরার মা সঞ্চয় করে ছিল,তা ছাড়া মিরার বাবার পরিবারের কেউ না থাকলেও মিরার এক মামা ছিল যিনি মিরার মাকে সব দিক দিয়ে সহযোগিতা করত,তিনি মূলত মিরার বিয়ের বিষয় টাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল,,, এই বিয়েতে হিরার স্বামী ও কিছু টা সহমত ছিল,, কারণ মিরার সাথে টিক করা পাত্র খুবই ভালো ব্যবহার করত,, তাই হিরার স্বামী এই বিয়ে তে সহযোগিতা করল,মিরা সংসার বলতে তখন ও কিছু বুঝেনা,,সে-তো মহা খুশি,, দিদির মতো করে সেও পালকিতে করে স্বামীর ঘরে যাচ্ছে  সে,কিন্তু এই স্বামীর ঘরেই যে তার জীবনে নেমে আসবে আরও অন্ধকার সে  তো আর সেটা জানতোনা,স্বামীর ভালোবাসায় সে যেনো এক অন্যরকম পৃথিবীতে বাসকরতে থাকল,,কিছু দিন যেতে না যেতেই মিরার শাশুড়ী বলতে শুরু করল তার একজন সাথী চাই,,,মানে তিনি নাতি নাতনী দেখতে চাই।কিন্তু মিরা তখনও ১৮ তে পা রাখলনা,,
এই চিন্তা ভাবনায় মিরার জীবন কাল হয়ে দাঁড়ালো,,মিরা কিছু না বুঝলেও স্বামী ও শাশুড়ী কে সে খুব মানতো,,মিরার স্বামীর মুটামুটি অনেকটা বয়স হইছে তখন,তাই সে ও চাই তার একটা সন্তান দরকার,,দেখতে দেখতে ১বছর পার করল মিরা তার স্বামীর সংসারে,এদিকে তার শাশুড়ী দিন দিন খুব খারাপ ব্যবহার করতে শুরু করল। স্বামী সবকিছুই দেখত কিন্তু কিছুই বলতনা।মিরার কষ্টের দিন আস্তে আস্তে বেড়েই চলল,শাশুড়ী মিরাকে ঠিক মতো খাবার টাও দিতনা,মিরা অনেকবার মাকে গিয়ে বলার চেষ্টা করলে তিনি তা শুনতে চাইলনা,বলত স্বামীর সংসার এভাবেই করতে হয়,সবকিছু মানিয়ে গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা কর,এদিকে স্বামী ও তাকে খুব কথা শুনাতে থাকল।মিরার সাথে তার শাশুড়ি এবং স্বামী এতটাই খারাপ ব্যবহার করতো যে, মিরা কাউকে বুঝাতে পারছিল না। মিরার শাশুড়ি তাকে ঠিকমতো খাবার-দাবারও দিত না। সারাদিন  কাজ করার পরও মিরা তার শাশুড়ী  এবং স্বামীর মন পেতনা। দেখতে দেখতে আরো অনেকগুলা বছর পার হয়ে গেল। এক সময় লাল টুকটুকে মিরার চেহারার দিকে তাকানো যেত না,  এতটাই মলিন হয়ে পড়েছিল তার চেহারা। মিরার শাশুড়ি এবার তার ছেলেকে ২য় বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। মিরা এই বিষয়ে কিছুই জানতনা,,মা ছেলে প্রতিদিন রাতে কি নিয়ে যেন বৈঠক করে, মিরা সেটা দেখতে পাই কিন্তু কিছুই বুঝতে পারে না। একদিন সকালে মীরার শাশুড়ি মীরাকে বলল আজকে একটু ভালো মন্দ রান্না কর বাড়িতে মেহমান আসবে,, মীরা তার শাশুড়ির কথা মত বাড়িতে ভালো খাবার রান্না করলো,,, কিছুক্ষণ পরে বাড়িতে কিছু লোক আসল,,তাদের সাথে হিরার স্বামী ও ছিল। মিরা তার বোনের স্বামীর সাথে কথা বলতে চাইলে হিরার স্বামী মিরাকে এড়িয়ে চলে গেল। মিরা কিছু বুঝতে না পেরে নিজের স্বামীর কাছ থেকে জানতে চাইল।কিন্তু মিরার স্বামী এই বিষয়ে কিছু না বলে, মিরার সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করে চলে গেল বাড়ির বাইরে। মিরার শাশুড়ী মিরাকে সারাদিন চোখে চোখে রাখতে শুরু করল। এদিকে পাড়াপ্রতিবেশিরা মিরার দিকে তাকিয়ে কি বলাবলি করে মিরা সেটা বুঝতে পারলে ও কি বিষয় নিয়ে কথা বলে সেটা জানতে পারে না।
মিরা কোনো ভাবেই কারো সাথে কথা বলতে পারছিল না তার শাশুড়ীর চোখ ফাঁকি দিয়ে, ওই দিকে হিরা সব জানতে পারে, কিন্তু তার স্বামী তাকে কোনোভাবেই মিরার সাথে যোগাযোগ করতে দিচ্ছিল না।হিরা তার মায়ের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে  
তাতেও তার স্বামী বাধা দেয়। হঠাৎ একদিন মিরার স্বামী নগরে যাই, মিরা তার স্বামীর কাছ থেকে জানতে চাই সে কেন নগরে যাচ্ছে,, কিন্তু সে কোন উত্তর পাইনি তার স্বামী তাকে কিছু না বলেই চলে যায়। মিরা বুঝতে পারছিল কিছু একটা হতে চলছে 
কিন্তু কোন বিষয়ে সে কোন কিছু জানতে পারছিল না। হীরা খুবই কান্নাকাটি করছিল এবং  স্বামীর হাতে পায়ে ধরে মিরার জন্য অনুরোধ করেছিল। হীরা তার স্বামীকে কে অনুরোধ করলো এই বিয়ে বন্ধ করার জন্য, হিরার স্বামী সেটা মানতে চাইলো না,।
মিরা তার শাশুড়ীকে বলল আমি আমার বাবার বাড়িতে যেতে চাই,, মিরার শাশুড়ি উত্তরে বলল, আজ নয় কিছুদিন পর তোমাকে আমি নিজেই দিয়ে আসবো। মিরা এবারও কিছু বুঝতে পারল না তার শাশুড়ি বাবার বাড়িতে কখনোই যেতে চাই না কিন্তু এবার কেন এই কথা বলল। সবকিছুই কেমন যেন উলটপালট হয়ে যাচ্ছে, ২৪ দিন যেতেই তার স্বামী অনেক গুলো ব্যাগ হাতে নিয়ে মীরার শাশুড়ির ঘরে ঢুকলো। সাথে সাথে মীরার শাশুড়ি ঘরের দরজা বন্ধ করে দিল এবং অনেকক্ষণ ধরে কি জানি কথা বলল।মিরা ওই দিকে এগিয়ে যেতেই দেখল তার স্বামী খালি হাতে বাইরে আসছে, মিরা তার স্বামীর কাছ থেকে জানতে চাইল সে নগরে কেন গেল এবং হাতে করে কি নিয়ে আসলো। মিরার স্বামী মিরাকে একটা ধমক দিয়ে বলল এত কিছু জানতে আসিসনা,যেভাবে বলবো সেভাবে কাজ করিস, কালকে বাড়িটাকে ভালো করে পরিপাটি করে রাখিস। আমার কিছু মেহমান আসবে,,মিরা ও তার স্বামীর কথামতো বাড়ি টাকে পরিপাটি করে রাখল। 
পরের দিন বাড়িতে কিছু মুরব্বিরা এসে জমাট বাধল।মিরাকে তার শাশুড়ি বললো চা করার জন্য, তাছাড়া আরও বললো মিরা যেন একটা ভালো কাপড় পড়ে  পরিপাটি হয়ে সবার সামনে আসে।এমন সময় হীরা মিরার বাড়িতে আসল,মিরা তার  বোনকে দেখে খুবই খুশি হল,, 
হীরার হাত ধরে টেনে ঘরে নিয়ে গেল। হিরা জানতো না যে মিরা কোন ব্যাপারে কোন কিছু জানে না। 
হীরা প্রশ্ন করল এত কিছুর পরও তোর মুখে হাসি,, মিরা বলল,এতদিন পর তোমাকে দেখতে পেয়ে আমি কতটা খুশি আমি তোমাকে তা বুঝাতে পারবনা।
হিরা বলল আমাকে নিয়ে না ভেবে নিজেকে নিয়ে ভাব তোর সাথে এটা কি হতে যাচ্ছে। মিরা বলল এটা কি বলতে চাইছো আমার সাথে  কি হচ্ছে, আমি তো কিছুই জানিনা।হিরা শুনে অবাক,তুই এটা কি বলছিস তুই কি কিছুই জানিস না,,মিরা বলল না বুবু, আমি জানি না।তখন হিরা মাটিতে বসে পরল,বলল পুরা কপালি,,তোর সংসার ভাঙতে যাচ্ছে। মিরা একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল এটা তুমি কি বললে বুবু,, এত অলক্ষণের কথা তুমি বলতে পারলে,,হীরা বলল অলক্ষণে কাজ তো ঘটতে যাচ্ছে  সেটা কিভাবে আটকাবি, কিছু বোঝার আগেই মিরাকে বাইরে থেকে ডাক দিল শাশুড়ি মা, মিরা  উঠে দাঁড়ালো এবং বাইরে যেতে চাইলো হীরা তখন তার হাত  চেপে ধরল এবং বলল একটু আস্তে চল।সহজসরল মিরা তখনও বুঝতে পারছিল না কি হচ্ছে। 
বাইরে যেতেই হিরার স্বামী এগিয়ে এসে বলল,মুরব্বিরা যা বলে তা মাথা পেতে মেনেনিস,তোর কল্ল্যান হবে।হিরা বলল,যা হওয়ার তাতো হয়েই গেল আর কি বাকি আছে। মিরা তার বোনকে বলল তোমরা কেন আমাই নিয়ে উল্টা পাল্টা কথা বলছ।আমাই যদি মাতব্বররা কিছু বলে আমি তাদের কথার কেন অবাধ্য হব,কি বলে আগে শুনি,তারপর না হয় তোমরা ঝগড়া কর।হঠাৎ একজন মুরব্বি মিরাকে প্রশ্ন করল তুমি কি এই বিষয়ে সম্মতি দিচ্ছ,,, এবং তোমার স্বামীর সাথে একমত,তখন মিরা বলল কোন বিষয়ে,,তখন একজন বলল তোমার স্বামীর সাথে বিচ্ছেদের বিষয়ে। মীরার মাথায় একথা শুনে আকাশ ভেঙে পড়লো। সে আর কোন প্রশ্নের উত্তরই দিতে পারল না। এতকিছু হয়ে গেল কিন্তু সে এই ব্যাপার কিছু বুঝতে পারল না এই ভেবেই সে কান্না করে দিল। হীরার স্বামী তখন তার পাশে এসে বলল তুই যদি এই বিষয় নিয়ে এখন বাড়াবাড়ি করিস তাহলে তোর সাথে তোর বোনেরও সংসার ভাঙতে চলবে। মিরা  তো এবার চুপ হয়ে গেল কি করবে বুঝে উঠতে পারতেছে না। মিরা এবার নিজেকে নিয়ে না ভেবে  বোনকে নিয়ে ভাবতে শুরু করল,, তার বোনের তো দুইটা সন্তান আছে তাদের কি হবে এই ভেবে সে আর কোন কিছুই বলল না শুধু বলল আপনারা যা বলবেন আমি তাতে রাজি। একজন মুরুব্বী মীরার হাতে কিছু টাকা ধরিয়ে দিল এবং বলল এই টাকা দিয়ে তুমি কিছুদিন চলতে পারবে। মিরার চোখ দিয়ে শুধু পানি না মনে হচ্ছে রক্ত ঝরছে।পাড়া প্রতিবেশী সবাই বলতে লাগলো কি হয়ে গেল মীরার সঙ্গে সবাই খুব আফসোস করতে থাকলো। আবার কেউ বলতে লাগলো আটকুরার জীবনে তো এটাই হবে এটাই স্বাভাবিক। মিরা কারো কথার কোন উত্তর না দিয়ে সোজা বাইরের দিকে হাঁটতে থাকলো, তাঁর শাড়ির আঁচল মাটির সঙ্গে লুটুপুটু খাচ্ছে সেই দিকে তার কোন খেয়াল নেই, অভাগি মিরার চোখের পানি রক্ত  হয়ে ঝরছে। হাই রে জীবন  কি হওয়ার ছিল আর কি হল।
 

Comments

    Please login to post comment. Login