Posts

গল্প

বিসর্জন

February 10, 2025

Sohan

Original Author sohan

129
View

শীতের সকাল। কুয়াশায় ঢেকে আছে চারপাশ। গাছের পাতায় শিশির জমে মুক্তোর মতো ঝলমল করছে। এমন সময়, একটি খালি মাঠের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে আবির। চোখ দুটো লাল হয়ে আছে তার, ঠোঁট কাঁপছে, বুকের ভেতর হাজারো স্মৃতি জমাট বেঁধেছে।

আজ তার মা নেই।

মাত্র দুই দিন আগে সবকিছু ঠিক ছিল। মা প্রতিদিনের মতো সকালে উঠে তার জন্য নাশতা বানাচ্ছিলেন। হাসিমুখে বলেছিলেন, “আবির, একটু কম দুষ্টুমি করিস, বাবা!” কিন্তু সেই হাসিটাই শেষবারের মতো দেখেছিল সে। আচমকাই মায়ের বুকে ব্যথা শুরু হয়। হাসপাতালে নেওয়ার আগেই সব শেষ...

আবির এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না। তার পৃথিবীটা যেন শূন্য হয়ে গেছে। এই ছোট্ট শহরের প্রতিটি কোণায় মায়ের স্মৃতি জড়িয়ে আছে। রান্নাঘরে গেলে মায়ের হাতের গরম খাবারের গন্ধ যেন এখনো ভাসছে। ঘরে রাখা শাড়ির আলমারির দিকে তাকালেই মনে হয় মা এখনই এসে বলবেন, “কিরে, কী করছিস?”

কিন্তু মা আর কোনোদিন বলবে না।

আবিরের বাবা, ফজলুর রহমান, একজন সাধারণ স্কুলশিক্ষক। সংসার খুব একটা স্বচ্ছল নয়, কিন্তু ভালোবাসার কোনো অভাব ছিল না। তবে মায়ের মৃত্যুর পর যেন সবকিছু ওলটপালট হয়ে গেল। বাবা যেন আরও চুপচাপ হয়ে গেছেন, চোখের কোণে সবসময় জল জমে থাকে।

একদিন বিকেলে আবির দেখল, বাবা তাদের পুরোনো কাঠের আলমারি খুলে কিছু কাগজপত্র বের করছেন। আবির কৌতূহল নিয়ে কাছে গিয়ে দেখল, জমির দলিল।

"বাবা, এটা কী?"

বাবা কিছুক্ষণ চুপ থেকে মৃদু স্বরে বললেন, "আমাদের সংসারের জন্য কিছু ব্যবস্থা করতে হবে, বাবা। তোকে তো পড়াশোনা করাতে হবে, মা বেঁচে থাকলে এই কষ্টটা দেখতে পারত না।"

আবির অবাক হয়ে বলল, "কিন্তু বাবা, তুমি কি জমিটা বিক্রি করে দিচ্ছ?"

বাবা মাথা নিচু করে বললেন, "হ্যাঁ, অন্য কোনো উপায় নেই। তোকে তো মানুষ করতে হবে, মা তোর ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখত..."

আবিরের মনে হলো, এই সামান্য টুকরো জমির চেয়ে তার মায়ের স্বপ্ন অনেক বড়ো। কিন্তু সে জানে, বাবারও কিছু করার নেই। সংসার চালাতে হলে এই ত্যাগ স্বীকার করতেই হবে।

কয়েকদিন পর জমিটা বিক্রি হয়ে গেল। টাকাগুলো বাবা যত্ন করে তুলে রাখলেন। আবির সেদিন রাতে বারান্দায় এসে বসে রইল। আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ ঝলমল করছে। মা বেঁচে থাকলে হয়তো মাথায় হাত বুলিয়ে বলতেন, "চাঁদের মতো তুইও একদিন আলো ছড়াবি, বাবা..."

আবির চোখের জল আটকাতে পারল না। সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল—এই বিসর্জন বৃথা যেতে দেবে না। বাবার কষ্ট, মায়ের স্বপ্ন—সবকিছুর মূল্য সে দেবে।

(সমাপ্ত)

Comments

    Please login to post comment. Login