সূর্য ডুবছে পশ্চিম আকাশে। গোধূলির আকাশ যেন রঙিন ক্যানভাস, যেখানে প্রকৃতি তার নিজস্ব তুলিতে লাল, কমলা, আর বেগুনি রঙের ছোঁয়া দিয়েছে। গ্রামটির নাম চন্দ্রপুর। এই গ্রামে বাস করে এক যুবক, নাম অয়ন।
অয়ন ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতো, তার গ্রাম একদিন আলোয় ভরে উঠবে—শুধু বৈদ্যুতিক আলোয় নয়, মানুষের ভালোবাসার আলোয়। কিন্তু বাস্তবতা ছিল ঠিক উল্টো। গ্রামের মানুষ একে অপরের প্রতি উদাসীন, কেউ কারও পাশে দাঁড়ায় না। হিংসা, ঈর্ষা আর স্বার্থপরতা গ্রাস করেছে সবাইকে।
একদিন, অয়ন এক বৃদ্ধকে দেখল, যিনি রাস্তার ধারে বসে আছেন, ক্ষুধার্ত, ক্লান্ত। আশপাশের কেউ তার দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না। অয়ন কাছে গিয়ে বলল,
— "চাচা, আপনি এখানে বসে আছেন কেন?"
বৃদ্ধ অসহায় গলায় বললেন,
— "বাবা, অনেক দিন হলো কেউ এক টুকরো রুটিও দেয়নি... এই গ্রামে সবাই ব্যস্ত নিজের কাজে, কারও দয়া নেই।"
অয়ন চুপ করে গেল। এতদিন সে ভেবেছে, শুধু স্বপ্ন দেখলেই বদল আসবে। কিন্তু সে বুঝল, বদল আনতে হলে আগে নিজেকেই কিছু করতে হবে।
সে নিজের খাবার থেকে অর্ধেক দিল বৃদ্ধকে। তারপর সিদ্ধান্ত নিল, প্রতিদিন একজনের জন্য হলেও সে কিছু করবে।
পরিবর্তনের শুরু
অয়নের এই ছোট্ট কাজ ধীরে ধীরে আশেপাশের মানুষদের মধ্যে পরিবর্তন আনতে লাগল। সে দেখল, তার বন্ধুরাও আস্তে আস্তে এতে যোগ দিচ্ছে। একদিন, গ্রামের বাজারে সে দেখল, এক দরিদ্র মা তার সন্তানের জন্য খাবার চাইছে। দোকানদার তাকে তাড়িয়ে দিল।
অয়ন এগিয়ে গিয়ে বলল,
— "মা, চিন্তা করবেন না। আমি সাহায্য করব।"
সে তার সঞ্চিত টাকা দিয়ে কিছু খাবার কিনে দিল। আশেপাশের মানুষ তাকিয়ে রইল, কিন্তু কেউ কিছু বলল না। তবে কয়েকজনের চোখে প্রশ্ন জাগল—"আমরাও কি এমন কিছু করতে পারি?"
এই ছোট ছোট কাজ ধীরে ধীরে পুরো গ্রামে আলো ছড়িয়ে দিল। একদিন, এক বৃদ্ধ চাচা এসে অয়নকে বললেন,
— "বাবা, তোমার জন্য আমাদের গ্রাম বদলে যাচ্ছে। আগে আমরা শুধু নিজেদের নিয়েই ভাবতাম, এখন আমরা একে অপরের কথা ভাবছি।"
অয়ন মৃদু হেসে বলল,
— "এটা আমার একার কাজ নয়, চাচা। আমরা সবাই মিলে বদলাচ্ছি।"
শেষ দৃশ্য
এক বছর পর, চন্দ্রপুর আর আগের মতো নেই। এখানে মানুষ এখন একে অপরের পাশে দাঁড়ায়। কেউ অভুক্ত থাকে না, কেউ একা থাকে না।
অয়ন জানত, সে একা পুরো গ্রাম বদলাতে পারেনি। কিন্তু সে প্রথম আলোটা জ্বালিয়েছিল। আর সেই আলো এখন সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।
কারণ, আলো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য বিশাল কিছু করা লাগে না, শুধু একটুখানি সদিচ্ছা আর ভালোবাসাই যথেষ্ট।