প্রথম পর্ব: অদ্ভুত চিঠি
একটি শীতের সন্ধ্যা। তিন গোয়েন্দা—রবি, মুসা এবং জামিল—তাদের গোয়েন্দা দপ্তরে বসে ছিল। রবি একটি নতুন কেসের ফাইল পড়ছিল, মুসা তার ল্যাপটপে কিছু তথ্য খুঁজছিল, আর জামিল টেলিস্কোপ দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল। হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শোনা গেল।
দরজা খুলতেই দেখা গেল, একজন অজানা লোক একটি চিঠি রেখে চলে গেছে। চিঠিটি ছিল একটি পুরানো খামে মোড়ানো, উপরে শুধু লেখা: “তিন গোয়েন্দার জন্য।”
চিঠিতে লেখা:
“আজ রাত ১২টায় পুরান শহরের জমিদার বাড়িতে আসুন। একটি বড় রহস্যের সমাধান দরকার। যদি সাহস থাকে, তবে আসুন। —একজন অজানা বন্ধু”
মুসা বলল, “এটা নিশ্চয়ই কোনো রহস্যময় ঘটনা। আমরা যেতে পারি।”
জামিল বলল, “হ্যাঁ, কিন্তু সাবধান। এই বাড়ি নিয়ে অনেক গল্প শোনা যায়।”
রবি বলল, “গল্প যাই হোক, আমরা তো গোয়েন্দা। আমাদের কাজই হলো রহস্য সমাধান করা।”
দ্বিতীয় পর্ব: জমিদার বাড়ির রহস্য
পুরান শহরের জমিদার বাড়িটি বহু বছর ধরে পরিত্যক্ত। স্থানীয় লোকেরা বলে, এই বাড়িতে ভূতের উপদ্রব হয়। তিন গোয়েন্দা রাত ১২টায় বাড়ির গেটে পৌঁছাল। গেটটি জঙ্গলে ঢাকা, আর বাড়ির দেয়ালে শ্যাওলা জমে আছে।
ভেতরে প্রবেশ করতেই তারা দেখল, একটি আলো ঘরের মধ্যে জ্বলছে। সেখানে একজন বৃদ্ধ লোক তাদের অপেক্ষা করছেন। তিনি বললেন, “আমি এই বাড়ির শেষ জমিদার, রাজেন্দ্র নারায়ণ রায়। সম্প্রতি এই বাড়িতে অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে। প্রতিদিন রাতে মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি হচ্ছে, কিন্তু চোরের কোনো চিহ্ন নেই।”
রবি জিজ্ঞেস করল, “আপনি পুলিশকে জানাননি?”
বৃদ্ধ বললেন, “পুলিশ এসেছিল, কিন্তু তারা কিছুই খুঁজে পায়নি। তাই আমি আপনাদের সাহায্য চাইছি।”
মুসা বলল, “আমরা তদন্ত শুরু করব। কিন্তু আপনাকে আমাদের সবকিছু জানাতে হবে।”
জমিদার বললেন, “এই বাড়িতে একটি গুপ্তধনের গল্প আছে। অনেকেই বলে, এখানে সোনা-রুপার ভাণ্ডার লুকানো আছে। কিন্তু আমি কখনো তা খুঁজে পাইনি।”
তৃতীয় পর্ব: রাতের তদন্ত
তিন গোয়েন্দা বাড়ির চারপাশে তদন্ত শুরু করল। মুসা লক্ষ্য করল, বাড়ির মেঝেতে কিছু পায়ের ছাপ আছে, কিন্তু সেগুলো অদ্ভুত—মানুষের নয়, বরং কোনো পশুর মতো।
জামিল বলল, “এটা নিশ্চয়ই কোনো কৌশল। চোর হয়তো পায়ের ছাপ গুলিয়ে দিচ্ছে।”
রাত যত গভীর হতে লাগল, বাড়িতে অদ্ভুত শব্দ শোনা যেতে লাগল। হঠাৎ রবি দেখল, একটি ছায়া দ্রুত ঘরের কোণে মিলিয়ে গেল। তিনজন তাড়া করল।
চতুর্থ পর্ব: গুপ্ত সুড়ঙ্গের সন্ধান
তারা ঘরের কোণে পৌঁছাতেই দেখল, সেখানে একটি গোপন দরজা আছে। দরজা খুলতেই তারা দেখল, ভেতরে একটি সুড়ঙ্গ। সুড়ঙ্গটি অন্ধকারে ভরা, শুধু একটি মোমবাতির আলোতে পথ দেখা যাচ্ছে।
তিন গোয়েন্দা সুড়ঙ্গ ধরে এগোতে লাগল। কিছুদূর যাওয়ার পর তারা একটি গুপ্ত কক্ষে পৌঁছাল। সেখানে মূল্যবান জিনিসপত্রের স্তূপ—সোনার মুদ্রা, রুপার গহনা এবং পুরানো পেইন্টিং।
হঠাৎ পিছন থেকে একটি আওয়াজ শোনা গেল। তারা ফিরে দেখল, একজন লোক তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। সে বলল, “আমি এই বাড়ির চাকর, নিতাই। আমি এই গুপ্তধন চুরি করেছি, কারণ জমিদার আমাকে বহু বছর ধরে বঞ্চনা করেছেন।”
রবি বলল, “তুমি ভুল করেছ। চুরি কোনো সমাধান নয়।”
পঞ্চম পর্ব: সমাধান
তিন গোয়েন্দা নিতাইকে বোঝাল যে, তার সমস্যার সমাধান অন্য উপায়েও হতে পারে। নিতাই শেষ পর্যন্ত সবকিছু স্বীকার করল এবং জমিদারের কাছে ক্ষমা চাইল।
জমিদার বুঝতে পারলেন, তার ভুলের কারণে এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। তিনি নিতাইকে ক্ষমা করে দিলেন এবং তাকে একটি ভালো কাজের ব্যবস্থা করে দিলেন।
রহস্য সমাধান হয়ে গেল। তিন গোয়েন্দা আবারও তাদের দক্ষতা দিয়ে একটি কঠিন রহস্যের সমাধান করল।