প্রথম পরিচ্ছেদ: প্রথম দেখা
শীতের সকাল। রোদ্দুরের আলোয় চারপাশ ঝলমল করছে। অর্পিতা তার কলেজের লাইব্রেরিতে বসে বই পড়ছিল। পরীক্ষা আসন্ন, তাই মনোযোগ দেওয়া জরুরি। কিন্তু আজকের সকালটা যেন একটু অন্যরকম। তার পাশের টেবিলে একজন ছেলে এসে বসল। তার হাতে গিটারের কেস, চোখে কালো ফ্রেমের চশমা, আর গায়ে একটি সাদা হুডি। অর্পিতা তাকে এক নজর দেখে আবার বইয়ে মন দিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই সে লক্ষ করল, ছেলেটি তার দিকে তাকিয়ে আছে। অর্পিতা একটু বিব্রত হয়ে তাকালো তার দিকে।
"তুমি কি অর্পিতা?" ছেলেটি হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করল।
অর্পিতা অবাক হয়ে বলল, "হ্যাঁ, তুমি আমাকে চেনো?"
ছেলেটি বলল, "আমার নাম রাহুল। আমি তোমার কলেজেরই ছাত্র, কিন্তু অন্য বিভাগে। তোমার সম্পর্কে অনেক শুনেছি। তুমি যে ক্লাসে প্রথম হও, সেটা তো সবাই জানে।"
অর্পিতা একটু লজ্জা পেল। রাহুলের কথায় তার মনে হলো, সে যেন তার সম্পর্কে অনেক কিছু জানে। তাদের কথোপকথন চলতে থাকল। রাহুল গিটার বাজাতে জানে, গান গাইতে পারে, আর অর্পিতা শুনতে ভালোবাসে। সেদিন থেকেই তাদের বন্ধুত্বের শুরু।
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ: বন্ধুত্ব থেকে ভালোবাসা
দিন যায়, সপ্তাহ যায়। অর্পিতা আর রাহুলের মধ্যে বন্ধুত্ব গভীর হতে থাকে। তারা একসাথে লাইব্রেরিতে পড়াশোনা করে, ক্যাফেতে বসে গল্প করে, আর রাহুল তার গিটার নিয়ে অর্পিতাকে গান শোনায়। অর্পিতার মনে হয়, রাহুলের সাথে থাকলে তার জীবনটা যেন একটু বেশি সুন্দর হয়ে যায়।
একদিন সন্ধ্যায় কলেজের ছাদে তারা বসে আছে। আকাশে তারাগুলো জ্বলজ্বল করছে। রাহুল বলল, "অর্পিতা, তুমি জানো, তুমি আমার জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ?"
অর্পিতা একটু চুপ করে থেকে বলল, "কেন? কি হয়েছে?"
রাহুল বলল, "তুমি ছাড়া আমার জীবনটা অসম্পূর্ণ। আমি তোমাকে ভালোবাসি।"
অর্পিতার হৃদয়টা দ্রুত স্পন্দিত হতে লাগল। সে কখনো ভাবেনি যে রাহুলের অনুভূতি এত গভীর হবে। সে বলল, "আমিও তোমাকে ভালোবাসি, রাহুল।"
সেই দিন থেকেই তাদের সম্পর্ক নতুন এক পর্যায়ে পৌঁছাল। তারা একে অপরের জীবনের অংশ হয়ে গেল।
তৃতীয় পরিচ্ছেদ: বাধা এবং সংগ্রাম
কিন্তু জীবনে সবকিছু এত সহজ হয় না। অর্পিতার পরিবার রাহুলকে মেনে নিতে পারল না। তারা চাইল অর্পিতা একজন ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ারকে বিয়ে করুক। রাহুলের পরিবারও মধ্যপন্থী। তাদের চোখে অর্পিতা "অত্যধিক আধুনিক"।
অর্পিতা আর রাহুলের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে লাগল। তারা একে অপরের সাথে দেখা করতে পারত না, শুধু ফোনে কথা বলত। একদিন রাহুল বলল, "অর্পিতা, আমি যদি কিছুদিনের জন্য চলে যাই? আমাকে নিজেকে প্রমাণ করতে হবে।"
অর্পিতা কেঁদে বলল, "কিন্তু আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না।"
রাহুল বলল, "আমিও পারব না। কিন্তু এটা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য জরুরি।"
রাহুল চলে গেল। অর্পিতা একা হয়ে গেল। কিন্তু তার বিশ্বাস ছিল, রাহুল একদিন ফিরে আসবে।
চতুর্থ পরিচ্ছেদ: পুনর্মিলন
দুই বছর পর। অর্পিতা এখন একজন সফল সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তার পরিবার এখন তার সিদ্ধান্তকে সম্মান করে। একদিন হঠাৎ করেই রাহুল ফিরে এল। সে এখন একজন প্রতিষ্ঠিত মিউজিশিয়ান। তার গান দেশজুড়ে জনপ্রিয়।
রাহুল অর্পিতার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। অর্পিতা তাকে দেখে প্রথমে চিনতেই পারল না। তারপর হঠাৎ চোখে জল এসে গেল। রাহুল বলল, "অর্পিতা, আমি ফিরে এসেছি। আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য তুমি। তুমি কি আমার হবে?"
অর্পিতা কাঁদতে কাঁদতে বলল, "হ্যাঁ, রাহুল। আমি তোমারই।"
শেষ পরিচ্ছেদ: নতুন শুরু
তাদের বিয়ে হলো। তারা একসাথে নতুন জীবন শুরু করল। রাহুল তার গান দিয়ে অর্পিতাকে প্রতিদিন ভালোবাসার কথা বলে, আর অর্পিতা তার কাজ দিয়ে রাহুলের পাশে দাঁড়ায়। তাদের ভালোবাসা দিনে দিনে গভীর হয়।
তাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত যেন এক নতুন গানের মতো। তারা জানে, জীবনের প্রতিটি বাধা তারা একসাথে পার করবে। কারণ, তাদের ভালোবাসাই তাদের সবচেয়ে বড় শক্তি।