Posts

উপন্যাস

ঐশ্বর্য পর্ব ১২

February 11, 2025

Md Kawsar

Original Author নূর -এ- কাউছার

Translated by পর্ব ১২

34
View

ঐশ্বর্য 
পর্ব -১২
.
নূর -এ- কাউছার
.
                                চিঠি ৩
জানিস ঐশ্বর্য তোকে বাকি পাঁচ দশটা টা মেয়েদের থেকে অনেক সুন্দর লাগতো। ছোটো বেলা থেকেই জানতাম কদম পারায় সব থেকে সুন্দরী ছিলাম আমি মানুষ যেমনটা বলতো আরকি তার পর মা এলো। মাকে আমার থেকেও সুন্দর লাগতো মায়ের কথা বলা আচার আচরণ সবটাই বুঝিয়ে দেয় একটি আদর্শ পরিবারের মেয়ে। যখন তুই মায়ের কোলে এলি আমি তোর মতো সুন্দরী বাচ্চা কোনো দিন দেখিনি তুই শৈশবের ৭ বছর বয়সেই ভিষন সুন্দরীর অধিকারি ছিলি। তাই মায়ের তোকে নিয়ে ভয়টা বেশি হতো, মা জানতো তার অনেক দিনের জেল হবে তাই তুই রহমান বাড়িতে থাকলেই অযত্নে থাকতে পারিস ভেবে তোকে নানুর বাসায়ই রাখা হয়। বাবা আমাকে সেদিনের ঘটনা খুলে বলে কথা গুলো তার ভাষাতেই লিখলাম, বাবা- আমরা মেলা থেকে অনেক আগেই বেরিয়ে পরি কিন্তু বৃষ্টির কারনে বাসায় আসতে দেরি হয়ে যায়। রহমান বাড়ির সদর দরজায় অনেক মানুষের ভির দেখতে পেলাম আমরা কিছুই বুঝতে পারিনি। ভয় পেয়ে যাই তার পর দৌড়ে বাড়ির সামনে এসে দেখি তোর মা সদর দরজার নিচে ভিজা কাপর পরে চুল গুলো এলো মেলো অবস্থায় একটি চেয়ারে বসে আছে। তার পায়ের নিচে মুরাদের মাথা সদর দরজায় ঝুলছে মুরাদের শরীরের ছিন্নভিন্ন কাটা অংশ আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। আমি যুদ্ধের সময়ও এতো ভয়ংকর দৃশ্য দেখিনি। আমি সাথে মুরাদের মায়ের দিকে তাকাই মুরাদের মা এক চিতকার দিয়ে জ্ঞান হারায়। মুরাদের বাবা আর বোনেরা পাগলের মতো চিতকার করতে থাকে এক নিমিষেই বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে গেলো। তোর দাদু ভরকে যায় আর আমাকে আর গ্রামের মানুষ কে বলে এই মাইয়ারে মারতে মারতে গ্রাম থিকা বের কইরা দেওয়া হোক । আমি অপারক আমি ভাবতে লাগলাম কি হলো এইসব আমি ভাবলাম গ্রামের মানুষও হয়ত বাবার কথা মতো শান্তির উপর ক্ষিপ্ত হবে কিন্তু আমি সকলের চোখে এক অজানা ভয় দেখতে পেলাম। পুলিশও এসে পরে মুরাদের লাশটি তারা শহরে পাঠিয়ে দেয় আর শান্তিকে ধরে নিতে আসে আমি বাধা দিতে চেয়েও পারি নি। তার পর গ্রামের মানুষের মুখে শুনতে পারি শান্তি যাওয়ার আগে গ্রামের বাজারে সকল মানুষের সামনে হুংকার ছেরে বলে যায় চন্দনপুর বাসি সকলেই কান খুলে শুনে রাখো রহমান বাড়ির মেয়ে দের উপর যে চখ তুলে তাকাবে এই শান্তি যদি মরেও যায় সে শেষ রক্ষা পাবে না। বাবা এতটুকু বলে থামে। আমি বাবাকে তখনকার ঘটনা গুলো আর বলতেই পারলাম না কি করে বলি বাবা এই সব বলাও যায় না এমন সময় এই সব বললে বাবা আরো চিন্তাই পরে যেতেন। আমি পরবর্তীতে বুঝতে পারি বাবা কে ওইদিন বলে দেওয়া উচিত ছিলো হয়তো যার পরিনাম এতটা খারাপ হতো না। বাবা দাদু দের কে তার দাদুর দাদুর ভাইদেরকে খুব বোঝায় তাদের পায়ে পর্যন্ত ধরে যেনো মাকে মাফ করে দেয় আর রহমান বাড়িতে ফিরিয়ে আনে এইসব আমার চোখের সামনে হয় আমিও তাদের পায়ে ধরি দাদুর ভাই আর তার স্ত্রী খুব ভালো মনের মানুষ ছিলেন কিন্তু সন্তান হারানোর ব্যথা কেউ সহজে ভুলে যেতে পারে না। দাদুর ভাই বাবাকে কান্না করতে করতে বলে এই ছেলেরে নিয়া অনেক শপ্ন আছিলো কিন্তু আমরা তারে সঠিক শিক্ষা দিবার পারি নাই বাবা রবি তুইও আমার ছেলের মতো এক সন্তান নাই তাই বইলা আরেক সন্তানের সংসার নষ্ট হইবো আমার কারনে আমি ওই রকম না কিন্তু তোর কি মনে হয় তোর কাকি মানবো! বাবা মাথা নিচু করে আছে। আমি বাবাকে ওইদিন প্রথম মাথা নিচু করে কথা বলতে দেখেছি দাদুর ভাই শেষ মেষ রাজি হয় এবং মা কে ক্ষমা করে দেয়। কিন্তু আইন তো সহজে মেনে নেয়নি তারা মা কে আট বছরের কারা বাস দেয়। কিন্তু বাবার বন্ধু আইনের বড় কর্মকর্তা থাকায় তার বিশেষ অনুরোধে ২ বছরের মধ্যে মাকে ছেড়ে দেয়। এই দুই বছর আমাদের খুব কষ্ট করে কাটাতে হয় আর তোকে প্রথম কিছু মাস মিথ্যা বলা হয় যে মা নানুকে নিয়ে হাস্পাতালে গেছে কিংবা নানুর বাসায় ধানের কাজ করতাছে এভাবে আর কতো দিন! তোর কান্না কাটি শুনে আমরা আর তোকে মিথ্যা বলতে পারিনি তোকে মায়ের কাছে নিয়ে জাই তার পর তুই সত্যটা জানলি যে মা জেলে,কিন্তু কোন কারনে তা তোকে আর বলা হয়নি বললেও তুই বুঝতি না। মাকে ছেরে দেওয়ার দিন চলে এলো এই ২ বছরে আমিও মেট্রিক পাস করি রফিকের সাথে ভালো একটা সম্পর্কও হয় আমার। অনেক যায়গা থেকে ঘর আসতো আমাকে বিয়ে করার জন্য কিন্তু আমি মানা করে দিতাম। বাবা গ্রামের মানুষের ঘানা ঘানি আর দাদুর বাজে কথাবার্তার কারণে মন মরা হয়ে থাকতো ধিরে ধিরে মদ্যপানের আসক্তি হয়ে যায়। মাকে আনার জন্য আমি তুই আর রহিম শহরে চলে আসি সাথে কেউ আসতে চাইলো না।  সেদিন মনে খুব আনন্দ অনুভব হচ্ছিলো। তার পর সব তুই জানিস মা বাড়িতে এলো সব কিছু নিজের মতো করে  গুছিয়ে নিলো। বাবা বাড়িতে মাতাল অবস্থায় এসে খেতে বসে মাকে দেখেই ভরকে যায় আর বলে আমি কেনো তাকে আগেই বললাম না মা বড়িতে এসে গেছে আরো বলে কালকেই চলে জামু আমি আর এই বাড়িতে থাকবো না মা বাধা দিলে মা কে অনেক বাজে বাজে ভাষায় গালা গালি করে মাকে চরিত্র হিন ডাকে মা আরো কিছু বললে মাকে মারধোরও করে জানিস মা সেদিন খুব কষ্ট পায় আমি নিজেও ভাবতে পারিনি   বাবা মায়ের সাথে এমন করবে। তার পরের দিন মা তোকে আবার নানুর বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় তুই এই অবস্থায় এখানে থাকলে ভয় পাবি বলে। রোজ রাতে বাবা মাকে মারতো কিছুদিন পর দাদুকে আমি বলি বাবাকে কিছু বলতে দাদু বলে যা করছে ঠিকি করছে এর সাথে এমনি হওয়া উচিত। সবকিছু কেমন মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে যে মহিলা এত ভয়ংকর হতে পারে সে এত সহজে সব সহ্য করছে কি করে! বাবার অত্যাচার দাদুর  কটু কথা গ্রামের মানুষের ঘানা ঘানি সবি সহ্য করছিলেন মা। আমার এইসব আর সহ্য হচ্ছিলো না বাবা আমার বিয়ে ঠিক করে তার নিজের ইচ্ছে মতো আমার কোনো  ইচ্ছে অনিচ্ছের মূল্য দেয়নি। তাই আমি ভেবে নিয়েছিলাম আমি রফিকের সাথে বিয়ে করে অনেক দূরে চলে যাবো রহিম কে বলে রেখেছি সে আমাকে সাহায্য করবে জানিস রফিক আমাকে খুব ভালোবাসে তুই যোদি কোনো দিন কাওকে ভালোবাসিস সেদিন বুঝতে পারবি মা বাবার পরেও কেউ আছে যে প্রয়োজনের থেকে অনেক বেশি ভালোবাসতে পারে। সে আমার জন্য পরা লেখা ছেরে দিয়ে দিন মজুরের কাজ শুরু করেছে মানুষটা আমার জন্য এতো কিছু করেছে তাকে আমি না বুঝলে কে বুঝবে। সে আমাকে কিছু চুরি আর শাড়ি দিয়েছিল যা আমি সিন্দুকে রাখলাম। মাকে কষ্ট দিস না আর কোনো দিন হতাশ হবি না মনে রাখবি আমাদের মা একজন যোদ্ধা। আর রহিমের খেয়াল রাখিস ছেলেটা আমাকে পছন্দ করতো মাঝে মধ্যে মা কে বলিস রহিমকে গাজরের পায়েশ রেধে খাওয়াতে মায়ের কাছে আমাদের ঠিকানা আছে আমার দেওয়া চিঠি পেলে এই ঠিকানায় চিঠি পাঠাবি। 
ইতি - ঊর্মি রহমান 
ঐশ্বর্যর চখ বেয়ে পানি ঝরছে সিন্দুক থেকে শাড়ি গুলো বের করে দেখছে ঐশ্বর্য শাড়ি গুলো বুকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরলো। পরের দিন ফজরের আজান পরতেই ঐশ্বর্য ঘুম থেকে উঠে পরে ওজু করে নামাজ পরে নিলো। তার পর লম্বা একটা মোনাজাতে বসে মোনাজাত শেষে কোরান পাঠ করে,উঠে পাকের ঘরের দিকে চলে যায় দেখে তার মা আর খালা রান্না করছে। ঐশ্বর্য রান্না ঘরে ঢুকেই সালাম দিয়ে ঈদের শুবেচ্ছা যানায়। রেহানা বলল আপা ঐশ্বর্য আইছে। শান্তি পিছনে তাকিয়ে বলল এখানে কি করছিস ঘরে যা আমি খাবার পাঠাচ্ছি ঐশ্বর্য তার মায়ের মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। শান্তি বলল কি দেখছিস। ঐশ্বর্য হেসে দেয় আর বলে না কিছুই না। আম্মা আজকে গাজরের হালুয়া রান্না কইরো। শান্তি বলল তুই তো গাজর পছন্দ করিস না আচ্ছা ঘরে যা আমি রান্না করছি। রেহানা বলল তোর কুরআন তেলাওয়াত শুনে আমি মুগ্ধ হয়েছি। ঐশ্বর্য হেসে দেয় আর বলে আমিও থাকি তোমাদের একটু সাহায্য করি।
শান্তি বলল না ঘরে যা তোর শরীর ঠিক হয়ে উঠুক তার পর আমি তোকে রান্না করা শিখিয়ে দিবো। ইউসুফ আর রবি রেডি হয়ে ঈদের নামাজ পরতে মসজিদে চলে যায়। ঐশ্বর্য ঘরে বসে শাড়ি গুলো দেখছে আর ভাবছে এগুলো পরলে কেমন লাগবে আমায়। ঐশ্বর্য এর আগে কোনো দিন শাড়ি পরেনি কিন্তু শাড়ি পরার অভিজ্ঞতা আছে তাই বেশি না ভেবে আকাশি রঙের শাড়িটা পরে নিলো হাতে চুরি গুলোও পরে নিলো। কপালে একটা কালো রঙের টিপ দিয়ে বেরিয়ে আসলো। রেহানা ঐশ্বর্য কে দেখে হতভাক,চিৎকার করে শান্তি কে ডাক দিলো।
শান্তি দৌড়ে এসে ঐশ্বর্য কে দেখে হা করে তাকিয়ে রইলো। ঐশ্বর্য খেয়াল করলো তার মায়ের মুখে হাসির ছাপ কিন্তু চোখে জল ঐশ্বর্য ভয় পেয়ে যায় আর জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে আম্মা।
.
.
ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর  দৃষ্টিতে দেখবেন। 
পর্ব ১৩ জলদি আসবে পাশে থাকবেন ধন্যবাদ।

Comments

    Please login to post comment. Login