প্রথম অধ্যায়: কুয়াশায় ঢাকা সকাল
রিয়াদ ঘুম থেকে উঠেই জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরে তাকায়। পুরো গ্রামটাকে ঢেকে রেখেছে ঘন কুয়াশা। দূরের কিছুই ঠিকমতো দেখা যাচ্ছে না, গাছপালাগুলোও যেন সাদা চাদরের ভেতর হারিয়ে গেছে। শীতের সকালটা এতটাই স্নিগ্ধ যে তার ইচ্ছে করছে কম্বলের ভেতরই থাকুক। কিন্তু সে জানে, আজ তাকে বের হতে হবে।

রিয়াদের বাড়ি মেঘনার ঠিক পাশেই। এই নদীর সঙ্গে তার ছোটবেলার অসংখ্য স্মৃতি জড়িয়ে আছে। শীতের সকালে মেঘনার তীর ধরে হাঁটা, জেলেদের মাছ ধরা দেখা, নৌকা বাওয়া—সবকিছুই তার ভালো লাগে। কিন্তু এবার সে আর আগের মতো নির্ভার নেই। এসএসসি পরীক্ষা আসন্ন, পড়াশোনার চাপ, আর ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা মাথায় ভর করেছে।
সে ধীরে ধীরে উঠোনে বের হয়। মা খেজুরের গুড়ের পায়েস বানাচ্ছেন। উনুনের ধোঁয়া আর গুড়ের মিষ্টি গন্ধ পুরো বাড়ি জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে।
"রিয়াদ, একটু খেয়ে যা," মা বলেন।
কিন্তু রিয়াদ মাথা নাড়িয়ে বেরিয়ে যায়। তার মনটা আজ অস্থির।
দ্বিতীয় অধ্যায়: গ্রামের সকাল ও হারুন চাচার চায়ের দোকান
সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ে সে। রাস্তার ধারে হারুন চাচার চায়ের দোকান। প্রতিদিন সকালে এখানে গ্রামের লোকজন জড়ো হয়, চা খেতে খেতে গল্প করে।

আজিজ কাকা, যিনি গ্রামের একজন প্রবীণ ব্যক্তি, বসে বসে চা খাচ্ছেন। মুক্তার দাদীও এসেছেন, কাঁথা জড়িয়ে বসে আছেন।
"এই শীতের সকালগুলা একদিন থাকবে না, তখন বুঝবি এর মর্ম," আজিজ কাকা হাসিমুখে বলেন।
রিয়াদ চায়ের কাপে চুমুক দেয়। সত্যিই, শীতের সকালগুলো অন্যরকম। তবে এবারের শীতের শেষে কিছু পরিবর্তন সে টের পাচ্ছে।
"শুনছো, নদীর পানি নাকি কমতে শুরু করছে?" হারুন চাচা বলেন।
"হুম, এবার মাছও কম ধরা পড়ছে," এক জেলে যোগ দেয়।
রিয়াদ শুনে একটু চিন্তিত হয়ে পড়ে। মেঘনা নদীই তো এই গ্রামের প্রাণ! যদি একদিন নদী শুকিয়ে যায়, তাহলে কী হবে?
তৃতীয় অধ্যায়: নদীর ডাক ও শীতের শেষের সন্ধ্যা
বিকেলে রিয়াদ নদীর ধারে যায়। কুয়াশা কেটে গিয়ে রোদের ছটা পড়েছে পানির ওপর। নদীর ঢেউগুলো শান্ত, কিন্তু কোথায় যেন একটা পরিবর্তন টের পাওয়া যাচ্ছে।

সে একা একা দাঁড়িয়ে ভাবে—এই গ্রাম, এই প্রকৃতি, এই কুয়াশা ভেজা সকাল... এগুলো কি চিরদিন থাকবে? নাকি সময়ের সাথে সব বদলে যাবে?
আজিজ কাকা এসে পাশে দাঁড়ান।
"ভয় পাচ্ছিস?" তিনি জিজ্ঞেস করেন।
"হুম, কাকা। যদি নদীটা শুকিয়ে যায়?"
আজিজ কাকা মৃদু হেসে বলেন, "নদী কখনো শুকায় না, যদি মানুষ চায়। আমাদের কাজ হলো প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রাখা।"
চতুর্থ অধ্যায়: নতুন দিনের সূচনা
গ্রামের মানুষ একত্রিত হয়। সবাই মিলে নদী রক্ষার জন্য উদ্যোগ নেয়। সচেতনতা তৈরি হয়, প্রশাসনের কাছে আবেদন করা হয়। রিয়াদও তার বন্ধুদের নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ শুরু করে।
একদিন সকালে সে দেখে, মেঘনার ঢেউ আগের মতোই বয়ে যাচ্ছে। নদী হারিয়ে যাবে না, যদি মানুষ তাকে ভালোবাসতে জানে।
শীতের শেষের সময় শুধু প্রকৃতির পরিবর্তন নয়, এটা একটা নতুন শুরুর বার্তা।