Posts

চিন্তা

আয়নাঘর নিপাত যাক!

February 12, 2025

ফারদিন ফেরদৌস

58
View

'সবাই প্রধানমন্ত্রীর লোক' শীর্ষক আল জাজিরার তথ্যচিত্রে দেখানো আয়নাঘর বাংলাদেশে আছে এটাই বাস্তব। আরো বাস্তবতা হলো আগারগাঁও, কচুক্ষেত ও উত্তরা এলাকার আয়নাঘরগুলো এখনো দেখতে যেন আগের মতোই আছে। সেগুলোর চায় চেহারা বরং আরো সুন্দর ও আকর্ষণীয় হয়েছে।

আজকে ওই আয়নাঘরগুলো প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা পরিদর্শন করেছেন। ভুক্তভোগী ও গণমাধ্যমকর্মীরা এসময় সাথে ছিলেন। আয়নাঘর পরিদর্শন করে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, 'আওয়ামী লীগ সরকার দেশে আইয়ামে জাহেলিয়াত কায়েম করে গেছে। মনুষ্যত্ববোধ ধূলায় মিশিয়ে দিয়েছে।'

বন্দিশালা ঘুরে দেখে অধ্যাপক ইউনূস সাংবাদিকদের বলেন, ‘বীভৎস দৃশ্য। নৃশংস জিনিস হয়েছে এখানে।’

তিনি বলেন, ‘যতটাই শুনি মনে হয়, অবিশ্বাস্য, এটা কি আমাদেরই জগৎ, আমাদের সমাজ? যাঁরা নিগৃহীত হয়েছেন, তাঁরাও আমাদের সমাজেই আছেন। তাঁদের মুখ থেকে শুনলাম। কী হয়েছে, কোনো ব্যাখ্যা নেই।’

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের বিনা কারণে, বিনা দোষে উঠিয়ে আনা হতো। সন্ত্রাসী বা জঙ্গি বলে এখানে ঢুকিয়ে রাখা হতো।

তিনি বলেন, ‘এই রকম টর্চার সেল (নির্যাতনকেন্দ্র) সারা দেশে আছে। ধারণা ছিল, এখানে কয়েকটা আছে। এখন শুনছি বিভিন্ন ভার্সনে (সংস্করণে) দেশজুড়ে আছে। সংখ্যাও নিরূপণ করা যায়নি।’

আমাদের কাছে আয়নাঘর উন্মোচনের চেয়ে জরুরি যারা এইসব আইনাঘরের পরিকল্পনাকারী, নিয়ন্ত্রক ও বাস্তবায়কারী; তাদেরকে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা। অপরাধীরা কি আদৌ কোনো শাস্তি পাবে? নাকি বিগত সরকারের ফর্মুলা মেনে কেবল রাজনীতিটাই বহাল তবিয়তে থেকে যাবে?

আমরা চাই আইনের এমন সংস্কার করা হোক, যাতে কেউ নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখবার প্রয়াস না পায়। কেউ যেন অন্য কাউকে গুম বা বন্দী করে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি কিংবা প্রতিহিংসা চরিতার্থ করবার প্রয়াস না পায়।

আইন হতে হবে সুশৃঙ্খল, গণমুখী ও নাগরিকবান্ধব। মানুষ কেন এতটা হিংস্র ও বর্বরতা দেখাবে; যেখানে নিজে মানুষ নাম ধারণ করে অপরকে গোপন কুঠুরিতে দিনের পর দিন আটকে রেখে অমানুষিক ও বর্বরোচিত নির্যাতন করবে?

অন্তর্বর্তী সরকার যেহেতু জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তাদের কাছে একটাই প্রত্যাশা অন্যরা মানবতাবিরোধী কী কী অপরাধ করছে সেইসব অতীত ভুলে যান। নতুন দিনে আপনারা মানবতাবাদী কী কী ভূমিকা রাখবেন সেইসব কর্মধারা আপনারা করে দেখান। যাতে অন্যদের চেয়ে আপনাদেরকে আমরা আলাদা করতে পারি। আপনাদেরকে ভালোবাসা কিংবা সমর্থন দানের মওকা খুঁজে পাই।

AI এর অত্যাধুনিক যুগে কে কীভাবে কোথায় কী করছেন তা গোপন থাকবে না। সবার কৃতকর্মই প্রকাশিত হবে দুইদিন আগে আর পরে। সুতরাং আমাদের আয়ু যেহেতু ক্ষীণ, সুকর্মে যেন সবাই ব্রতী হই। কর্মটাই রয়ে যাবে, হিংসা, ঘৃণা বা প্রতিশোধস্পৃহা নয়। সকল যুগের আয়নাঘরের কারিগরেরা নিপাত যাক। সভ্যতার সত্য ও সুন্দর মুক্তি পাক।

লেখক: সাংবাদিক 
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

Comments

    Please login to post comment. Login