চারিদিকে ছড়িয়ে গেছে আগুন। পলাশের ডাল থেকে শুরু হয়ে আনাচে কানাচে পার্কের দেয়ালে। শুকিয়ে যাওয়া শরীর প্লাস্টিকের জামা। নামহীন গাছ। গন্ধহীন ফুল আর আদিম কোকিল। প্রবাহমান আগুনের গোপন বাহক।
এইসব উত্তাপে আমার নিথর দেহ। কিঞ্চিৎ সম্ভাবনায় জেগে ওঠে। তারপরে মুগ্ধ হই। ক্ষুধার্ত হৃদয়ে নান্দনিক স্পর্শের মুগ্ধ হাসি। আমি রোদের সাথে খেলি। গায়ের উপরে চামড়ার ভেতরে।
এখানে এলেই
আমার মগজে বাংলার কোকিল গান গায়
ঘুম ভেঙে গেছে — দোযখের দৃশ্য থেকে
বিভিষিকাময় দিন পেরিয়ে। হৃদয় শান্ত হয়।
রক্তাক্ত ফুলের শরীর ছেনে — নারীর সুগন্ধযুক্ত দেহের চেয়েও পবিত্র তাপে।
কোকিল বসেছে বড়ইয়ের ডালে
পাতার আড়ালে ঘোমটা টেনে।
আগুনের মতো তাঁর চোখ
চকচকে কালো চুল পিঠ বেয়ে লতানো গাছের মতো — অন্যের জীবন অন্যের শব্দ
পরগাছা পরজীবি গ্রাস করেছে তাকে।
এরই মাঝে ফুল ফোটে। লাবণ্যপ্রভার অসীম সৌন্দর্য। ঝিরিঝিরি শব্দ তরঙ্গের মতো পীড়া দেয়। আড়াল চোখে ভাসে শহীদ শরীরের জখম।কল্পনা করি লাল রক্ত। রক্তের ভেতরে বারুদ নিয়ে ফুটে আছে পলাশ শিমুল ও তাদের সমগোত্রীয় লাল ফুল।
যুদ্ধের পর যুদ্ধ। কয়েকশো বিপ্লব। কয়েকবার জন্ম কয়েকবার মৃত্যু। অভিবাদনে অভিবাদনে ক্লান্ত প্রকৃতি। দেহ থেকে দেহ পতাকার পোশাক খুলে। জবরদস্তি যৌনতা। আভিধানিক আভিজাত্য। উন্নত ভাষা। তাদের স্বভাব কিছুটা আদিম। সেই ভাবনা থেকেই সবুজের বুক জুড়ে জমে থাকা প্রেম তেজ হয়ে লালের গর্ভে খড়ে পড়ে। অপবিত্র আকাঙ্খায় বিবর্তনের ধাপ পেরিয়ে বিচিত্র বীর্যের উত্তর আধুনিক মানুষ।
উত্তর আধুনিক বাস্তবতায়
মানুষের কল্পনা যৌনতৃপ্তির মতো অস্পষ্ট
বসন্ত বুঝা যায় না ফুলহীন শহরের কলুষিত প্রেমে। হঠাৎ শহরের বাইরে সবুজ তুমি।
পল্লী সমাজের ব্লাউজ ফেটে বেরিয়ে এসেছো।ফুল হয়ে। খোলা চুলে। খালি পায়ে।
মনে পড়ে অস্পষ্ট গ্রাম
ছোট ছোট পাহাড়। অনাকাঙ্ক্ষিত নদী। অপরুপ সৌন্দর্য। ছিল কর্মযজ্ঞের ভীষন সম্ভাবনা। ধানের ক্ষেতে পুড়া শরীর। আমার গান গাওয়া কোকিল। ঘরহীন ছোট্ট সংসারে শত শত অনিশ্চয়তার পরও তাহারা বেঁচে আছে। নতুন বসন্তের আগমনে।