Posts

চিন্তা

বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত সমস্যা

February 13, 2025

MD Abu Hanif Piyas

28
View

                   বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত সমস্যা

   “আমার মেয়ে কে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। গুলি খেয়ে কাটাতারের উপড় অসহ্য যন্ত্রনায় পানি পানি বলছিল আমার মেয়েটা। ওরা আমার মেয়ে কে পানিও খেতে দেয় নি। আমার চোখের সামনে আমার মেয়েটাকে ওরা কষ্ট দিয়ে মেরেছে “,এইভাবেই আহাজারি করছিলেন ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম। টানা ৪ ঘন্টা ফেলানীর লাশ কাটাতারে ঝুলে ছিল(যুগান্তর,৬ জানুয়ারি,২৪)।  এ যেন ভারত বাংলাদেশের সীমান্ত সমস্যার জ্বলন্ত উদাহরণ। স্বাধীনতার পর থেকে দীর্ঘসময় ধরে এভাবেই বাংলাদেশের নাগরিকদের নির্মমভাবে সীমান্তে হত্যা করে আসছে বিএসএফ। কোন সরকারই আজ পর্যন্ত সীমান্ত সমস্যার সমাধান নিয়ে আসতে পারে নি। ভারতের দাদাগিরির সামনে প্রতিবার ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসতে হয়। আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন অনুযায়ী সীমান্ত লাইন থেকে ১৫০ গজের মধ্যে কোন স্থাপনা নির্মাণ করা যায় না। সাম্প্রতিক সময়ে ভারত বারবার চেষ্টা করেছে ৫০ গজের ভিতরে কাটাতারের বেড়া নির্মাণ করতে। তবে বাংলাদেশের সাহসী বিজিবি সদস্যদের চেষ্টায় ভারত বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। উদ্যেগ এর বিষয় হচ্ছে ভারত কেন বারবার সীমান্তে সংঘাত তৈরীর চেষ্টা করছে! আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি ভারত শ্রদ্ধা দেখাচ্ছে না। সম্প্রতি পুনরায় সীমান্তে সমস্যা সৃষ্টি করে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হচ্ছে কিনা ভাবা দরকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে যে আলোচনার মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে সীমান্ত সমস্যার সমাধান হবে (কালবেলা ২১ জানুয়ারি ২৫)। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী অহঙ্কার করে বলেছেন বাংলাদেশকে ২৪ ঘন্টায় দখল করে নিবে ভারত। বাংলাদেশের সেনাবাহিনী সীমান্ত বাহিনীকে অবজ্ঞার চোখে দেখছে ভারত। তবে ইতিহাস বলে ভিন্ন কথা। এই পর্যন্ত ৪ বার সীমান্ত সংঘাতে ৪ বারই হেরেছে ভারতের সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী বিএসএফ। ভয়ানকভাবে হেরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল।প্রাসঙ্গিকতায় উঠে আসে পাদুয়া সংঘাতের কথা। ১৯৭১ সালের পর থেকে বাংলাদেশের অধ্যুষিত সিলেটের পাদুয়া এলাকায় বিএসএফ অবৈধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিল বলে বাংলাদেশ অভিযোগ করে আসছিল। ২০০১ সালে বিএসএফ সেখানে অবৈধ রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু করে,আন্তর্জাতিক আইনে যা অবৈধ। ১৫ ও ১৬ এপ্রিল সিলেট সীমান্তে পাদুয়ায় এবং ১৯ এপ্রিল পুনরায় পাদুয়া সীমান্তে বিএসএফের সাথে তৎকালীন বিডিআরের সশস্ত্র সংঘর্ষ হয়। তিনটি যুদ্ধেই বাংলাদেশের বিডিআর জয়লাভ করে। এতে ২ জন বিডিআর ও ১৮ জন বিএসএফ সদস্য নিহত হয়। অগনিত বিএসএফ আহত হয়ে পালিয়ে যায়(বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর,২ সেপ্টেম্বর ২৪)। বর্তমানে বেশকিছু দিন ধরে বিএসএফ পুনরায় সীমান্তে সমস্যা সৃষ্টি করছে। বিশেষকরে শূন্য রেখার কাছাকাছি কাটাতারের বেড়া দেয়াকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি পুনরায় উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।সীমান্ত সমস্যার প্রভাব দুই দেশের কূটনীতিতেও বড় প্রভাব ফেলছে। ২৪ এর ছাত্র ও আমজনতার বিপ্লবের পর দুই দেশের সম্পর্কে সীমান্ত সমস্যা একটি জটিল বিষয় হয়ে দেখা দিচ্ছে। বিজিবি পূর্বের মতো আর পিঠ দেখিয়ে চলে আসছে না। ভারত যে এটা সহ্য করতে পারছে না সেটা তাদের কেন্দ্রীয় নেতাদের কথাতেই স্পষ্ট। পূর্বে হাসিনার শাসনামলে বিজিবি কে একপ্রকার মেরুদণ্ডহীন করে রেখেছিল। বিএসএফ এর অন্যায় কাজগুলোকে বিজিবি মেনে নিতে বাধ্য হতো। এতে ভারতীয় শাসকেরা হাসিনার উপড় সন্তুষ্ট থাকতেন। বর্তমান প্রেক্ষাপট ভিন্ন কথা বলছে। বিজিবি প্রতিটি অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করছে এবং পতাকা বৈঠক গুলিতে সফল হয়ে ফিরে আসছে।বাংলাদেশের সাধারণ জনতার উপড়ও ব্যাপক প্রভাব রাখছে সীমান্ত সমস্যা। পূর্বে যখনই ভারত সীমান্তে আগ্ৰাসন চালিয়েছে তখনই সাধারণ জনগণ তার প্রতিবাদ করেছে।সীমান্তে বিএসএফের অতিরিক্ত সহিংসতা বাংলাদেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা হুমকির সৃষ্টি করে বারবার।জনগণ ভারতকে ঘৃণার চোখে দেখে,এর একটা কারণ সীমান্তে ভারতের অন্যায় কাজগুলো।জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে হাসিনা ভারতকে অন্যায় সুবিধা দিয়ে আসছিল। অভিজ্ঞতা বলে,কোন শাসক দেশের জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গেলে তার পতন হবেই। হাসিনার ক্ষেত্রেও তা হয়েছে। পরবর্তীতে যে দল ক্ষমতায় আসবে,সেই দলকে জনগণের চাওয়া পাওয়া মাথায় রেখে চলতে হবে। অন্যায় ভাবে অন্য দেশকে সুবিধা দিলে সেই দেশ সরকার কে টিকিয়ে রাখতে পারবে না।   ভারত বাংলাদেশের অন্যতম বড় বাণিজ্যিক দেশ। সীমান্ত সমস্যা দুই দেশের বাণিজ্যেও প্রভাব ফেলে। সীমান্ত বন্ধ থাকলে পণ্য বোঝায় ট্রাক আটকে থাকে। এতে করে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য পচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।সেক্ষেত্রে দুই দেশের ব্যাবসায়ীদের বিপুল ক্ষতিসাধন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।মুদ্রা বিনিময় ব্যবসায়ীরাও ক্ষতির সম্মুখীন হয়। দেশের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের মূল্যের উপর প্রভাব পড়ে। যার রেশ টানতে হয় মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা।দুই দেশের মধ্যে যাত্রিবাহি ট্রেন গুলিও চলাচল করতে পারে না। এতে করে দুই দেশের যাত্রীরা সমস্যায় পড়ে। অনেকে চিকিৎসা ও ব্যবসার কাজে গিয়ে আটকে পড়ে। 

দুই দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য যেকোন ধরনের সংঘাত এড়িয়ে চলাই উচিত। 

Comments

    Please login to post comment. Login