শ্বাশুড়ি মাকে বললাম " বিয়ের দিনে হারিয়ে যাওয়া গহনাগুলো কে নিয়েছে,সেটা অনুমান করেছি "
শ্বাশুড়ি মা চোখমুখ কুঁচকে চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো " কাকে অনুমান করেছো? "
" এখনো পুরোপুরি সিওর না।আর কয়েকদিন দেখি,তারপর বলবো "
" আমাদের বাড়ির কাউকে সন্দেহ করেছো?কার চরিত্র এতো নীচু? "
কথাবার্তার এই পর্যায়ে স্বামী ফিরলো।সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে ক্লান্ত স্বরে বললো
" সুনন্দা,এক গ্লাস জল দাও তো "
শ্বাশুড়ির ঘর থেকে বেরিয়ে স্বামীর হাতে জলের গ্লাস দিলাম।তার মন বিষণ্ন।বললাম
" ক্লান্ত লাগছে খুব? "
" না।চিন্তা "
" কি নিয়ে? "
" লোনের টাকা দিয়ে সংসার সামলাতে হিমশিম খাচ্ছি "
" আমি বাবাকে বলে কিছু নিই? "
স্বামী চোখ সরু করে তাকালো,বললো " বাবাকে কি বলবে?তোমার জামাই বিয়েতে লোন নিয়ে গহনা কিনে দিয়েছে,এখন কিস্তি সামলাতে পারছে না,সাহায্য করো,বাবাকে এসব বলবে? "
" তুমি শুধু শুধু রেগে যাচ্ছো "
" আমি রাগছি না।যা করতে চাইছো সেটাই বললাম "
" ছেলে বিপদে পরলে বাবা কি সাহায্য করতে পারেনা? "
" গহনা তো হারিয়ে গেছে।যদি থাকতো তাহলে সাহায্য নিতে পারতাম।যেহেতু হারিয়ে গেছে,এখন হাত পাতার প্রশ্নই আসেনা "
" ইচ্ছে করে তো হারাইনি,আর হারিয়েছে তাতে কি?এখন চাইলে কি হবে? "
" ওসব বিয়েতে তোমায় উপহার দিয়েছি।এমন তো না নিজের সম্পদ করার জন্য ইনভেস্ট করেছিলাম "
" কি দরকার ছিলো লোন নিয়ে এতো টাকার গহনা গরিয়ে নেওয়ার? "
প্রশ্নটা করে নিজেই চুপ হয়ে গেলাম।কেনো দিয়েছে কারণটা আমার জানা।বিয়েতে দাদার অমত ছিলো।তিনি প্রায় স্বামীর মুখের উপরই বলেছিলো,বিয়ের পর ভালোবাসা থাকেনা।ওই ছেলে তোর সখ পুরণ করতে পারবে?তামাকে সোনা বলে চালিয়ে দিবে।
বড়দার এই কথাটা ওর মনে বিঁধে গেলো।বিয়ের আগের দিনও বারবার বারণ করেছিলাম দাদার কথায় ওসব না করতে।ওর একটাই কথা
" তোমার সখ পূরন করতে যা করতে হয় করবো।ওনারা তামার কথা বলেছে তাই না,তোমায় সোনায় মুড়িয়ে নিয়ে আসবো "
স্বামীকে বললাম " আচ্ছা হয়েছে এসব কথা এখন বাদ দাও তো।হাত মুখ ধোঁও,আমি চা করে দিচ্ছি "
রাতে ঘুমানোর সময় স্বামী বললো " নয়না কল দিয়েছিলো।কাল ওর সাধ "
নয়না ওর একমাত্র ছোট বোন।বললাম " মা বাবা যাবে না? "
" বাবার নাকি লোকজন বিরক্ত লাগে।মা যেতে চাচ্ছে না।তুমি আর আমি যাবো "
" আচ্ছা "
" সত্যি বলতে আমারও যেতে ইচ্ছে করছে না।তখন ফোনটা ধরাই উচিত হয়নি "
"একটাই বোন,এভাবে বলছো কেনো? "
" ইদানীং ওদের অপরিচিত লাগে।টাকা সবাইকে পরিবর্তন করে দেয়।হঠাৎ ওর বরের ব্যবসায় কি এমন লাভ হলো বলোতো,আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ অবস্থা "
এই গল্পের লেখক জয়ন্ত কুমার জয়।যারা লেখকের আইডি থেকে গল্প পড়তে চান তারা জয়ন্ত কুমার জয় লিখে সার্চ করলেই লেখকের আইডি পেয়ে যাবেন।জয়ন্ত কুমার জয় ছাড়া অন্য আইডি,পেজ থেকে গল্প পোস্ট করলে সেটা এড়িয়ে চলুন।
পরেরদিন গেলাম একমাত্র ননদের সাধে।হরেকরকম আয়োজন।ওর হাতে চকচকে আংটি।জিগ্যেস করলাম
" আংটি কবে বানিয়ে নিলে? ডিজাইনটা তো অনেক সুন্দর "
" তোমার ভাই গত সপ্তাহে বানিয়ে দিয়েছে।আমি নিবো না,জোর করে দিয়েছে৷কি বলে জানো?আমায় নাকি এতোদিনে কিছু উপহার দিতে পারেনি "
" অনেক সুন্দর হয়েছে "
সাধের শেষের দিক ওর স্বামী সোনার হার গলায় পরিয়ে দিলো৷আমি হতভম্ব!হারের দুই সাইডের ডিজাইনটা কেন জানি পরিচিত মনে হচ্ছে।
একসময় কৌশলে কাছে গিয়ে হারের প্রশংসা করতে গিয়ে ভালোভাবে লক্ষ্য করলাম।যা ভেবেছিলাম তাই,মাঝের অংশের ডিজাইনটা শুধু পরিবর্তন করা হয়েছে৷
বোকা মেয়েটাকে দেখে বড্ড হাসি পেলো।বুদ্ধি করে গহনার ডিজাইন যখন পাল্টালেই, দুই সাইডের ডিজাইনটাও নতুন করে নিতে,তাহলেই তো ধরা পরতে না।সিদ্ধান্ত নিলাম, বাড়ি ফিরে স্বামীকে সন্দেহের বিষয়টা বলবো।বেচারি,বড্ড তারাতাড়ি নিজের পাপ জাহির করে ফেললো।
আসার পথে স্বামী প্রাণবন্ত স্বরে বললো " বোনটাকে দেখে মনে ভালোলাগা কাজ করছে।কষ্টে বড় হয়েছে,এখন একটু সুখের মুখ দেখেছে "
মনে মনে বললাম " সুখের না,পাপের মুখ দেখেছে।শীঘ্রই এই মুখ থেঁতলেও যাবে "
চলবে?