
আজ আপনারা জানবেন ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত দ্য এ্যালকেমিস্ট বই সম্পর্কে। দ্য এ্যালকেমিস্ট বইয়ের মূল চরিত্র, সান্তিয়াগো পিরামিডে গুপ্তধন খুঁজতে যায়। সান্তিয়াগো মূলত একজন মেষপালক। সে তার ভেড়ার পাল নিয়ে জায়গায় জায়গায় ঘুরে বেড়ায়। এভাবেই একদিন সে ঘুরতে ঘুরতে সন্ধ্যা বেলা এক পরিত্যক্ত গির্জার কাছে এসে পৌঁছায়। গির্জাটার ছাদ বহুকাল আগেই ভেঙে পড়েছে। যেখানে প্রার্থনার সরঞ্জাম রাখা হতো সেখানে বেড়ে উঠেছে একটা প্রকাণ্ড সাইক্যামোর গাছ। সান্তিয়াগো এখানেই রাত কাটানোর সিদ্ধান্ত নেয়।গায়ের জ্যাকেটটা দিয়ে মেঝে পরিস্কার করে সদ্য সমাপ্ত বইটা মাথার নিচে দিয়ে শুয়ে পড়ে। সকাল হওয়ার আগেই তার ঘুম ভেঙে যায়। গত সপ্তাহে দেখা স্বপ্নটা আবার দেখেছে এবং এবারও স্বপ্ন শেষ হওয়ার আগেই ঘুম ভেঙে যায়। প্রতিদিনের মতো সেদিনও সে ঘুম থেকে ওঠার পর ছুরি দিয়ে খোঁচা মেরে ভেড়াগুলোকে জাগিয়ে তোলে। তারপর সে পরিত্যক্ত গির্জাটা থেকে বেরিয়ে আসে।
এরপর সান্তিয়াগো এক বেদুইন মহিলার কাছে সেই স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানতে যায়। বেদুইন মহিলা ওর কাছে পুরো স্বপ্নটা বিস্তারিত জানতে চান। সান্তিয়াগো তার স্বপ্নের কথা বেদুইন মহিলাকে খুলে বলে। স্বপ্নে সে দেখতে পায়, সান্তিয়াগো ভেড়ার পাল নিয়ে এক মাঠ দিয়ে যাচ্ছিল। এমন সময় একটা বাচ্চা ছেলে এসে ভেড়ার পালের সঙ্গে খেলতে শুরু করে। বাচ্চাটা ভেড়ার পালের সঙ্গে কিছুক্ষণ খেলার পর সান্তিয়াগোর হাত ধরে। তারপর চোখের পলকে সান্তিয়াগোকে মিশরে নিয়ে যায়। বাচ্চাটা সান্তিয়াগোকে বলে, ওখানে গুপ্তধন আছে।
বেদুইন মহিলাটিও সান্তিয়াগোকে বলেন, "তুমি সত্যিই পিরামিডে গুপ্তধন পাবে, তোমার যাওয়া উচিত।" কিন্তু, সান্তিয়াগোর বেদুইন মহিলার কথা বিশ্বাস হয় না। তাই, সে হতাশ হয়ে সেখান থেকে চলে আসে। এরপর একটা বেঞ্চে বসে সান্তিয়াগো ভাবতে থাকে যে সে আর কখনো স্বপ্নে বিশ্বাস করবে না। এমন সময় এক বৃদ্ধ লোক সান্তিয়াগোর পাশে এসে বসে। তিনি ছিলেন সালেমের রাজা।
বৃদ্ধ লোকটা সান্তিয়াগোকে বলেন, "তুমি যদি তোমার ভেড়ার পালের দশ ভাগের এক ভাগ আমাকে দাও, তাহলে আমি তোমাকে বলে দেব কিভাবে গুপ্তধন খুঁজে বের করতে হবে।" সান্তিয়াগো খুবই অবাক হয়ে যায়, কারণ সে তার দেখা স্বপ্ন বা গুপ্তধনের ব্যাপারে কিছুই বলেনি বৃদ্ধ লোকটিকে। তাহলে তিনি কীভাবে জানলেন? অনেক ভাবনা-চিন্তার পর সান্তিয়াগো তার ভেড়ার পালের দশ ভাগের এক ভাগ বৃদ্ধ লোকটিকে দিয়ে দেয়।
বৃদ্ধ লোকটি তাকে বলে দেন, কিভাবে গুপ্তধন খুঁজে পেতে হবে। সান্তিয়াগো এরপর তার সব ভেড়া বিক্রি করে দেয়, কারণ পিরামিডে যেতে তার অনেক টাকার প্রয়োজন। তারপরই শুরু হয় সান্তিয়াগোর গুপ্তধনের খোঁজে পিরামিড যাত্রা। এই যাত্রায় সান্তিয়াগো আফ্রিকায় যায়। সেখানে সে এক চরের খপ্পরে পরে। দীর্ঘদিন এক স্ফটিকের দোকানেও কাজ করে।
শেষ পর্যন্ত কী হয়? সান্তিয়াগো কি মরুভূমি পেরিয়ে পিরামিডে পৌঁছতে পারে? সে কি গুপ্তধন পায়? জানতে হলে পড়তে হবে বইটি।
বইটি সম্পর্কে এত কিছু বললাম, এবার লেখকের সাথেও একটু পরিচয় করিয়ে দিই। দ্য অ্যালকেমিস্ট বইয়ের লেখকের নাম হলো পাওলো কোয়েলহো। ১৯৪৭ সালে ব্রাজিলে তার জন্ম। ছোটবেলা থেকেই লেখক হতে চেয়েছিলেন পাওলো কোয়েলহো। কিন্তু, তার পরিবারের চোখে লেখালেখিটা তেমন একটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না।
১৯৮২ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম বই ‘হেল আর্কাইভস’। তবে, বইটি পাঠকমহলে তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি। কিন্তু ১৯৯৪ সালে দ্য এ্যালকেমিস্ট প্রকাশিত হওয়ার পর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।
দ্য এ্যালকেমিস্ট বইটিতে সান্তিয়াগো নামক এক ছেলের মাধ্যমে জীবনের নানা মুহূর্ত তুলে ধরেছেন পাওলো কোয়েলহো। বইটি ৮০টিরও বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বাংলা ভাষাতেও অনূদিত হয়েছে বইটি। পাঠক চাইলে বাংলাতেও পড়তে পারেন। সান্তিয়াগোর এই গুপ্তধন খোজার গল্প নিশ্চয়ই পাঠকের ভালো লাগবে।