Posts

গল্প

বাচার শেষ আশা

February 15, 2025

Md Eyamin

31
View

বাংলাদেশের চট্টগ্রাম থেকে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করা একটি জাহাজ। সেই জাহাজে কেউ ছিল ব্যবসায়ী, কেউ ছিল পর্যটক, আবার কেউ যাচ্ছিল কাজের উদ্দেশ্যে। জাহাজটি যাচ্ছিল নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে, সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। দুর্ঘটনা ঘটে মাঝপথে।

জাহাজ যখন নির্ধারিত পথ অতিক্রম করছিল, তখনই সমুদ্রে ঝড় উঠতে শুরু করে। সমুদ্রের ঢেউ ও ঝড়ো হাওয়া ক্রমেই তীব্র হতে থাকে। একপর্যায়ে প্রচণ্ড ঢেউ আর ঝড়ের কারণে জাহাজটি ডুবে যায়।

এই ঘটনায় সব যাত্রী ডুবে গেলেও দু'জন কোনোভাবে একটি ভাসমান টুকরো ধরে রেখে সমুদ্রের স্রোতে ভেসে যায়। তাদের মধ্যে একজনের নাম সৈকত ও অপরজনের নাম রেজা।

কয়েক ঘণ্টা পর তারা একটি নির্জন দ্বীপে পৌঁছায়। দ্বীপটি আকারে বেশ বড়, দ্বীপের সামনের অংশটা ফাঁকা, কিন্তু ভেতরের দিকটা ছিল গভীর জঙ্গল।

চার দিন কেটে গেল। দ্বীপের গাছপালা থেকে সংগ্রহ করা ফল ও সমুদ্র থেকে ধরা মাছ খেয়েই কোনোরকমে টিকে আছে তারা।

আজ পঞ্চম দিন। অন্যান্য দিনের চেয়ে আজ রোদ আরও তীব্র। এই সুন্দর পৃথিবী যেন আজ তাদের সামনে তার ভয়ানকতম রূপ দেখাচ্ছে।

রেজা জুতোর ফিতে বাঁধতে বাঁধতে বলল, "আমি দ্বীপের ভেতরে যাচ্ছি, দেখি কিছু পাওয়া যায় কি না।"

সৈকত কোনো জবাব দিল না। রেজা হাঁটতে হাঁটতে জঙ্গলের মধ্যে হারিয়ে গেল। সৈকত আগুন জ্বালানোর চেষ্টা করল, যাতে ধোঁয়া দেখে কেউ তাদের সাহায্য করতে আসে।

প্রায় এক ঘণ্টা হয়ে গেল। কিন্তু রেজা এখনো ফিরে এল না। রেজার ফিরতে এত দেরি হওয়া অস্বাভাবিক। তাই সৈকত একটু ভেতরে গিয়ে খোঁজ করার সিদ্ধান্ত নিল।

একটি আঁকাবাঁকা পথ ধরে সৈকত এগোতে লাগল। চারপাশে শুধু জঙ্গল আর পাথর।

কিছু দূর এগিয়ে সৈকত একটা অদ্ভুত দৃশ্য দেখল—রেজার জুতো মাটিতে পড়ে আছে, আশপাশে ছিটানো রক্তের দাগ!

সৈকতের বুক ধড়ফড় করে উঠল। "রেজা কি কোনো বড় বিপদে পড়েছে? কোনো বন্য প্রাণী তাকে আক্রমণ করল?"

অল্প দূরে দেখতে পেল টেনে নিয়ে যাওয়ার চিহ্ন। মন শক্ত করে সে সেই চিহ্ন অনুসরণ করে এগোতে লাগল।

একসময় সৈকত একটা গুহার সামনে এসে দাঁড়াল। টেনে নিয়ে যাওয়ার চিহ্নগুলো গুহার ভেতরে মিলিয়ে গেছে। সাহস করে সে গুহার ভেতরে প্রবেশ করল।

ভেতরে ঘুটঘুটে অন্ধকার, কিছুই ঠিকভাবে দেখা যাচ্ছে না। সরু পথ ধরে আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল সৈকত।

পথের শেষ মাথায় এক প্রশস্ত খোলা জায়গা। দেয়ালে কয়েকটি মশাল জ্বলছিল। সেখানে চার-পাঁচজন লোক দাঁড়িয়ে ছিল, অদ্ভুত ভাষায় কথা বলছিল তারা।

হঠাৎ সৈকত দেখল—রেজা মাটিতে অচেতন হয়ে পড়ে আছে!

তার চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করল, কিন্তু সে নিজেকে সংযত করল।

লোকগুলো কিছুক্ষণ কথা বলে কোথাও চলে গেল, শুধু একজন রেজার পাশে পাহারায় রইল। সৈকত বুঝতে পারল—এটাই তার সুযোগ!

সাবধানে একটা পাথর তুলে সৈকত পাহারাদারের মাথায় আঘাত করল। লোকটি সঙ্গে সঙ্গে অচেতন হয়ে পড়ে গেল।

সৈকত দ্রুত রেজার দিকে ছুটে গেল। সে নাকের কাছে হাত রেখে দেখল, রেজা এখনও শ্বাস নিচ্ছে।

রেজাকে কাঁধে তুলে সৈকত গুহা থেকে বেরিয়ে এল। বড় বড় পাথর পেরিয়ে এক দৌড়ে আগুনের কাছে ফিরে এল।

আগুন তখনও জ্বলছিল। রেজার মুখে কিছু পানি ঢালতেই সে ধীরে ধীরে চোখ খুলল।

সৈকত জিজ্ঞেস করল, "তুমি ওই গুহার ভেতরে গেলে কেন? আর ওরা কারা?"

রেজা কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলল, "আমি পথ দিয়ে হাঁটছিলাম, হঠাৎ কেউ পেছন থেকে আঘাত করে আমাকে অচেতন করে ফেলে। তারপর কিছুই মনে নেই!"

হঠাৎ দূরে একটা জাহাজের হুইসেলের শব্দ শোনা গেল।

সৈকতের আগুনের ধোঁয়া দেখে হয়তো সাহায্যের জন্য জাহাজটি আসছে!

পাঁচদিন এই দ্বীপে কাটিয়ে তারা অবশেষে বাড়ি ফিরবে। এই পাঁচদিন হয়তো তাদের জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর অভিজ্ঞতার মধ্যে অন্যতম!

Comments

    Please login to post comment. Login